শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ইন্ডিয়া টুডের নিবন্ধ/মানবাধিকার প্রতিবেদন: ফের কট্টর ইসলামপন্থিদের প্রতি ঝুঁকেছে যুক্তরাষ্ট্র

রবিবার, মার্চ ২৬, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ডেস্ক রিপোর্ট: যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট এবং নীতিনির্ধারকরা কট্টর ও মৌলবাদী ইসলামপন্থি বা ‘মোল্লা’দের প্রতি বেশ অনুরক্ত হয়ে উঠেছে বলেই মনে হচ্ছে। এক সময় তারা মোল্লাদের ব্যবহার করে ইরানের সেক্যুলার ও গণতন্ত্রপন্থি প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। কারণ, মোসাদ্দেক ইরানের তেল সম্পদকে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

১৯৭৮ সালে সাওর বিপ্লবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পাকিস্তানের সহায়তায় আফগানিস্তানের ক্ষমতার তখত পাল্টে দিয়েছিল। তারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করেছে, যাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দমানো যায়। যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে অভিযোগে তুলে সাদ্দাম হোসেনের শাসনের পতন ঘটিয়েছে। কিন্তু, চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে সেই অঞ্চলে আইএসআইএসের মত উগ্র সশস্ত্র সংগঠনের উদ্ভব হয়েছে। এর কারণ হল, সাদ্দাম হোসেনের বাথ পার্টির মত সেক্যুলার শক্তির অভাব, যদিও দলটি স্বৈরতান্ত্রিক ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র আরব বসন্তে সহায়তা দিয়েছে। এর মাধ্যমে মিশরে সেক্যুলার হোসনি মোবারকের দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে ইসলামিক ব্রাদারহুড ক্ষমতায় আসে। পরে জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি ফের মিশরে স্বৈর ও সেক্যুলার শাসন ফিরিয়ে আনেন। তবে, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তালেবানকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করলেও, সেখানে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো মিত্র পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ডাবল গেম খেলেছে। তারা আফগানিস্তানে একইসাথে ন্যাটো বাহিনীকে লজিস্টিকস ও গোয়েন্দা সহায়তা দিয়েছে। অপর দিকে, তালেবানকেও সমর্থন দিয়ে গেছে।

অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তি থাকার পরও বিশ্বজুড়ে অসম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা রয়েছে। কারণ, এর ডিপ স্টেট ও সামরিক শিল্পখাত গায়ের জোরের ওপর বেশি প্রাধান্য দেয়া এবং রাজনীতির বিষয়ে বিভ্রান্তিকর ‘কাউবয় মানসিকতার’ শিকার ও ইসলামি বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র বলা চলে সব সময়ই ভুল করেছে। কারণ, দেশটি তাৎক্ষণিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য অনেক সময়ই মৌলবাদী ও মোল্লাদের মূল্যবোধকে প্রশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু, বাস্তবে দেখা গেছে, এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদি হুমকি তৈরি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ওসামা বিন লাদেনের কথা বলা যায়।

প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ: ভয় হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত বাংলাদেশে ফের একই ভুল করতে চলেছে। এমনটা হলে ভারত সঙ্গত কারণেই তা মেনে নিতে পারবে না। বাংলাদেশে বহুল আলোচিত ১/১১ এর সময় ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সাথে বাংলাদেশে দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে বাদ দেয়ার ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা নিয়ে বাদানুবাদে জড়িয়েছিলেন। তিনি হিলারিকে বুঝিয়েছিলেন, বাংলাদেশে যে কট্টর পন্থা রয়েছে, তা কেবল দেশীয় সেক্যুলার শক্তিই মোকাবিলা করতে পারে, মার্কিন মেরিন ট্রুপস বা বাংলাদেশের জেনারেলরা নয়। সেই বাদানুবাদে প্রণব মুখার্জি জিতেছিলেন ও একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল।

যুক্তরাষ্ট্র এখন ফের শাসনক্ষমতা পরিবর্তনের পুরোনো খেলায় ফিরে গেছে ও নাগরিক সমাজের ব্যক্তিত্ব, জাতীয় কাঠামো, বিশেষ করে রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরদের ও গণ মাধ্যম ব্যবহার করে সেই খেলা এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু, সমস্যা হল- যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে নতুন কোন উদ্ভাবনী পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হচ্ছে না; বরং আগের ছাঁচই ব্যবহার করছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট ও তার নীতিনির্ধারণী সহযোগীরা ২০১৩ সালে ইউক্রেনে অনুসৃত ‘ইউরোমেইডান মডেল’ অনুসরণ করছে। ইউরোমেইডান মডেল হল- সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক জনরোষ ও আন্দোলন হাজির করা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কর্মকর্তা ২০১৩ সালে ইউরোমেইডান মডেল পরিচালনা করেছিলেন, তাদের অনেকেই বাংলাদেশে রেজিম পরিবর্তনে একই মডেল বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু, যা ইউক্রেনে কাজ করেছে, তা বাংলাদেশেও কাজ করবে– এমন কোন কথা নেই।

