মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

কসাই জিহাদকে নিয়ে কলকাতার সেই ফ্ল্যাটে ঢাকা ডিবির তদন্ত দল

মঙ্গলবার, মে ২৮, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ ভারত: সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার খুনের ঘটনা তদন্তে ভারতের কলকাতায় গ্রেফতারকৃত কসাই জিহাদকে সাথে নিয়ে সঞ্জীবনী গার্ডেনের আলোচিত সেই ফ্ল্যাটে যান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তদন্ত টিম। সোমবার (২৭ মে) দুপুরে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল ওই ফ্ল্যাটে ঢুকেন। এ সময় তাদের সাথে কলকাতা পুলিশও ছিল।

তারা আনারকে খুনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সঞ্জীবনী গার্ডেনের সেই ফ্ল্যাটে মুখ বেঁধে সাথে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায় গ্রেফতার ‘কসাই’ জিহাদ হাওলাদারকে (২৪)। ঢাকার ডিবি দল বাংলাদেশে গ্রেফতার তিনজনকে ভিডিও কলে যুক্ত করে জিহাদের সাথে সামনাসামনি জিজ্ঞাসাবাদ করে। আনার খুনের ঘটনার দুই মাস পূর্বে জিহাদকে কলকাতায় নিয়ে যায় আকতারুজ্জামান শাহীন। মুম্বাইয়ের অবৈধ অভিবাসী জিহাদের বাড়ি বাংলাদেশের খুলনায়।
জিহাদের সাথে অনলাইনে যুক্ত হয়ে আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ও তার ভাতিজা তানভীর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বিবরণ দেয়।

অনলাইনে ভিডিও কলে তারা বিবরণ দেয় ফ্ল্যাটের কোথায়, কীভাবে খুন করা হয় সাংসদ আনারকে। মরদেহ কীভাবে খণ্ডবিখণ্ড করা হয় ও কীভাবে বাইরে নেয়া হয়। রক্তাক্ত কাপড়, ব্যাগ ও স্যুটকেসে কাটা দেহাংশ তোলার বর্ণনা দেয় তারা।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিমুল হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে যা পূর্বে জানিয়েছে, তার সাথে কসাই জিহাদের দেয়া তথ্যের মিল আছে কি না, সেটা জানতে ও সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করতে চারজনকে একসাথে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে অধিকাংশ তথ্যে মিল পাওয়া গেছে বলে ডিবি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, ‘কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ‘কসাই’ জিহাদ হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে সবকিছু না জানলেও খুনের পর টুকরো টুকরো করাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কোথায় কোথায় ফেলা হয়েছে, সব জানত। জিজ্ঞাসাবাদে নয়া কিছু তথ্য এসেছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ভারতীয় পুলিশের উপস্থিতিতে কসাই জিহাদকে নিয়ে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাট আমরা পরিদর্শন করেছি। এটা আলিশান বাড়ি। এ বাড়িতেই কিন্তু সাংসদ আনার জীবিত অবস্থায় ঢুকেছিলেন। কিন্তু, তাকে মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে অত্যন্ত বর্বরোচিতভাবে খুন করা হয় ‘

আনারের শরীর কীভাবে খণ্ডবিখণ্ড করা হয়, তার রোমহর্ষক বর্ণনা দেয় ‘কসাই’ জিহাদ। এ সময় ডিবির প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জিহাদকে নানা ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। জিহাদকে ওই ফ্ল্যাটে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখালে, সে সবকিছু স্বীকার করে। এ ফ্ল্যাটে ঢোকার পরই আমরা খোঁজার চেষ্টা করেছি, কীভাবে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছিল। সাংসদ আনার খুনের পর আনন্দ উল্লাস করা হয়েছিল বলেও জানা গেছে।

‘আমরা কলকাতা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সাথে মিটিং করেছি। জিহাদের কথামত আমরা কিন্তু ডাম্পিং এলাকা পরিদর্শন করেছি, যেখানে আনারের লাশের বিভিন্ন দেহাংশ ফেলা হয়েছে। আমরা দুই দেশে গ্রেফতার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য মেলানোর চেষ্টা করছি।’

প্রসঙ্গত, ঢাকায় হওয়া অপহরণ মামলার তদন্ত ও লাশ উদ্ধারে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত দল রোববার (২৬ মে) সকালে কলকাতায় যায়। প্রতিনিধি দলে আরো রয়েছেন ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ ও এডিসি শাহীদুর রহমান।

এ দিকে, সোমবার (২৭ মে) পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ১৪ দিন পার হলেও আনারের টুকরো টুকরো করা দেহের কোন অংশই উদ্ধার হয়নি। খুনে ব্যবহার করা চাপাতিসহ অন্য ধারালো অস্ত্রও উদ্ধার করা যায়নি। আলামত উদ্ধারে কলকাতা পুলিশ ময়লার ভাগাড়, খাল ও ডোবায় গেল কয়েক দিন ধরেই তল্লাশি চালাচ্ছে।

এ দিকে, পুলিশ রিমান্ডে থাকা তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে খুনে জড়িত আরো কয়েকজনের সম্পৃক্ততার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তারা দেশ-বিদেশে অবস্থান করছে।

উল্লেখ্য, গেল ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিবঙ্গে যান সাংসদ আনার। ১৩ মে বন্ধু গোপালের বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। তিনি এসএমএসে বলেছিলেন দিল্লি যাচ্ছেন ও সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সাথে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে ফোন না দেয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন। পরে ১৮ মে ভারতে নিখোঁজের জিডি করা হয়। ২২ মে ভারতের কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়েছে বলে জানায় কলকাতার সিআইডি। এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে শাহীনকে শনাক্ত করেছে দুই দেশের পুলিশ। সেই শাহীন প্রথমে নেপাল, এরপর সেখান থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছেন বলে তদন্তকারীরা তথ্য পেয়েছেন।