টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ: প্রকৃতি প্রেমী ও ভ্রমণ পিপাসুদের টানছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজরিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর বঙ্গবন্ধু উদ্যান। এখানে প্রকৃতির কোলে রয়েছে ওয়াকওয়ে। নির্মাণ করা হয়েছে বিশ্রামাগার। রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ। পিকনিক করার পাশাপাশি খেলাধূলা ও বেড়ানোসহ অন্য সুযোগ সুবিধা থাকছে এ উদ্যানে। গ্রামীণ পরিবেশ ঠিক রেখে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সৌন্দর্য বর্ধণ করা হয়েছে। এটি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুকতাইল ইউনিয়নের পাইকেরডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত। উদ্যানটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের খুব কাছে। তাই এখানে দর্শনার্থীরা খুব সহজে যাতায়াত করতে পারছেন।
সুকতাইল গ্রামের শাহীন চৌধুরী (৫২) বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান একাধিক বার পাইকেরডাঙ্গার এ মাঠে সভা-সমাবেশ করেছেন। এ মাঠে সরকারী উদ্যোগে ৩০ বছর আগে বৃক্ষ রোপণ করে উদ্যান তৈরি করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের আম্লান স্মৃতি ধরে রাখতে স্থানীরা এ উদ্যানের নাম দেন বঙ্গবন্ধু উদ্যান। জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বঙ্গবন্ধু উদ্যানকে ইকো ট্যুরিজম পার্ক করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি তিন বছর আগে এ উদ্যানে এসে স্থানীয়দের সাথে মত বিনিময় করেন। তারপর এখানে হাটার প্রশস্ত রাস্তা, বিশ্রামগারসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু নির্মাণ করে দিয়েছেন। এখন উদ্যানটি এলাকার মানুষের কাছে পছন্দের একটি স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। এটিকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষের আর্থ সমাজিক অবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।’
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী তাসনুভা শাওরিণ বলে, ‘আমাদের চিত্ত বিনোদনের কোন জায়গা ছিল না। জেলা প্রশাসন গ্রামের মধ্যে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সৌন্দর্য বর্ধণ করে দিয়েছে। এখন এখানে আমরা ঘুরতে আসি। স্বজনদের সাথে সময় কাটাই। এখানে আসলেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের মন ভাল করে দেয়। এখানে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে দর্শনার্থী আরো বৃদ্ধি পাবে।’
গোপীনাথপুর গ্রামের আইনজীবী মোহাম্মদ ফোরকান (৪০) বলেন, ‘উদ্যোগটি অনন্য সাধারণ। বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সবুজ প্রকৃতি খুবই মনোরম। প্রকৃতি প্রেমীও ভ্রমণ পিপাসুদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এটি হবে গোপালগঞ্জের অন্যতম ট্যুরিজম স্পর্ট। এটিকে কেন্দ্র করে পাইকেরডাঙ্গার নাম দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে।’
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের প্রকৌশলী উজ্জ্বল মন্ডল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যানের আয়তন ২৫ একর। জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানার নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন উদ্দীন বঙ্গবন্ধু উদ্যানকে নররূপে সাজিয়েছেন। এটিকে দর্শনার্থী বান্ধব ও ট্যুরিষ্ট স্পর্ট হিসেবে গড়ে তুলতে এখানে পর্যটন করপোরেশনের বরাদ্দকৃত ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই হাজার ৫৫০ ফুট দীর্ঘ হাটার রাস্তা, আটটি বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানর বরাদ্দকৃত আরো ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ওয়াশরুম, দুইটি রান্নাঘর, দুইটি কফিশপ, একটি বাস বে, একটি গোল চক্কর, সার্ভিস এরিয়ার নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করা হবে। এ কাজগুলো শেষ হলে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ট্যুরিজম স্পর্টে পরিণত হবে। দর্শনার্থীরা এখানে এসে এখনই পিকনিক করতে পারছে। এলাকার মানুষ এখানে প্রাতঃভ্রমণসহ শরীর চর্চার সুযোগ পাচ্ছেন। এটিকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন আশার আলো সঞ্চার হয়েছে।’
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ‘গোপালগঞ্জ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমি। এখানে বঙ্গবন্ধুর হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। তাদের গোপালগঞ্জ সম্পর্কে জানান দিতে আমরা এ জেলাকে পর্যটক জোনে পরিণত করতে চাই। এখানে এসে একটি মানুষ যাতে ভালভাবে সময় কাটাতে পারে, আমরা সেই রকম পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে চাই। তারা যেন এটিকে দেখে সারা জীবন মনে রাখতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজরিত বঙ্গবন্ধু উদ্যানের ২৫ একর সরকারি জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছিল। আমরা এটিকে দখল মুক্ত করে তারকাটা দিয়ে ঘিরে দেই। তারপর আমরা সৌন্দর্য বর্ধণের কাজ শুরু করি। দর্শনার্থীদের জন্য এ উদ্যানকে ইতিমধ্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এর আগে থেকেই এখানে দর্শণার্থী সমাগম হয়ে আসছে। এটিকে আমরা পূর্ণাঙ্গ ইকো ট্যুরিজম স্পর্টে পরিণত করব। উদ্যানটি সরকারিভাবে রক্ষাণা-বেক্ষণ করা হবে। চেয়ারম্যান, মেম্বর, গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয়দের সমন্বয়ে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। পর্যটক টানতে সব ধরনের আকর্ষণীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। ট্যুরিজম স্পর্ট জেলার তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এটি জেলার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’