চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) ২৫ বছর পুর্তি উৎসব ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ১১তম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে আইআইইউসির সেন্ট্রাল অডিটরিয়ামে এ আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, স্বনামধন্য স্কলার, গবেষক, উন্নয়ন ও দাতা সংস্থার প্রধান, দেশের সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক-সামাজিক নেতৃবৃন্দ যোগ দেন।
উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে আইআইইউসির জেনারেল অ্যাসেম্বেলির সভাপতি ও মিশরের ইসলামিক কাউন্সিল ফর দাওয়াহ অ্যান্ড রিলিফের জেনারেল সেক্রেটারি প্রফেসর আব্দুল্লাহ আব্দুল আজিজ আল-মুসলিহ্, আলজেরিয়ার ডিপুটি স্পিকার মহামান্য ইউসুফ আজিচ্ছা, মালদ্বীপের শিক্ষা মন্ত্রী আব্দুল্লাহ রাশেদ আহমেদ, সোমালিয়ার ডেপুটি এডুকেশন মিনিস্টার ইঞ্জিনিয়ার আব্দি ফাতাহ ইসাক মোহাম্মদ, কুয়েতের ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক চ্যারিটেবল অর্গানাইজেশন (আইআইসিও) ডিরেক্টর জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার বদর সৌদ আল সুমাইত, মিশরের রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স নূর আল দীন মুহাম্মদ আব্দুল ওয়ারিস, আন্তর্জাতিক ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স প্রফেসর আকরাম নদভী, সৌদি আরবের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স আহমেদ আব্দুল্লাহ সুরুর আল সাব্বান, সৌদি আরবের এডুকেশন বিভাগের ডিরেক্টর আব্দুল আজিজ আল ফালেহ, মিশরের সাবেক মন্ত্রী প্র্রফেসর সামী মুহাম্মদ আস শরীফ, সৌদি আরবের উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর আহমেদ আল বান্নানি, তুরস্কের এডুরেস একাডেমির চেয়ারম্যান প্রফেসর ইয়াকুব সিভিলেক, নেপালের সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রেজওয়ান আনসারী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইআইইউসির বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আইআইইউইসির ইতিহাসে অন্যতম সেরা আয়োজন হচ্ছে ২৫ বছর পুর্তি উৎসব। আইআইইউসিতে বহু বছর ধরে এ ধরনে অনুষ্ঠান হয় নি। আলহামদুলিল্লাহ, এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বহু মন্ত্রী, সচিব, শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক আইআইইউসিতে এসে আমাদের ধন্য করেছেন। আইআইইউইসির প্রতি তাদের ভালবাসা দেখে আমরা অভিভূত। আইআইইউইসি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ব র্যাংকিং এবং এ বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে এগিয়েছে।’
এখানকার শিক্ষকদের গবেষণাপত্র বিশ্বখ্যাত জার্নালগুলোতে স্থান পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘চট্টগ্রামকে বলা হয় ইসলামের প্রবেশদ্বার। এ দেশে ইসলামের আগমণ ঘটেছে আরবদের মাধ্যমে। চট্টগ্রামে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ছিল দীর্ঘ দিনের। আল্লাহর ইচ্ছায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সরকারী অনুমোদন নিয়ে ১৯৯৫ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে মাত্র তিনটি বিভাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও আল্লাহর প্রশংসা ও অনুগ্রহ এটি এখন দেশের প্রথম সারির বৃহত্তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আইআইইউসির দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থী, শিক্ষকরা সব মহলের গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যালঘুসহ প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে পড়তে আসে। বর্তমানে এখানে শরিয়াহ্ ও আধুনিক বিজ্ঞান অনুষদসহ ছয়টি অনুষদের অধীনে ১৪টি বিভাগে রয়েছে। ১৭ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী দুইটি পৃথক ক্যাম্পাসে অধ্যয়ন করা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০ জনেরও বেশি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন।’
আইআইইউসির চেয়ারম্যান জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আরব দেশগুলোর অকুন্ঠ সমর্থন ও সাহায্য পেয়ে এসেছে। দেশ-বিদেশের অনেক সাহায্য সংস্থা, ব্যক্তি আইআইইউইসিকে সহযোগিতা করেছেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ইসলামিক দাতব্য সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি শায়খ ইউসুফ জাসেম আল-হাজ্জি (র), শেখ আবদুল্লাহ আলী আল-মুতাওয়া ও ওয়ার্ল্ড অ্যাসেম্বলি অব ইসলামিক ইয়ুথের প্রাক্তন মহাসচিব বিশিষ্ট শায়খ মানি’ হাম্মাদ আল-জুহানি। শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের প্রতি বিশেষ নজর দিয়েছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যত সমস্যা ছিল, তা তিনি দূর করে দিয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য শাটল ট্রেন ও ক্যাম্পাসে ট্রেন স্টেশন চালু করার অনুমোদন দিয়েছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরণ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ছোট ছোট নালাগুলোকে লেকে পরিণত করে সৌন্দর্য্য বর্ধনের প্রকল্পও অনুমোদন করা হয়েছে। আমরা আমাদের দেশী-বিদেশীবন্ধুদের নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। যাতে এ বিশ্ববিদ্যালয় আগামী বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে পারে। এ জন্য আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।’
