ঢাকা: পুলিশের হামলার পূর্ব পর্যন্ত ঢাকার মাতুয়াইলে গেল ২৯ জুলাই আয়োজিত বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল বলে জানতে পেরেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি ওই কর্মসূচিতে প্রতিবাদকারী ও বিরোধীদলের নেতাদের ওপর সহিংস আক্রমণের খবরের সত্যতা যাচাই করেছে।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। ওই কর্মসূচির ৫৬টি ছবি ও ১৮টি ভিডিও পর্যালোচনা এবং সাংবাদিকসহ নয়জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নিয়ে লন্ডনভিত্তিক সংস্থাটি ওই প্রতিবেদন তৈরি করে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে প্রতিবাদকারীদের ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেছে ও জানতে পেরেছে, পুলিশের হামলার পূর্বপর্যন্ত প্রতিবাদ কর্মসূচী ব্যাপকভাবে শান্তিপূর্ণই ছিল।’
বিএনপি ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গেল ২৯ জুলাই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তাদের সে প্রতিবাদ পুলিশের সাথে সহিংস সংঘাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিং বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের যাচাই করা ভিডিও ও ছবি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে লক্ষ্য করছে। আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যাতে কঠোরভাবে আইন মেনে চলে এবং নাগরিকদের বাক্স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। মানুষের আরো শারীরিক ক্ষতি এড়াতে ও সংকটের আরো বৃদ্ধি ঠেকাতে এটি করা দরকার।’
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষকেরা এবং ক্রাইসিস এভিডেন্স ল্যাব বাংলাদেশের ওই প্রতিবাদের ৫৬টি ছবি ও ১৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। এ ছাড়াও, তারা ঘটনার নয়জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।’
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘মাতুয়াইলের প্রতিবাদস্থলে উপস্থিত এক সাংবাদিক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, পুলিশ সেখানে প্রতিবাদকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। সে সময় প্রতিবাদকারীরা শুধু মাটিতে বসে স্লোগান দিচ্ছিলেন।’
টুইটারে পোস্ট হওয়া এবং অ্যামেনেস্টির ক্রাইসিস ল্যাব থেকে যাচাই হওয়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, মাতুয়াইলের শিশু ও মাতৃসদন হাসপাতাল এলাকায় পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস থেকে নিজেদের রক্ষায় লোকজনকে দৌঁড়াতে। সেখানে অন্তত পাঁচজন নারী ছিলেন। অ্যামনেস্টি বলছে, ‘হাসপাতালের আশপাশে কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করা যাবে না।’
স্মৃতি সিং বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট ব্যবহার করা উচিত নয়। বাংলাদেশের পুলিশ যে হাসপাতালের ভেতরে কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করছে, তার মধ্য দিয়ে মূলত তাদের আন্তর্জাতিক আইনকে অবহেলা করার বিষয়টি উঠে এসেছে।’