বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

মামলার পর মামলায় ‍দুর্ভোগে ট্রাম্প

রবিবার, অক্টোবর ১৬, ২০২২

প্রিন্ট করুন

ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে এখন যেসব আইনি লড়াই রয়েছে, সেগুলো বিস্তৃত ও বেশ বৈচিত্র্যময়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যেসব তদন্ত চলছে তার মধ্যে রয়েছে, গোপন নথি ব্যবহার শুরু করে তার নিউইয়র্কের পেনথাউস ফ্ল্যাটের জালিয়াতি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য মামলা। তবে চারটি গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে ট্রাম্পের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। এ তদন্তগুলো এখনো চলছে। তবে তার বিরুদ্ধে কোনে মামলাতেই এখনো কোন ফৌজদারি অভিযোগ গঠন করা হয় নি।

কী অভিযোগে তদন্ত চলছে: গত বছরের ৬ জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ ভবন ক্যাপিটলে হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের কথিত ভূমিকা নিয়ে বেশ কয়েকটি ফেডারেল সরকারি সংস্থার তদন্ত চলছে। ওই দিন তার এক দল উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী বিজয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়া বন্ধ করার লক্ষ্যে ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায়। এ তদন্তগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে একটি কংগ্রেস কমিটির তদন্ত, যেখানে ওই ঘটনাকে ঘিরে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড তারা খুঁটিয়ে দেখছেন। এ তদন্তের শুনানি তারা টেলিভিশনে লাইভ সম্প্রচার করছে, যেখানে দেখা হচ্ছে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে তার দাবির জেরেই ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ক্যাপিটলে হামলার তদন্তকারী মার্কিন কমিটির শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়েছে। এ কমিটি অভিযোগ করছে, ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের সমর্থকরা যে দাঙ্গা করে, সেখানে তিনিই ছিলেন মূল হোতা। একাধিক শুনানির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, সে দিনের প্রাণঘাতী সহিংসতাটি ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফলকে উল্টে দেয়ার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্টের কয়েক মাসের প্রচেষ্টার চূড়ান্ত পরিণতি ছিল। তিনি বিদ্রোহকে সমর্থন করেন ও এতে উস্কানি দেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হল- ৬ জানুয়ারিতে মার্কিন বিচার বিভাগের ফৌজদারি তদন্ত ও নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের প্রচেষ্টা। তবে এ তদন্তটি বেশ গোপনীয়ভাবে চালানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি বৃহত্তম পুলিশি তদন্ত। কিন্তু ট্রাম্প নিজে এ তদন্তের কতটা লক্ষ্যবস্তু, তা স্পষ্ট নয়।

কী বলেছেন ট্রাম্প: তিনি ওই দাঙ্গার দায় অস্বীকার করেন ও কংগ্রেশনাল কমিটির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ক্যাঙ্গারু কোর্ট বা প্রহসনের আদালত যেটি পরিচালিত হচ্ছে, অনির্বাচিত ছদ্ম-কমিটির মাধ্যমে।’ নির্বাচনে ব্যাপক ভোটার জালিয়াতি হয়েছে বলে কোন প্রমাণ ছাড়াই তিনি আগে যে অভিযোগ করেন, সেটা তিনি এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগ কতটা গুরুতর: কংগ্রেশনাল কমিটিতে আছে সাতজন ডেমোক্র্যাট ও দুইজন রিপাবলিকান। এ কমিটির বিচার করার ক্ষমতা নেই। তবে এটি ট্রাম্পকে ‘সাপিনা’ করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। এর মানে হল- তিনি আইনগতভাবে কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হবেন। তবে মনে করা হচ্ছে, তিনি এ সমনকে উপেক্ষা করবেন ও এটি একটি দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের দিকে যাবে। এ কমিটি আরো বিবেচনা করছে যে, ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার সুপারিশ করে একটি ফৌজদারি রেফারেল বিচার বিভাগে পাঠানো হবে কিনা। পদক্ষেপ হিসেবে এটা তেমন বড় কিছু না, তবে এতে তদন্তকারীদের ওপর চাপ বাড়তে পারে। বিচার বিভাগের ফৌজদারি তদন্তের ফলে যারা ক্যাপিটলে হামলা চালায় এ রকম শত শত লোকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অভিযোগ করা হয়েছে। সেই তদন্তে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় নি। তবে এটি একটি সম্ভাবনা হিসেবে রয়ে গেছে। তাত্ত্বিকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যেতে পারে। যদি তদন্তকারীরা বিশ্বাস করেন তার অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