সবশেষ যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনও বাংলাদেশে রেজিম পরিবর্তন কার্যক্রমের অংশ। এটি এমন এক সময়ে উগ্রপন্থি দল জামায়াতে ইসলামীকে উৎসাহিত করতে চায়, যখন দলটি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক প্রচারণা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দেশের বৃহত্তম ইসলামি রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর (জামায়াত) নেতা ও সদস্যরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হয়রানির কারণে বাক ও সমাবেশের যে সাংবিধানিক স্বাধীনতা রয়েছে, তা প্রয়োগ করতে পারেননি। সরকার জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে ও প্রার্থীদের জামায়াতের নামে কার্যালয় বরাদ্দ চাওয়া থেকে নিষিদ্ধ করেছিল।’

পরিহাসের বিষয় হল- যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের প্রতিবেদনে সেই বিষয়গুলো আমলে নেয়নি, যা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নেতারা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কাছে তুলে ধরেছিলেন। যেমন- আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকদের বয়কট করার ব্যাপারে প্রচারণা চালাচ্ছে পাকিস্তানপন্থি একটি দল ও সেই দল সরকারকে আহমদিয়া সম্প্রদায়কে ‘অনৈসলামিক’ ঘোষণা করার জন্য চাপ দিয়েছে– সে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে উল্লিখিত হয়নি।

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তাদের কয়েকজন নেতা রাষ্ট্রদূত হাসের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় ‘জামায়াত মদতপুষ্ট বিদ্বেষমূলক প্রচারণা’ ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘সাম্প্রদায়িক বিবৃতি’র বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার পর দিন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম ৫ মার্চ একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি আহমদিয়া সম্প্রদায়কে ‘অমুসলিম’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এর বাইরেও জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট টুইটার একাউন্ট ‘বাঁশেরকেল্লা’ থেকে আহমদিয়া সম্প্রদায়কে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে একগাদা টুইট করা হয়, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক প্রচারণার একটি অংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বিতর্কিত মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’কেও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অথচ বাস্তবতা হল- এর প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খান শুভ্র বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে (২০০১-০৬) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।

২০১৩ সালে উগ্র কট্টরপন্থি দল হেফাজতে ইসলামের গণজমায়েতের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযানের সময় হতাহতের সংখ্যা থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে মানবাধিকার পরিসংখ্যান জাল করার পেছনে ‘অধিকার’ সংশ্লিষ্ট শক্তি জড়িত ছিল। পরে এ স্রোতে জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোও যোগ দেয়। পরে অবশ্য দেশের গণ মাধ্যম এ জালিয়াতি উন্মোচন করেছিল।

জাতিসংঘও ঢালাওভাবে অধিকার এবং এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংস্থাগুলোর ওপর ভিত্তি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে জোরপূর্বক গুমের তথ্য গ্রহণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিশেষ করে, যারা ভারতবিরোধী মনোভাব পোষণ করে, তাদের সরকারি বাহিনী গুম করছে- এমন তথ্যও ঢালাওভাবে প্রকাশ করে জাতিসংঘ।

এছাড়াও, মার্কিন প্রতিবেদনে জামায়াতের প্রধান মিত্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সম্পর্কে প্রায়ই আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতাকে কেন্দ্র করে দলটির যে দাবি, তা ঢালাওভাবে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু, দেশের সংবাদ মাধ্যমের ওপর দলটির আক্রমণ ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দেয়ার ভূমিকাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। তবে, এ প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতারা এবং তাদের এ বিষয়ে উদ্বেগ সঠিক। তারা ছাড়াও এ প্রতিবেদনের বিষয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সুলতানা কামালের বক্তব্য আশা করি ওয়াশিংটনকে তাদের প্রতিবেদনের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।

এক সাক্ষাৎকারে সুলতানা কামাল বলেন, ‘এ প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে যে অবস্থান নেয়া হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধের প্রমাণ রয়েছে- তা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক।’

এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, আলবদর ও আলশামস নামে জামায়াতের সামরিক শাখা ১৯৭১ এর ১০-১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। যথাযথ সম্মানের সাথে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রমাণ জমা দিতে চাই। কারণ, ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নয় মাস বাংলাদেশে গণহত্যার সময় জামায়াতের ভূমিকা কী ছিল, তা কারো অজানা থাকা উচিত নয়। ফলে, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি ছিল পুরোটাই আইনি প্রক্রিয়া। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি প্রশ্ন রাখতে চাই: নাৎসি পার্টিকে কি এখন জার্মানিতে কার্যক্রম চালাতে দেয়া হবে?

‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্রুটিপূর্ণ ছিল’–কীসের ভিত্তিতে এটি মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তা আমার জানা নেই। তবে, ট্রাইব্যুনাল নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা হল- অভিযুক্তদের আত্মরক্ষার অধিকারকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করা হয়েছে সেখানে।

এখন যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় যেম আমরা জিল্লুর রহমানের সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজকে সুলতানা কামাল পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বাস করি, তাহলে তারা নিরর্থক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা জানি, কীভাবে আইএসআই যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে করা তার তথাকথিত মহিমান্বিত সাক্ষাৎকারে অর্থায়ন করেছিল। কিন্তু, এখন যুক্তরাষ্ট্র তার মূল্য খুঁজে পেয়েছে। কারণ, তিনি বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের সুবিধার্থে ভূমিকা পালন করতে অন্য আরো কয়েকজনের মত সম্মত হয়েছেন।

সাবেক অভিনেত্রী-নাট্যকার ও মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য তারানা হালিম সম্প্রতি একটি গণ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘হাসিনা সরকারকে হেয় করার এজেন্ডা মার্কিনিদের কাছে এতটাই প্রাধান্য পেয়েছে যে, জামায়াতের মত একটি বিপজ্জনক গোষ্ঠীকে সমর্থন করার জন্য তারা সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা ২০০১ সালে আমাকে প্রায় হত্যাই করে ফেলেছিল। কারণ, আমার উদারপন্থি মতামত জামায়াতের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না।’

তারানা হালিম আরো বলেন, ‘পশ্চিমারা নারী অধিকার ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে এবং তারপর একই সাথে তারা জামায়াতে ইসলামীর মত একটি দলকে সমর্থন করে, যারা বাংলাদেশে শরিয়াহ আইন জারি করতে ও লৈঙ্গিক অধিকার রোধ করতে বদ্ধপরিকর।’

যুব মহিলা লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ডলি বলেন, ‘পশ্চিমারা বাংলাদেশে সমঝোতার কথা বলে। এটা অসম্ভব। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতাকারী ও আমাদের জনগণের ওপর, বিশেষ করে আমাদের নারীদের বিরুদ্ধে ভয়ংকর বর্বরতা চালানোর জন্য পাকিস্তানের দখলদার সেনাবাহিনীর পাশে থাকা জামায়াতে ইসলামীকে আমরা কীভাবে স্থান দিতে পারি? একজন বাঙালি নারী হিসেবে, আমি তাদের প্রচেষ্টাকে কখনোই মেনে নেব না। আমরা আমাদের দেশকে আরেকটি আফগানিস্তান হতে দিতে পারি না।’

দেশের বিশিষ্ট অধিকার কর্মীদের মতে, বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান ২০০১-২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে অর্থ পাচার ও নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক রাখার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। তারেক মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে এখন লন্ডনে পলাতক জীবনযাপন করছেন। তার আমলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। সে সময় জঙ্গিরা সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অবাধ স্বাধীনতা উপভোগ করত। সেই আমলেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংঘটিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তিনি অল্পের জন্য বেঁচে যান।

সুতরাং, ১৯৫০-এর দশকে ইরানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেককে ক্ষমতাচ্যুত করা থেকে শুরু করে আফগান জিহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কট্টর ইসলামপন্থিদের ব্যবহার থেকে শুরু করে সৌদি আরবের সবচেয়ে কট্টর শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন সবক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র সব সময় মৌলবাদী শক্তিগুলোকে ইসলামি বিশ্বের প্রগতিশীল শক্তিকে পরাজিত করে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের অভিযানে ব্যবহারের জন্য ‘প্রস্তুত উপাদান’ হিসেবে খুঁজে পেয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ওয়াশিংটনের জন্য জামাল নাসের, সাদ্দাম হোসেন বা মোসাদ্দেকের মতো আরব বা পারস্য জাতীয়তাবাদীরা প্রধান শত্রু ছিল। তবে, সব সময় যুক্তরাষ্ট্র সেগুলোকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারেনি। যেমন- ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব, ১৯৯৬ সালে তালেবানদের আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যায়নি।

আমাদের মত যারা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং এর পরের ঘটনাগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, তারা মার্কিন নীতিতে ধারাবাহিকতা খুঁজে পেয়েছেন। প্রথমে রক্তপিপাসু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সমর্থন করা ও তারপর ১৯৭৫ সালের নৃশংস অভ্যুত্থানে ওয়াশিংটনের গোপন সমর্থন। নিক্সন-কিসিঞ্জার জুটির কাছে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন ‘সোভিয়েত-ভারতীয় প্রক্সি’। তাই, নাসেরের মত আরব জাতীয়তাবাদীদের মত মুজিব ও শেখ হাসিনার মত বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা সহজেই অবিশ্বাসের খাতায় পড়ে যান।

সুতরাং, স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে জামায়াতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রবল সমর্থন বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থি শক্তিকে সমর্থন করার মার্কিন নীতির একটি উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিকতাকে প্রমাণ করে। ইন্দিরা গান্ধী, শেখ মুজিবুর রহমান বা জামাল নাসেরের মত আবেগপ্রবণ জাতীয়তাবাদীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সব সময় সমস্যা ছিল। সৌদি আরব বা পাকিস্তানের মত পশ্চাৎপদ শাসনব্যবস্থা সব সময়ই পশ্চিমের কৌশলগত স্বার্থের সাথে তাল মিলিয়ে চলে ওয়াশিংটনের স্বার্থকেই এগিয়ে নিয়েছে।

(সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত একজন প্রবীণ কলামিস্ট ও ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদারদের হামলা নিয়ে ‘মিডনাইট ম্যাসাকার ইন ঢাকা’ এর লেখক। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিবেদন করেছেন।)