অনুষ্ঠানে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, তুরস্ক, মিশর, ভারত, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০ জন সচিব, মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, স্পিকার, সরকারী-বেসরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা যোগ দেন।
আইআইইউসির পুর্তি উৎসব মোট দুই দিনে সম্পন্ন হচ্ছে। প্রথম দিন সকাল নয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই দিন সন্ধ্যা সাতটায় আইআইইউসির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ১১তম সাধারণ সভার প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় হোটেল রেডিসন ব্লুতে। এতে সভাপতিত্ব করেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের জেনারেল এসেম্বিলির সভাপতি ও মিশরের ইসলামিক কাউন্সিল ফর দাওয়াহ অ্যান্ড রিলিফ প্রফেসর আব্দুল্লাহ আব্দুল আজিজ আল-মুসলিহ্। ৩০ অক্টোবর গলফ ক্লাবে সাধারণ সভার দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে আব্দুল্লাহ আব্দুল আজিজ আল-মুসলিহ্ বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে কবুল করুন। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী অন্য যারা কাজ করছেন, আল্লাহ সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন।’
আলজেরিয়ার ডেপুটি স্পিকার ইউসুফ আজিচ্ছা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ২৫তম পূর্তি উৎসব পালন করতে পারা সত্যিকার অর্থে একটি আনন্দের বিষয়। আমি সুদূর আলজেরিয়া থেকে এ আনন্দে শরিক হতে এসেছি। আমাকে এ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমি আবু রেজা নদভীকে ধন্যবাদ জানাই।’
আইআইইউসির উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর কাজী দীন মুহাম্মদ, উপ-উপাচার্য প্রফেসর মাসরুরুল মওলা, ট্রেজারার প্রফেসর হুমায়ুন কবীর, কন্ট্রোলার অব এক্সাম প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন হাফিজসহ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সব সদস্য, দেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, সরকারী-বেসরকারী উচ্চপদস্থ বিভিন্ন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং আইআইইউসির শুভাকাঙ্খী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মকর্তা, বিশ^বিদ্যালয়ের অ্যালামনিসহ প্রায় দেড় হাজার অতিথি ২৫বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
আইআইইউসির ২৫ বছর পুর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ার পেছনে যারা অবদান রেখেছেন, তাদেরকে সম্মাননা স্বরূপ গোন্ডেন ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। আবু রেজা নদভী এমপি ও কাজী দীন মুহাম্মদকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন আব্দুল্লাহ আব্দুল আজিজ আল-মুসলিহ্।
তিনি ক্রেস্ট তুলে দিতে গিয়ে বলেন, ‘আইআইইউসিতে এ দুইজন হলেন মূল স্তম্ভ। দুইজনের হাত ধরে আইআইইউসি বর্তমান অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছে। আমি তাদের হাতকে শক্তিশালী করতে সব সময় পাশে থাকতে চেষ্টা করেছি।’
অনুষ্ঠানের মাঝে আন্তর্জাতিক ক্বারী হাফেজ নাজমুস সাকিব, হাফেজ যাকারিয়া, হাফেজ সালেহ আহমাদ তাকরিমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট ও নগদ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। তারা প্রত্যেকে কুরআন তেলাওয়াত করে আগত অতিথিদেরকে মুগ্ধ করেন। তাদের তেলাওয়াতে মুগ্ধ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যেককে ৩০০ ডলার করে পুরস্কার দেন কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি জেদ্দার প্রফেসর মুওয়াফ্ফাক কাদাসা আল গামেদি। তিনি আন্তর্জাতিক ক্বারী সাইদুল ইসলাম আসাদকে সুমধুর কুরআন তেলাওয়াতের জন্য নিজের গায়ের ‘আবায়া’ খুলে তাকে হাদিয়া দেন।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামিক স্কলার শায়খ আকরাম নদভী বলেন, ‘উস্তাজ আবু রেজা নদভী আবুল হাসান আলী আন নদভীর খুব কাছের ছাত্র ছিলেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় আবু রেজা নদভীর নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে।’
আরো বক্তব্য দেন কসোভোর রাষ্ট্রদূত প্রফেসর বকর ইসমাঈল, আইআইইউসির সাবেক ছাত্র সোমালিয়ার শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দে ফাতেহ ইশক মুহাম্মদ; ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক চ্যারিটেবল অর্গানাইজেশনের ডিরেক্টর জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার বাদের সৌদ আস সুমাইত; মিশরের সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী সামী মোহাম্মদ আল শরীফ, কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েট স্টাডিজের ডিন প্রফেসর সউদ সুলামী। তারা সবাই আইআইইউসি কর্তৃপক্ষকে এত সুন্দর আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান।