ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার সময় পুলিশের গুলি চালানোর ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘পুলিশের (গুলি চালানোর ব্যাপারে) তদন্ত হবে। কেউ যদি ভুল করে থাকে, সেটাও আমরা দেখব।’
বুধবার (৩১ জুলাই) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন। এর পূর্বে মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস।
জাতিসংঘের প্রতিনিধির সাথে কী কী ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বহু কিছুই জিজ্ঞাসা করেছেন। তারা জিজ্ঞাসা করেছেন, আর কত দিনের মধ্যে অবস্থা স্বাভাবিক হবে। তোমাদের কারফিউ, এ যে অস্বাভাবিক অবস্থা চলছে। আমরা বলেছি, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। আমরা মনে করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাভার করতে পারব। কারফিউ প্রত্যাহার করতে পারব, সেনাবাহিনীও খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যারাকে ফিরে যাবে।’
সহিংসতা নিয়ে তদন্তের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ কথা জানিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছেন তোমরা কী কী করেছ? বলেছি আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করেছি। সেটা এক সদস্য থেকে তিন সদস্যের করা হয়েছে। পুলিশের তদন্ত হবে। কেন পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হল, সবই তদন্তের মাধ্যমে…. কেউ যদি ভুল করে থাকে সেটাও আমরা দেখব।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুয়েকজন কিশোরের কথা তারা জানতে চেয়েছিলেন, কয়েকজন কিশোর নিহত হয়েছে। একজনের বয়সের ব্যাপারে এখনো সার্টিফিকেটটা পাইনি। স্কুল থেকে জানিয়েছে সাড়ে ১৭ বছর। সেই ছেলেটি যে অন্যায় কাজটি করেছে, সে একটা জঘন্য অন্যায় কাজ করেছে। যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ হত্যার সাথে সে জড়িত ছিল। ভিডিও এবং কথোপকথন থেকেই আমরা তাকে শনাক্ত করতে পেরেছি। সে পুলিশকে ঝুলানোর জন্য দড়ি ধরে টানছিল। ওই কাজ করার পর যে তাকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছিল- পুলিশকে আমরা খুন করতে পেরেছি, তাকে ঝুলিয়ে দিয়েছি। অপরপ্রান্ত থেকে তাকে সাবাশ দেয়া হয়েছিল।’
‘এ কিশোরকে আমরা কোথায় নেব- তার (জাতিসংঘের প্রতিনিধি) কাছে আমরা প্রশ্ন রেখেছিলাম। দেশের যে প্রচলিত আইন, কিশোর সংশোধনাগারে তাকে আমরা রেখেছি। আইন অনুযায়ী তার ব্যবস্থা হচ্ছে।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের ব্যাপারে বলেছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সকলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাদের দেখতে গিয়েছেন। তাদেরকে কিছু নগদ টাকাও সাহায্য করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এসব ঘটনা আমাদের পুলিশ ও আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ইচ্ছা করে কিংবা কারও প্ররোচনায় করেনি। তারা মানুষের জানমাল, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করার জন্য গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছেন। পুলিশ বহু ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করেছে। শিশু-কিশোরদের সামনে আনা হয়েছিল। এর পেছনে ছিল আসল ব্যক্তিরা। তারা আগুন ধরিয়েছে, মানুষ খুন করেছে, ইট-পাটকেল ছুড়েছে। তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে টিয়ার গ্যাস, যেটা যেটা করার সেটা করেছে। এতে হয়তো অনেকে আহত হয়েছেন। এরপর যখন থামেনি তখন পুলিশ নন-লেথাল আর্মস (কম-প্রাণঘাতী অস্ত্র) ফায়ার করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা কারফিউ দিতে বাধ্য হয়েছি, সেনাবাহিনী নামাতেও বাধ্য হয়েছি। এটা তাকে ভালভাবে জানিয়ে দিয়েছি।’
মন্ত্রী প্রতিনিধি দলকে আরো জানিয়েছেন, শুধু ছাত্র শাহাদাত বরণ করেছে তা নয়, সহিংসতায় পুলিশ, আনসার, র্যাবের সদস্য, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন।
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি কোন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না, উনি কোন প্রতিক্রিয়া জানাননি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, সেনাবাহিনী জাতিসংঘের এপিসি ভেহিক্যাল ব্যবহার করছিল কেন? আমি বলেছি, এটি যখন জাতিসংঘ থেকে ফেরত এসেছে সেনাবাহিনী তাড়াহুড়া করে হয়তো এটা বের করেছিল। এটা যখন দৃশ্যমান হয়েছে, সাথে সাথে সেনাবাহিনী সরিয়ে নিয়েছে। এটা দিয়ে কোন অপারেশন করা হয়নি।’