ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র: সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি- এমন সুর তুলে দুই মাস আগে কম্বোডিয়ার কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। স্থগিত করা হয় কম্বোডিয়াকে দেয়া সহায়তা কর্মসূচি। এখন ফের কম্বোডিয়ার সেই একই সরকার যুক্তরাষ্ট্রের চোখে হয়ে গেছে ‘শুদ্ধ’। কম্বোডিয়াকে অর্থ সহায়তাও দিচ্ছে তারা।
কম্বোডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ ও কিছু দিন যেতে না যেতেই তা ফের প্রত্যাহার করে নেয়ার বিষয়ে বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে থতমত অবস্থায় পড়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি যেটি তাদের পক্ষে যায় সেটিই শুদ্ধ? মানবতা ও গণতন্ত্রের কোন সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করছে দেশটি?
গেল ২৩ জুলাইয়ের নির্বাচনে কম্বোডিয়ার ক্ষমতাসীন দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) নিরঙ্কুশ জয় অর্জন করে। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সেখানকার কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটি তখন দাবি করে, কম্বোডিয়ায় গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির অবনতির কারণে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যারা গণতন্ত্রের মর্যাদা নষ্ট করার মত পরিস্থিতির সাথে জড়িত, তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বিবৃতি দিয়ে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘কম্বোডিয়ার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সিপিপি দলের কোন শক্ত বিরোধী দল নির্বাচনে ছিল না।’
বিরোধীদল বিহীন নির্বাচনের অজুহাত তুলে গেল জুলাইয়ে কম্বোডিয়ার কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। স্থগিত করা হয় কিছু সহায়তা কর্মসূচি। কারণ, হিসেবে সেময় দেশটি জানায়, কম্বোডিয়ার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী সামদেচ মোহা বোরভোর থিপাদেই হুন মানেতের দল সিপিপির বিরুদ্ধে মাঠে শক্তিশালী কোন বিরোধী দল ছিল না।
হুন মানেত কম্বোডিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক শাসক হুন সেনের ছেলে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। অধিবেশনের সাইডলাইনে তার সাথে বৈঠক হয় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যাল্ডের। এরপরই আগের সিদ্ধান্ত থেকে সেরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। কম্বোডিয়াকে ১৮ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেয় দেশটি। ইউএসএইডের মাধ্যমে এ সহায়তে দেয়া হবে। বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করে কম্বোডিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয়।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টর নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় ম্যাথিউ মিলারের কাছে। উত্তরে মিলার বলেন, ‘তিনি খোঁজ নিয়ে জানাবেন।’
অথচ এই ম্যাথিউ মিলারই কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও অর্থ সহায়তা বন্ধের বিষয়টি বিবৃতি দিয়ে পুরো বিশ্বকে জানিয়েছিলেন।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, জুলাইয়ে যে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ মনে হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের, দুই মাস যেতে না যেতেই কোন জাদুমন্ত্রে সেটি তাদের কাছে ‘গ্রহণযোগ্য’ হয়ে গেল? তবে, কি যা তাদের মনমত সেটিই শুদ্ধ, আর মর্জি মত না হলে সেখানেই জুড়ে দেবে অবৈধ কিংবা পক্ষপাতের তকমা?
বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরেও চলছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার খেলা। যে কোন দেশের নাগরিকদের ভিসা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইনটি থ্রি সি নামে পরিচিত। গত ২৪ মে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর জানায়, বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে কেউ বাঁধা সৃষ্টি করলে তাকে পড়তে হবে ভিসা নীতির আওতায়। তালিকায় রাখার কথা বলা হয়, সরকারী দল ও বিরোধীদলের রাজনৈতিক নেতা, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। এর চার মাসের মাথায় গেল ২২ সেপ্টেম্বর থেকে সেটি কার্যকরের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এর দুই দিনের মাথায় গেল ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘গণমাধ্যম ও এর কর্মীরাও পড়তে পারেন ভিসা নীতির আওতায়।’
পর দিনই ফের অন্য কথা বলেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তিনি জানান, গণমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা নেই।
পৃ্থিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র হরণের জন্য ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি পুঁজি করে সাম্প্রতিক গণতন্ত্রের সবক দেয়ার চেষ্টাকে পর্যবেক্ষকদের অনেকেই তুলনা করছেন রূপকথার শেয়ালের রুটি ভাগের সাথে।