শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বহুল প্রতীক্ষিত কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন রোববার

শুক্রবার, অক্টোবর ২৭, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

চট্টগ্রাম: কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী টানেল (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল) রোববার (২৮ অক্টোবর) উদ্বোধন করা হবে। চট্টগ্রাম সিটির পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে একটি ও টানেল পার হয়ে সকাল ১১টায় আনোয়ারা উপজেলার নদীর দক্ষিণ তীরে আরেকটি ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা।

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলার মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রায় দশ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটি ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টানেলটি সোমবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ছয়টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।

এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী দিনের খাম ও প্রথম পানির নিচের সড়ক টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি বিশেষ সীলমোহরও প্রকাশ করবেন।

শেখ হাসিনা রোববার (২৮ অক্টোবর) আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) মাঠে জনসভায় ভাষণ দেবেন। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করায় আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করছে।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বহু প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনের জন্য চট্টগ্রামের পাশাপাশি পুরো দেশ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বলে সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।’

মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সমাবেশের মঞ্চে থাকবেন। অনুষ্ঠানস্থলে নৌকার আদলে একটি বড় মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মোতাহেরুল ইসলাম বলেন, ‘সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কারণ, অনুষ্ঠানস্থলে স্যানিটেশন ও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে এবং নারীদের নির্বিঘ্নে অংশগ্রহণের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে।’

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রায় দশ লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে আমাদের জনসভা বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয়, গোটা জাতির জন্য গর্বের বিষয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য বিশেষ করে বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দর নগরীর বাসিন্দাদের একটি ‘স্বপ্ন সত্যে পরিণত’ হল। বহুল প্রত্যাশিত মাল্টিলেন আন্ডারওয়াটার এক্সপ্রেসওয়ে টানেলটি দক্ষিণ এশিয়ার এ ধরনের প্রথম টানেল এবং এই অঞ্চলের একটি প্রধান নদী কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ঢাকায় প্রেস ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রতিদিন ১৭ হাজার ২৬০টি যানবাহন টানেলটি ব্যবহার করতে পারবে; যা বছরে প্রায় সাত দশমিক ছয় মিলিয়ন যানবাহনের সমান।’

তিনি বলেন, ‘টানেলটি দেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.১৬৬ শতাংশ বাড়াতে সাহায্য করবে। টানেলটি চট্টগ্রাম শহর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরের দূরত্বও কমিয়ে দেবে। কারণ, এটি অর্থনীতিকে আরো প্রাণবন্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘টানেলটি বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, এটি এই অঞ্চলে নদীর তলদেশে প্রথম সড়ক সুড়ঙ্গ। এটি চট্টগ্রাামকে চীনের সাংহাই শহরের মত ‘দুটি শহরকে একটি শহরে’ পরিণত করবে। কারণ, এটি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে এবং শিল্পায়ন, পর্যটন ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ও সড়ক যোগাযোগ বিকাশে অপার সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করে শহরের পরিধিকে পুরো অঞ্চলে প্রসারিত করবে।’

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ পানির নিচের সড়ক সুড়ঙ্গের যুগে ঢুকতে যাচ্ছে; যা অবশ্যই পুরো জাতির জন্য গর্বের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে ব্যাপক সুবিধা দেবে। টানেলটি এই অঞ্চলে শিল্পায়নকে বাড়িয়ে তুলবে। কারণ, চট্টগ্রাম-কেইপিজেডের আনোয়ারায় দুটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং হালিশহরে চট্টগ্রাম ইপিজেড ও আনোয়ারাতে চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (সিইআইজেড) এই টানেলের জন্য অত্যন্ত সুবিধাপ্রাপ্ত হবে।’

আলম আরো বলেন, ‘এটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে সংযুক্ত করবে। কক্সবাজারে চলমান এবং পরিকল্পিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি হাবকেও সুবিধা দেবে, যা এরমধ্যেই দেশের একটি পর্যটন কেন্দ্র।’

এভাবে পদ্মা সেতুর মত এই টানেল দেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে জানান এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি।

তিনি বলেন, ‘টানেল ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও কর্ণফুলী নদীর তীরে পরিকল্পিত শিল্পায়নকে স্মার্ট সিটিতে পরিণত করার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান করা গেলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। পাশাপাশি, এটি মিজোরাম ও মণিপুরসহ ভারতের ‘সেভেন সিস্টারস’ এর সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়াতে এবং এই অঞ্চলে ব্যবসায়-বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটনের প্রসার ঘটাতে পারে।’

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, পুরো রুটের দৈর্ঘ্য হল নয় দশমিক ৩৯ কিলোমিটার (৫.৮৩ মাইল), টানেলটি তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার (২.০৬ মাইল) দৈর্ঘ্য তৈরি করে এবং এর ব্যাস দশ দশমিক ৮০ মিটার (৩৫.৪ ফুট)। এটি ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এবং এর প্রায় অর্ধেক চীনের এক্সিম ব্যাংক অর্থায়ন করেছে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক নেটওয়ার্ক উন্নত হবে। চীনের একটি কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এটি নির্মাণ করেছে।

শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৭ এর ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা টানেল বোরিং ফেজও উদ্বোধন করেন। মাল্টিলেন টানেল রুটটি এক দিকে নেভি কলেজ এবং অন্য দিকে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) ও কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির (কাফকো) কাছাকাছি নদীর মধ্য দিয়ে গেছে। এতে কর্ণফুলী নদীর ওপর দুটি সেতুর যানজটও কমবে।

চট্টগ্রাম জেলার প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান বলেন, ‘টানেলটি চট্টগ্রামকে দুটি শহর থেকে একটি শহরে পরিণত করে অর্থনীতি এবং আঞ্চলিক ব্যবসায়-বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করবে।’

টানেল উদ্বোধনের অনুষ্ঠানস্থলে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।