মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ক্ষমতাচ্যুতি নিয়ে শেখ হাসিনার লেখা চিঠিটি ভুয়া

সোমবার, আগস্ট ১২, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা বলে প্রচার করা একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাছাড়া, ভারতের একটি সংবাদ মাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে রোববার (১১ আগস্ট) দেশের প্রথম সারির বেশ কয়েকটি গণ মাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। এটিও ভাইরাল। প্রকৃতপক্ষে এ দুইটি সংবাদই ছিল ভুয়া।

ব্যাপার দুইটি সামনে আসার পর বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের টিম এ নিয়ে অনুসন্ধান চালায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে কোন খোলা চিঠি দেননি। বরং, ফেসবুক থেকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম হয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ভুয়া এ চিঠির তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিঠিটির উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে রিউমর স্ক্যানার দেখতে পায়, গেল ৫ আগস্ট বিকাল চারটা ৩৫ মিনিটে মো. রাকিব আকন নামে এক ব্যক্তি এর সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি করেছেন। পরবর্তী ভারতের আগরতলা ভিত্তিক দৈনিক পত্রিকা ‘ত্রিপুরা ভবিষ্যত’-এর প্রিন্ট সংস্করণেও এটি চিঠি আকারে তারিখ উল্লেখসহ প্রকাশের পর এর প্রিন্ট সংস্করণের স্ক্রিনশট ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলে- ‘আমি পদত্যাগ করেছি, শুধু মাত্র লাশের মিছিল যেন না দেখতে হয়। তোমাদের (ছাত্রদের) লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল ওরা, আমি হতে দেয়নি, ক্ষমতা দিয়ে এসেছি। ক্ষমতায় আমি থাকতে পারতাম, যদি সেন্টমার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার কাছে ছেড়ে দিতাম। অনুরোধ রইল তোমরা ব্যাবহার হয়ো না।
আমি বলে এসেছি, আমার সোনার সন্তানদের যারা লাশ করে ঘরে ফিরিয়েছে তাদের যেন বিচার করা হয়।
হয়তো আজ আমি দেশে থাকলে আরো প্রাণ ঝড়ত, আরো সম্পদ ধ্বংস হত। আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি,
তোমাদের জয় দিয়ে এসেছি, তোমরা ছিলে আমার শক্তি, তোমরা আমাকে চাওনি, আমি নিজেই তখন চলে এসেছি, পদত্যাগ করেছি।
আমার কর্মিরা যারা আছেন, কেউ মনবল হারাবেন না। আওয়ামী লীগ বার বার উঠে দাড়িয়েছে। আপনারই দাড় করিয়েছেন। আশাহত হবেন না। আমি শিঘ্রয় ফিরব ইনশাআল্লাহ। পরাজয় আমার হয়েছে কিন্তু জয়টা আমার বাংলাদেশের মানুষের হয়েছে। যে মানুষের জন্য আমার বাবা আমার পরিবার জীবন দিয়েছে। খবর পেয়েছি ইতিমধ্যে অনেক নেতা কর্মিকে হত্যা ও বাড়ি ঘরে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করেছে।
আল্লাহ অবশ্যই আপনাদের সহায় হবেন।
আমি আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবারও বলতে চাই, আমি কখনই তোমাদের রাজাকার বলিনি। আমার কথাটা বিকৃত করা হয়েছে। ঐদিনের সম্পূর্ণ ভিডিও তোমাদের দেখার অনুরোধ রইলো।
তোমাদের বিপদগ্রস্ত করে এক দল তার সুবিধা নিয়েছে। তোমরা ঠিকই তা এক দিন অনুধাবন করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
ভাল থেক আমার দেশের মানুষ, ভাল রেখ আমার সোনার বাংলাকে,
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু,
শেখ হাসিনা…’

যদিও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ রিউমর স্ক্যানারের কাছে এটি তাদের পত্রিকায় ছাপা হয়নি বলে অস্বীকার করেছে। তবে, পারিপার্শ্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, এটি ওই পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়েছে।

তবে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এ চিঠি নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।

অন্য দিকে, রোববার (১১ আগস্ট) ভারতের একাধিক সংবাদ মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার পতনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে একটি খবর প্রকাশ করেছে। যেটি শেখ হাসিনার চিঠির বক্তব্য বলে জানানো হয়। পরে এসব গণমাধ্যমের সূত্রে সংবাদটি বাংলাদেশের প্রায় সব গণমাধ্যমই প্রচার করা হয়।

অধিকাংশ গণমাধ্যমই সূত্র হিসেবে ভারতের দ্য প্রিন্ট ও ইকোনমিক টাইমসের সূত্র দিয়েছে৷ তবে, এ দুই গণমাধ্যমসহ ভারতের কোন গণমাধ্যমই কথিত চিঠিটির মূল উৎস সম্পর্কে জানাতে পারেনি।

দ্য প্রিন্ট দাবি করেছে, শনিবার (১০ আগস্ট) এ চিঠি বা বার্তাটি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন। অথচ এর পাঁচ দিন আগে থেকেই কথিত এ বার্তাটি ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে পাওয়া যাচ্ছিল।

রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে ইকোনমিক টাইমস এবং দ্য প্রিন্টের সংশ্লিষ্ট দুই সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এ চিঠির উৎস প্রসঙ্গে। তবে তারা এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি।

একই সময়ে শেখ হাসিনার দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকেও বিষয়টি অবহিত করে সত্যতা জানার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার।