শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

জরিপ/মেয়র এরিক অ্যাডামসের পদত্যাগ চান নিউইয়র্ক সিটির ৬৯ শতাংশ নাগরিক

রবিবার, অক্টোবর ৬, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

নিউইয়র্ক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসের জনপ্রিয়তা মারাত্মকভাবে কমেছে। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, নিউইয়র্ক সিটির ৬৯ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, অ্যাডামসের দ্রুত পদত্যাগ করা উচিত। জরিপে অংশ নেওয়া ডেমোক্র্যাটদের ৭১ শতাংশই একই মত প্রকাশ করেছেন; যা অ্যাডামসের জন্য বড় ধরনের রাজনৈতিক ধাক্কা। এ ছাড়া ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অ্যাডামসের উচিত আরেক বার মেয়র নির্বাচনে না দাড়ানো। অ্যাডামস প্রশাসনের ওপর জনমতের এ বিপুল নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অ্যাডামসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আইনি সংগ্রাম: এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ রয়েছে; যা তার জনপ্রিয়তায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতি, তারের মাধ্যমে প্রতারণা ও বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে রাজনৈতিক অনুদান নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া, তাকে সাক্ষী প্রভাবিত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। প্রসিকিউটরদের মতে, অ্যাডামস একজন সাক্ষীকে এফবিআইয়ের সামনে মিথ্যা বলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যা তার বিরুদ্ধে সাক্ষী প্রভাবিত করার গুরুতর অভিযোগ প্রমাণ করে। অভিযোগের ভিত্তিতে আরো তদন্ত চলছে ও তার বিরুদ্ধে নতুন কিছু অভিযোগ আনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অ্যাডামসের পরবর্তী আদালতে হাজিরা আগামী ১ নভেম্বর নির্ধারিত রয়েছে ও ডিসেম্বরে আরো একটি শুনানি হবে। যদিও তার আইনজীবীরা দ্রুত বিচার চেয়েছেন। তবে, মামলা আগামী ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আদালতে পরবর্তী শুনানিগুলোর ওপর নির্ভর করে অ্যাডামসের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আরো দুর্বল হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মেয়রকে সরাতে গভর্নর হোকুলের ওপর চাপ বাড়ছে: এ দিকে, নিউইয়র্ক সিটি বড় অংশের নাগরিক মেয়র এরিক অ্যাডামসের পদত্যাগ চাইলেও, জরিপে দেখা গেছে যে ৬৩ শতাংশ মানুষ চান রাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হোকুল অ্যাডামসকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করুন। অ্যাডামস যদি পদত্যাগ না করেন, তবে গভর্নর হোকুলের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তাকে অপসারণের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এরমধ্যেই গভর্নর হোকুল মেয়রের প্রশাসনে পরিবর্তনের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন। হোকুল বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, সিটি হলে পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। মেয়র তার প্রশাসনের দায়িত্বশীল অবস্থান নিশ্চিত করবেন বলে আমরা আশা করি।’

সিটি হলে অস্থিরতা: প্রধান কর্মকর্তাদের পদত্যাগ ও তদন্ত: মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগের মধ্যে সিটি হলে অস্থিরতা বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি, নিউইয়র্ক সিটির স্কুল চ্যান্সেলর ডেভিড ব্যাঙ্কস তার পদ থেকে আগেভাগে সরে দাঁড়িয়েছেন। ব্যাঙ্কস বলেছিলেন, ‘তিনি ডিসেম্বর পর্যন্ত থেকে যেতে ইচ্ছুক ছিলেন। তবে, মেয়রের সিদ্ধান্তে তার পদত্যাগের সময় দ্রুত এগিয়ে আনা হয়েছে।’ ব্যাঙ্কসের পদত্যাগকে অনেকেই সিটি হলে চলমান অস্থিরতার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন। এ ছাড়া মেয়রের ঘনিষ্ঠ দুই শীর্ষ কর্মকর্তা ডেপুটি মেয়র শীনা রাইট (যিনি ব্যাঙ্কসের স্ত্রী) ও ডেপুটি মেয়র ফর পাবলিক সেফটি ফিল ব্যাঙ্কস- তদন্তের মুখে রয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে ও তাদের ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ ঘটনা সিটি হলে আরো চাপ বাড়িয়েছে ও প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে।

জনমতে প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও বিফলে যাচ্ছে: এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কমিউনিটির সমর্থন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি অ্যান্টিক ব্যাপটিস্ট চার্চে উপস্থিত হয়ে ধর্মীয় ও স্থানীয় নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়াও ইহুদি সম্প্রদায়ের রোস হাসানাহ পালনের সময় তিনি ইস্ট সাইড সিনাগগে অংশ নেন। কিছু মানুষ তাকে সমর্থন জানালেও তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো তার জনপ্রিয়তা ও প্রশাসনের স্থায়িত্বের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।

অ্যাডামসের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘অ্যাডামসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো তার প্রশাসনের ভবিষ্যৎকে বড় ধরনের সংকটে ফেলেছে। জনমতের বিপুল বিরোধিতা, তদন্তের চাপ ও প্রশাসনের ভেতরে অস্থিরতার কারণে অ্যাডামসের জন্য আগামী দিনগুলো চ্যালেঞ্জপূর্ণ হতে পারে। তার আগামী আদালত শুনানিগুলো তার রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে পারে।’ নিউইয়র্ক সিটির জনগণ ও রাজনৈতিক মহলে অ্যাডামসের অবস্থান নিয়ে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তা তার প্রশাসনের ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

নিজেকে নির্দোষ দাবি অ্যাডামসের: অভিযোগ ও জনমতের চাপের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রকাশ্যে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। সম্প্রতি বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং এ ধরনের অভিযোগগুলো মিথ্যা। আমার লক্ষ্য সব সময় নিউইয়র্ক সিটির মানুষের সেবা করা এবং এ শহরকে আরো উন্নত করা। আমি আদালতে আমার নির্দোষতা প্রমাণ করব ও জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনব। এ শহরের উন্নয়নের জন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি ও আমার কাজ চালিয়ে যাব।’ তিনি আরা বলেন, ‘আমি এ সিটিরি জন্য দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে আসছি এবং কোন অন্যায় করিনি। আমি জানি, আমার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সত্যি নয়। আমি নিউইয়র্কবাসীর কাছে আস্থাশীল থাকার আহ্বান জানাচ্ছি এবং আমি নিশ্চিত, আদালতেও আমার পক্ষেই রায় আসবে।’