শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

শিরোনাম

‘জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ’ এর অবদানে অনন্য নাম চট্টগ্রামের নিক বড়ুয়া

শুক্রবার, মে ১২, ২০২৩

প্রিন্ট করুন
নিক বড়ুয়া

মোহাম্মদ ওয়াসিম: ‘জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ’ এর অবদানে অনন্য এক নাম ড. নিক বড়ুয়া। তিনি ১৯৮০ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রাম সিটির সার্সন রোড়স্থ আসকার দিঘির পাড় এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন। তার পিতা শিশুসাহিত্যিক‌ ও কথাশিল্পী দীপক বড়ুয়া; যিনি চট্টগ্রামের প্রবীণ কীর্তিমান শিশুসাহিত্যিক‌ ও কথাশিল্পী নামে বেশ পরিচিত। মাতা চন্দা বড়ুয়া, যিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত। দুই ভাইয়ের মধ্যে নিক বড়ুয়া বড়, ছোট ভাই প্রিতম বড়ুয়া আসাদগঞ্জে আড়তদার ব‍্যবসায়ে জড়িত। অল্প বয়সে নিক বড়ুয়া উচ্চ শিক্ষার জন্য সুদূর জাপানে পাড়ি জমাযন। জাপান থেকে তার বিভিন্ন দেশে বসবাস করার সুযোগ হয়েছে। বর্তমানে নিক বড়ুয়া সপরিবারে জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তার জীবনসঙ্গী জাপানি আসুকা বড়ুয়া ও একমাত্র সন্তান লিওন- এ নিয়ে তার ছোট্ট পরিবার।

নিক বড়ুয়া জাপানে ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে বিএসসি ইন পিজিক্স, ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট টেকনোলজি থেকে জ‍্যোতি পদার্থবিদ্যায় এমএসসি এবং হার্টফোর্ডশায়ার ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকল্প ব‍্যবস্হাপনায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাজ্যে ২০২২ সালের সিইও পুরস্কার (জাপান) পেয়েছেন। সম্প্রতি নিক বড়ুয়া দ‍্যা ইনক ম‍্যাগাজিন থেকে ‘এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী লিডার ২০২৩’ নির্বাচিত হয়েছেন। দ‍্যা ইনক ম‍্যাগাজিন একটি আমেরিকান বিজনেস ম‍্যাগাজিন ।

নিক বড়ুয়া হলেন একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত উদ‍্যোক্তা ,ব‍্যবসায়িক নির্বাহী ও কারিগরি শিল্পে কাজ করার প্রমাণিত ইতিহাসসহ পদার্থ বিজ্ঞানী। তিনি জাপানের বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম, টেলি মেডিসিন ফার্ম এবং একাডেমিক শিক্ষাগত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী পদে দায়িত্ব পালন করছেন। নিক বড়ুয়া বর্তমানে সুইফট শি ইনকের সিওও। সুইফট ইন্জিনিয়ারিং ইনক এবং কোবে ইনস্টিটিউট অফ কম্পিউটিং- একটি জাপানি যৌথ উদ্যোগ কোম্পানি; যা সম্পূর্ণ পরিষেবা পরিচালনার জন্য পরামর্শ প্রশিক্ষণ, ডেটা বিশ্লেষণ এবং আইটি পরিষেবা প্রদানকারী একটি স্বায়ত্তশাসিত রোবেটিক মহাকাশ কোম্পানি।

নিক এছাড়াও জাপানে টি-আইসিইউ কো লিমিটেডের নির্বাহী বোর্ড সদস্য। টি-আইসিইউ কো লিমিটেড একটি নিবিড় পরিচর্যা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি বিশেষ দল নিয়ে জাপানি স্টাট-আপ; যেটি দূর থেকে ডাক্তারের পরামর্শ সহায়তা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের জন্য।

নিক বড়ুয়া শিগা ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সায়েন্স জাপান, কোবে গাকুইন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) এবং মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (এমসিএমসি) মত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিক বড়ুয়া এএন ইনক জাপানের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। এন ইনক একটি বিনিয়োগ পরামর্শকারী সংস্থা; যা ব‍্যবসায় বাণিজ্য, সরকার অলাভজনক, বেসরকারি ও প্রকৌশল সংস্থাগুলিকে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা সেবা দিয়ে থাকে।

