রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪

শিরোনাম

দলের নেতা-কর্মীদেরকে সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ দেয়ার নির্দেশনা আওয়ামী লীগের

বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: সেনাবাহিনী নেতা-কর্মীদের ওপর হামলাকারী সব অপরাধী লুটেরা সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনবে বলে প্রত্যাশা করেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করে ক্ষতিগ্রস্ত সকলকে তাদের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে নিকটস্থ সেনাক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে দলটি।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ছয়টার দিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে করা পোস্টে এ নির্দেশনা দেয়।

পোস্টটিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা পুরো দেশ থেকে সংবাদ পেয়েছি, বেশিরভাগ থানাতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করতে দেয়া হয়নি।’

এতে আরো বলা হয়, ‘যেহেতু সেনাবাহিনীকে মেজিস্ট্রেসি দেওয়া হয়েছে, তাই এ অপরাধীদের থামাতে এখন সেনাবাহিনীর কাছেই অভিযোগ দেয়ার বিকল্প নেই।’

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে পুরো দেশে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি (বিচারিক) ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। আগামী ৬০ দিন (দুই মাস) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসাররা এ বিচারিক ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারবেন। এর ফলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অপরাধীকে সাজা দিতে পারবেন তারা।

এ প্রসঙ্গে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের এ আদেশ দেয়া হয়েছে ও সে অনুযায়ী কাজ করব।’

তিনি সকলের সহযোগিতাও চেয়েছেন।

জনপ্রশাসনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘এ সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হয়েছে। আগামী দুই মাস এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী এ ক্ষমতা অর্পণ করা হল।’

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘ফৌজদারি দণ্ডবিধি ১৮৯৮’-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ এবং ১৪২ ধারা অনুযায়ী সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।’

আইনের ৬৪ ধারায় বলা আছে, ‘কোন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে যদি অপরাধ সংঘটিত হয়, তাহলে তিনি নিজেই গ্রেফতার করতে পারবেন অথবা অপরাধীদের গ্রেফতারের আদেশ দিতে পারবেন। অপরাধীকে হেফাজতে রাখতে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিতে পারবেন।’

৬৫ ধারা অনুযায়ী, যে ম্যাজিস্ট্রেট গ্রেফতার বা গ্রেফতারের আদেশ দিতে পারবেন, তিনি একই সময়ে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করতে পারবেন।

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮’-এর ১০০ ধারা অনুসারে, বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তির তল্লাশির জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দিতে পারবেন। ওই ম্যাজিস্ট্রেটের এম বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, কোন ব্যক্তিকে এমন অবস্থায় আটক রাখা হয়েছে, যে আটক রাখা অপরাধের শামিল, তখন তিনি তল্লাশি পরোয়ানা দিতে পারবেন এবং যার প্রতি পরোয়ানাটি নির্দেশিত, তিনি পরোয়ানা অনুসারে ওই আটক ব্যক্তির জন্য তল্লাশি করতে পারবেন এবং সেই ব্যক্তিকে পাওয়া গেলে তাকে অবিলম্বে কোন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করতে হবে এবং অবস্থানুসারে যেমন মনে করেন, তেমন উপযুক্ত আদেশ দেবেন।

ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮’-এর ১০৭ ধারা অনুসারে, যখন কোন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয় যে, কোন ব্যক্তি সম্ভবত শান্তি ভঙ্গ করতে পারে বা সর্বসাধারণের প্রশান্তি বিনষ্ট করতে পারে অথবা এমন কোন অন্যায় কাজ করতে পারে, যার ফলে সম্ভবত শান্তি ভঙ্গ হতে পারে বা সর্বসাধারণের প্রশান্তি বিঘ্ন হতে পারে, তখন ওই ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন যে, ব্যবস্থা গ্রহণের পর্যাপ্ত পদ্ধতিতে ওই ব্যক্তিকে কেন এক বছরের অনধিককাল শান্তি রক্ষার জন্য জামিনদারসহ বা ব্যতীত একটি মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দেয়া হবে না, তার কারণ দর্শাতে বলবেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ পুরো দেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে গেল ১৯ জুলাই রাতে পুরো দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করেছিল তৎকালীন সরকার। এরপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গেল ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এখনো পুরো দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।