চট্টগ্রাম: রমাজানের শেষ দিকে ঈদের পূর্ব মুহূর্তে চট্টগ্রামে আচানক অস্বাভবিকভাবে বেড়ে গেছে ব্রয়লার মুরগির মূল্য। তাই, মুরগি কিনতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সিটির কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমাজান মাস জুড়ে ১৭০ টাকায় কেজিতে বিক্রি হওয়া মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকায়।
চট্টগ্রাম সিটির চকবাজার এলাকায় মুরগি ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মুরগির মূল্য নিয়ে এমন ‘লাফালাফি-বাড়াবাড়ি’ চলছে বছরখানেক ধরে। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণ ঘিরে তা ছাড়িয়ে যাচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত। এবার শবে কদর, ঈদুল ফিতর ঘিরে আরো অস্থির বাজার।’
সিটির রিয়াজউদ্দিন বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মামুন উদ্দিন বলেন, ‘মূল্যের বাড়াবাড়িতে আমাদের কিছুই করার নেই। বাড়তি চাহিদা থাকায় সাপ্লায়াররা বাড়তি মূল্য নিচ্ছেন, আমরা সে হিসেবে কেজি প্রতি বিক্রি করছি। চাহিদা বাড়লেই সাপ্লায়াররা মূল্য বাড়ায়, আমাদেরও বাড়াতে হয়।’
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক দিকে বাজারে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। অন্য দিকে, মুরগির খাদ্য ও ওষুধের মূল্য বহু। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচের প্রভাব পড়েছে বাজারে। আর এসবে ভুগছেন ক্রেতারাই।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই কেজির বেশি ওজনের ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২৪৫-২৫০ টাকায়, দেড় কেজি ওজনের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকায়। যা গেল সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২০৫-২১০ টাকায়।
এছাড়া, লেয়ার ও সোনালি জাতের মুরগির কেজি স্থানভেদে ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
ঈদকে সামনে রেখে মুরগির মূল্য আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন কাজীর দেউড়ি বাজারের মুরগি বিক্রেতা কাওসার উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘ঈদকে ঘিরে মুরগির চাহিদা বেড়ে যাবে। তাই, অর্ডার নিতে চাইলেও সাপ্লাইররা চাহিদা মোতাবেক দিতে পারবে না বলছে। যার কারণে মূল্য বাড়তি থাকার আশংকা আছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারেই কেজিপ্রতি ৪০-৬০ টাকা বেড়েছে।’
রিয়াজউদ্দিন বাজারের ক্রেতা জামাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রতি বছরই শবে কদর এলে মাংসের মূল্য বাড়িয়ে দেয় দোকানিরা। গেল এক মাস ধরে মুরগির মূল্য ২০০ টাকার নিচে নামছেই না। ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ঈদে আরো বাড়বে। তাই, একটু আগেভাগে কিনে রাখছি।’
রমজানজুড়ে গরিব-মধ্যবিত্তদের আমিষের অবলম্বন ছিল মুরগির মাংস।
তবে, শবে কদর ও ঈদকে ঘিরে সপ্তাহ ব্যবধানে মুরগির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তা এখন বহু পরিবারের জন্য ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘এ বছর রমজান মাস ও ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকারের কোন তৎপরতা ছিল না বাজারগুলোতে। ফলে, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ইচ্ছামত জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে চলছে।’
১৭০-১৮০ টাকার মুরগি আচমকা ২৭০ টাকায় বিক্রি করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে নয়া করে বাচ্চার মূল্য বা খাদের মূল্য বাড়েনি। তাহলে, কোন যুক্তিতে মুরগির মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে?
নাজের হোসাইন বলেন, ‘প্রশাসনের সঠিক তদারকির অভাবে সাধারণ ক্রেতাদের এ ভোগান্তি ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা জনগণের পকেট কাটছে।