চট্টগ্রাম: ৫২’র ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালির সব স্বাধিকার আন্দোলনের সূতিকাগার উল্লেখ করে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, ‘৪৭’র দেশ ভাগের পর পাকিস্তানীরা প্রথম আঘাত হানে আমাদের ভাষার উপর। ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষায় কথা বলার দাবিতে বাঙালিকে সে দিন রক্ত দিতে হয়েছিল। সেই থেকে রক্ত দিতে-দিতে আমরা যে আত্মবিশ্বাস পেয়েছি, ৭১রে এসে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আরেক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।’
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) চুয়েটের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাদদেশে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সভায় রফিকুল আলম আরো বলেন, ‘সরকার সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের জন্য আইন করে দিয়েছে। কিন্তু, সর্বত্র সেটার ব্যত্যয় ঘটছে। বর্তমানে স্যাটেলাইট টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ভাষার বিকৃতি হচ্ছে। ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহারে বর্তমানে প্রযুক্তির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষাকে উপস্থাপন করা যেতে পারে। সে জন্য বাংলা একাডেমির কার্যক্রমে প্রকৌশলীদের অন্তর্ভ্ক্তু করা উচিত।’
চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সুনীল ধর, পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মইনুল ইসলাম, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মশিউল হক।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন ও রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। বক্তব্য দেন বিভাগীয় প্রধানগণের পক্ষে স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কানু কুমার দাশ, প্রভোস্টগণের পক্ষে শহিদ মোহাম্মদ শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক রনজিৎ কুমার সূত্রধর, স্টাফ ওয়েলফেয়ারের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক জামাল উদ্দিন আহাম্মদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বশির জিসান, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী সৈয়দ মোহাম্মদ ইকরাম, স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জামাল উদ্দীন ও শিক্ষার্থীদের পক্ষে ‘১৭ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের সাঈদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানমালা সঞ্চালনা করেন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান চৌধুরী ও প্রভাষক দিবা দাশ ও উপ-পরিচালক (তথ্য ও প্রকাশনা) মোহাম্মদ ফজলুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী ও শিশু-কিশোররা অংশ নেন। আলোচনার শুরুতে ভাষা শহিদদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
এর আগে শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দিনের প্রথম প্রহরে সকাল সাড়ে সাতটায় ক্যাম্পাসের আবাসিক উত্তর গোল চত্বর হতে প্রভাতফেরীর মাধ্যমে দিনব্যাপী কর্মসূচীর শুরু হয়। প্রভাতফেরীতে নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এরপর চুয়েটের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জাতীয় পতাকা অধঃনমিতকরণ করা হয়। পরে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মোহাম্মদ রফিকুল আলম। এ সময় সাথে ছিলেন রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। পরে ডিনবৃন্দ, পরিচালক-বিভাগীয় প্রধান-সেন্টার চেয়ারম্যানবৃন্দ, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও হল প্রভোস্টবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।