শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

শিরোনাম

যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত

শনিবার, এপ্রিল ২২, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: যথাযোগ্য মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে শনিবার (২২ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকাসহ পুরো দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়েছে। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে পালন করেছেন তাদের অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব।আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ঢাকাসহ দেশের ধর্মপ্রাণ লাখো-কোটি মানুষ শনিবার সকালে ভারী বর্ষণকে উপেক্ষা করে ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে সামিয়ানার নিচে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।

সকাল সাড়ে আটটায় ঢাকায় প্রধান ঈদ জামায়াত হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সাংসদ, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষ উৎসব আমেজে সেখানে নামাজ আদায় করেন।

নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি উপস্থিত সবার সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামায়াতের ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। নামাজ শেষে পুরো মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জাতীয় ঈদগাহের এ জামায়াতের আয়োজন করে। মো. আবদুল হামিদ ঈদগাহে পৌঁছলে শেখ ফজলে নূর তাপস তাকে স্বাগত জানান। এ প্রধান জামায়াতে মহিলা ও বিদেশী কূটনীতিকদের নামাজ আদায়ের বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। মুসুল্লিদের জন্য ওযু, খাবার পানি ও মোবাইল টয়লেটেরও ব্যবস্থা ছিল। জাতীয় ঈদগাহে সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠানে নেয়া হয় তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদগাহে সব প্রবেশ পথ এবং ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নামাজের স্থানসহ ঈদগাহ মাঠের পুরো প্যান্ডেলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।

মুসল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশের আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশীর পর আর্চওয়ে দিয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে হয়। প্রধান এ জামায়াতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকে র‌্যাব এবং পুলিশ সদস্যরা ঈদগাহ ময়দানে সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন।

রাজধানীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে। এখানে এবারো পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে আটটায় ঈদুল ফিতরের জামায়াতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সাংসদ ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিগণ জামায়াতে অংশ নেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামি’আয় ঈদের দুটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে সাড়ে আটটায় ও মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল আটটায় পৃথক দুটি ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, ঢাকার মীরবাগ জামে মসজিদে সকাল আটটায় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। পল্লবীর বায়তুল আমান জামে মসজিদে দুটি জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। মিরপুর-১২ নম্বরে হারুন মোল্লা ঈদগাহ্ মাঠে ঈদের প্রধান জামায়াত অনুষ্টিত হয়।

চট্টগ্রামে ঈদের প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় দামপাড়া জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে।

প্রতি বছরের মত এবারো কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সকাল দশটায়। জামায়াতে ইমামতি করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। জামায়াতের পর বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এটি ছিল ঈদুল ফিতরের ১৯৬তম ঈদ জামায়াত।

এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রখর রোদ আর তাপপ্রবাহেও ময়দানে মুসল্লিদের ঢল নামে। এবারো একসাথে ছয় লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে আয়োজকরা জানান। সকাল নয়টায় শুরু হওয়া এ জামায়াতে ইমামতি করেন মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি ও শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে মো. আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ঈদ উপলক্ষে বুধবার থেকে রোববার পর্যন্ত পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

শহরের লাখ লাখ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে ইতিমধ্যে রাজধানী ছেড়ে গেছেন। এ দিনটিতে উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও, সিটির গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোম্স, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।

ঈদ উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপনের লক্ষে জাতীয় পর্যায়ের সাথে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদ উদযাপন করে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।