‘জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ’ এর সেতু বন্ধনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নিক বড়ুয়ার হাত ধরে জাপানের নামকরা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কানবে গ্রুপ লিমিটেড ২০১২-তে বাংলাদেশের প্রবেশ করেছে ব‍্যবসায়িক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এবং সফলভাবে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয় ব‍্যবসায়িক পরিমন্ডলে।

এছাড়া, ২০১২ হতে ২০১৪ এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি কাজ নিক বড়ুয়ার হাত ধরে জাপান-বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল- চট্টগ্রাম বন্দর ও জাপান কোবে বন্দরের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা। তখন চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন অ‍্যাডমিরাল মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদ। নিক বড়ুয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বন্দরের এক দল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে জাপান কোবে বন্দর পরিদর্শন এ যান এবং এর মাধ্যমে জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপের সেতু বন্ধন আরো দৃঢ় হয়। পরবর্তী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহমেদ ২০১৫ সালে জানুয়ারি মাসে নৌ বাহিনীর প্রধান হিসেবে যোগ দেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) সাবেক অধ্যক্ষ ও ডীন প্রফেসর ডাক্তার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের দায়িত্ব পালনকালে নিক বড়ুয়া জাপানের বিখ্যাত কয়েকটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তিবদ্ধ করে চমেক থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের ব্যবস্থা করেছেন।

ইতিমধ্যে জাপানের নামকরা টেলি মেডিসিন কোম্পানি টি-আইসিইউ কো লিমিটেড জাপান, নিক বড়ুয়ার হাত ধরে জাইকা ও জেট্রো প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে। নিক বড়ুয়া ২০১৮ সাল, ২০১৯ সাল, ২০২২ ও ২০২৩ সালে চার বার টি-আইসিইউ কো লিমিটেড জাপানের সিইও ডাক্তার মোটোয়ুকি নাকানিশিকে বাংলাদেশে এনেছিলেন। এ টেলি মেডিসিন কোম্পানির সাথে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতির সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে নিক বড়ুয়া। এছাড়াও, বাংলাদেশে জাইকার প্রতিনিধি, জেট্রোর প্রতিনিধি, জাপানের বাংলাদেশ রাষ্ট্র দূতাবাসের সাথে ও দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে নিক বড়ুয়া।

নিক বড়ুয়ার ইচ্ছা টেলি মেডিসিন কোম্পানি টি-আইসিইউ কো লিমিটেড জাপানের মাধ্যমে কোন বাংলাদেশী ক্লিনিকে যোগ দেয়ার বা বাংলাদেশে একটি জাপানি স্ট‍্যান্ডান্র্ড হাসপাতাল তৈরি করার পরিকল্পনা। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে দুই দেশের যোগসূত্র স্থাপন করে দেয় নিক বড়ুয়া।

সম্প্রতি জেট্রোর অর্থায়নে চট্টগ্রাম মেরিন সিটি কলেজ ও হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে পরিক্ষামুলকভাবে টি-আইসিইউ কো লিমিটেড জাপান তাদের টেলি প্রজেক্ট শুরু করেছে। পরীক্ষামুলকভাবে সফল ও হয়েছে। ভবিষ্যতে এ দুই দেশের মধ্যে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন নিক বড়ুয়া।

নিক বড়ুয়া বলেন, ‘যারা সূর্যালোকের মত নিজেকে অনুভব করেন, তাদের কাছাকাছি থাকুন। নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।’

নিক বড়ুয়া সব সময়ই তাগিদ দেন উৎসাহী হতে, ব‍্যবসায়িক পরিকল্পনা করতে ও পেশাদারিত্বের মনোভাব রাখতে।

চট্টগ্রামের প্রচার বিমুখ একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক ও দায়িত্ববান মেধাবী তরুণ প্রজন্মের আইডল নিক বড়ুয়ার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও সুন্দর দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করছি।

লেখক: বংশীবাদক ও সংস্কৃতিকর্মী, চট্টগ্রাম।