কী নিয়ে তদন্ত হচ্ছে: মার্কিন বিচার বিভাগ হোয়াইট হাউস থেকে সরকারি গোপন নথিপত্র সরিয়ে নেয়ার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার পর এগুলো ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে ট্রাম্পের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্তকারীরা এখন দেখছেন, এ নথিগুলো কীভাবে সেখানে সংরক্ষণ করা হয় এবং কে কে এগুলো দেখতে পেয়েছে। গত অগাস্ট মাসে ফ্লোরিডা সৈকতের পাশে সাবেক প্রেসিডেন্টের বিশাল ভিলায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে ১১ হাজার নথি জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ১০০টি দলিল গোপন বলে চিহ্নিত করা ছিল। কয়েকটিকে টপ সিক্রেট বা অত্যন্ত গোপনীয় বলে লেবেল লাগানো ছিল। এটি মোটেও অবাক হওয়ার মত বিষয় নয় যে, এ পর্যায়ে এসব নথিতে কী আছে, সে সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। কিন্তু গোপনীয় বা অত্যন্ত গোপনীয় দলিলে সাধারণত এমন সব তথ্য থাকে, যা প্রকাশিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি হতে পারে।

কী বলেছেন ট্রাম্প: তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন ও বিচার বিভাগের তদন্তের সমালোচনা করে বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানি।’ নিজের সাফাই করে তিনি বলেন, ‘এসব দলিল থেকে আগেই তিনি গোপনীয়তার লেবেল অপসারণ করেন।’ তবে এটি যে সত্য তার স্বপক্ষে এখনো কোন প্রমাণ মেলে নি। ট্রাম্প আরো যুক্তি দেন যে, কিছু দলিল প্রিভিলেজ অধিকারে সুরক্ষিত। এটি একটি আইনি শব্দ যার অর্থ ভবিষ্যতে কোন মামলা হলে এসব দলিল আদালতের সামনে উপস্থাপন করা যাবে না। একজন স্বাধীন আইনজীবী এখন এসব জব্দ করা দলিলপত্র পর্যালোচনা করে দেখেন ও সেই প্রক্রিয়াটি এখনো চলছে। কিন্তু প্রধান যে প্রশ্ন এসব নথি কেন মার-এ-লাগোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে এ সাবেক প্রেসিডেন্ট সরাসরি কোন জবাব দেন নি।

তাহলে অভিযোগ কতটা গুরুতর: এটি এমন একটি ফৌজদারি তদন্ত, যার জেরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হতে পারে। অন্য আইনের মধ্যে, মার্কিন বিচার বিভাগ মনে করছে যে ক্ষমতা ত্যাগের পরও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য, যা বেহাত হলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি পারে। এসব তথ্য নিজের হাতে রেখে ট্রাম্প মার্কিন গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘন করেছেন। গোপন দলিলপত্র সম্পর্কিত অভিযোগগুলোর পাশাপাশি সরকারি কৌসলিরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরেক অপরাধ বিবেচনা করছেন। এ তদন্তকে ঘিরে ট্রাম্পের আইনজীবীরা এখনো বিচার বিভাগের সাথে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।

কী তদন্ত করা হচ্ছে: নিউইয়র্কের প্রসিকিউটররা সাবেক প্রেসিডেন্টের পারিবারিক সংস্থা ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ওপর তদন্ত করেন। নিউইয়র্কে দুইটি তদন্ত চলছে- একটি দেওয়ানি ও অন্যটি ফৌজদারি। নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস দেওয়ানি তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ও কোম্পানিটি গত কয়েক দশক ধরে নানা ধরনের প্রতারণার সাথে জড়িত কিনা, তা নিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে তদন্ত চালাচ্ছেন।