শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শিরোনাম

ইউক্রেনের চার অঞ্চল রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত, ঘোষণা পুতিনের

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২

প্রিন্ট করুন

মস্কো, রাশিয়া: ইউক্রেনের চার অঞ্চল দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসনকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ওই চার অঞ্চলে পাঁচ দিনব্যাপী গণভোটের তিন দিন পর শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে ঘোষণা দিলেন তিনি। খবর আল-জাজিরার।

ঘোষণায় পুতিন বলেন, ‘রাশিয়ার সাথে নতুন আরো চার অঞ্চল যোগ হল।’

এ দিন মস্কোয় প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে পুতিন বলেন, ‘রাশিয়ার সাথে এ একীভূতকরণ ছিল ওই অঞ্চলগুলোর লাখ লাখ মানুষের বহু দিনের আকাঙ্ক্ষা।’ এ সময় তার এ বক্তব্যকে হাততালি দিয়ে স্বাগত জানায় উপস্থিত শত শত শ্রোতা। এর মধ্যে ক্রেমলিনে ওই চার অঞ্চলের মস্কোপন্থি নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর গত প্রায় সাত মাস ধরে সেই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ অভিযানের মাধ্যমে ইতিমেধ্য ইউক্রেনের বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী। এর মধ্যে পূর্ব-ইউক্রেনের দোনবাসের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এবং দক্ষিণাঞ্চলের জাপোরিঝিয়া ও খেরসন- চারটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এ চার অঞ্চলের মধ্যে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে ২০১৪ সালে স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন অভিযানের দুইদিন আগেই এ দুই অঞ্চলকে ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম’ ঘোষণা করেন পুতিন।

গত সপ্তাহে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের পাশাপাশি জাপোরিঝিয়া ও খেরসনে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে জোর সমর্থন জানায় রাশিয়া। ওই গণভোটে ৯৯ শতাংশ মানুষই রাশিয়ার সাথে যুক্ত হওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন বলে দাবি আয়োজনকারী নেতারা।

গণভোটের পরপরই এ চার অঞ্চলকে রাশিয়ার সাথে একীভূতকরণের লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করে রুশ কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে এক ডিক্রি জারি করে জাপোরিঝিয়া ও খেরসনকে ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম’ হিসেবে ঘোষণা করেন পুতিন। পর দিন সবগুলো অঞ্চলকে রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত বলে ঘোষণা দেন তিনি।

এ চার অঞ্চল একীভূতকরণ উপলক্ষে রাজধানী মস্কো নানা অনুসঙ্গে সাজানো হয়েছে। রেড স্কয়ারে কনসার্ট চলছে। ক্রেমলিন হলে আয়োজন করা হয় একটি অনুষ্ঠান। স্থানীয় সময় বিকাল তিনটায় অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন পুতিন।

ভাষণের শুরুতেই ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে নিহত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালনের আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে নিহত সেনারা রাশিয়ার বীর। তারা এ ভূখণ্ডের জন্য যুদ্ধ করে মারা গেছেন।’

পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ায় যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি নিশ্চিত, কেন্দ্রীয় পরিষদ আমাদের নতুন চারটি এলাকাকে সমর্থন করবে। কারণ, এটা ওই চার অঞ্চলের লাখো মানুষের আকাঙক্ষা।’

তিনি বলেন, ‘গণভোটে যারা ভোট দিয়েছেন, এ ফল তাদের জন্মগত অধিকার। এ ভূখণ্ডের জন্য রাশিয়ার কয়েকটি প্রজন্ম যুদ্ধ করেছে।’

শত শত শ্রোতার উপস্থিতিতে পুতিন বলেন, ‘আমি চাই, কিয়েভ ও পশ্চিমারা জানুক দোনবাস (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) অঞ্চলের বাসিন্দারা রাশিয়ার নাগরিক হয়েছে। কিয়েভ কর্তৃপক্ষের এখন উচিত জনগণের ইচ্ছাকে শ্রদ্ধার সাথে সম্মান করা। এটাই শান্তির একমাত্র উপায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘যে কোন উপায়ে রাশিয়া নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষা করবে। ভূখণ্ডে বসবাসরত মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। ক্ষতিগ্রস্ত শহর ও গ্রামগুলো পুনর্নির্মাণ করবে রাশিয়া ও অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।’

এ দিকে, মস্কো শহরে যখন উৎসবের আমেজ, তখন ইউক্রেনের কিয়েভে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। রাশিয়ার এ পদক্ষেপের পর কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে, তা নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। দেশটির নিরাপত্তা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদরাও বৈঠকে থাকবেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ওই চার অঞ্চলের গণভোট নিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়ার তথাকথিত এ গণভোটের কোন দাম নেই। এতে বাস্তবতা যা তার কোন পরিবর্তন হবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ফিরিয়ে আনা হবে। রুশ পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেয়া হবে।’

জেলেনস্কির সুরেই কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার ভূখণ্ড দখল ও সংযুক্তিকে কখনোই স্বীকৃতি দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।’

এ দিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা রাশিয়ার ওপর আরো নিষেধজ্ঞা আরোপ করবে। তবে ইইউর পক্ষ থেকে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, সেটা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

হাঙ্গেরি বলেছে, ‘এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় জ্বালানি থাকলে তারা তা সমর্থন করবে না।’

রাশিয়ার মিত্র হিসেবে পরিচিত সার্বিয়া ও কাজাখস্তানও বলছে, ‘রাশিয়ার এ একীভূতকরণ পদক্ষেপের স্বীকৃতি দেবে না তারা। ইউক্রেন ও রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসানো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানও পুতিনের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন।

এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। এরপর গণভোটের মাধ্যমে তা রুশ ফেডারেশনের সাথে যুক্ত করা হয়। এবার সেই তালিকায় যোগ হল আরো চার অঞ্চল।