বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

চট্টগ্রামের সৃজনশীল নাট্যচর্চার অগ্রদূত অসীম দাশ

রবিবার, নভেম্বর ২৭, ২০২২

প্রিন্ট করুন

সেলিম ইসলাম খান: শনিবার ২৬ নভেম্বর ছিল নাট্যজন অসীম দাশের ৫৫তম জন্মদিন। অর্থাৎ, ৫৬ বছরে পদার্পণ করলেন তিনি। ১৯৬৬ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার চক্রশালা গ্রামে জন্ম নেন তিনি।

চার দশক ধরে মঞ্চ নাটকের সাথে যুক্ত আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক অসীম দাশ। ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার এ ছাত্র বহু বিশ্বনন্দিত নাটক উপহার দিয়েছেন চট্টগ্রামের দর্শকদের।

চট্টগ্রামের সৃজনশীল নাট্যচর্চার অগ্রদূত অসীম দাশ। ১৯৭৯ সালে ক্লাস এইটে পড়ার সময় নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজীর নির্দেশনায় একটি নাটকে অভিনয় করেন। সেই থেকে নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

তিনি আশির দশকে চট্টগ্রামের সৃজনশীল নাট্যচর্চার প্রাণকেন্দ্র গণায়নের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৮৫-৮৬ সালে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি) থেকে পাস করে আসেন। তারপর নাট্যজন জামিল আহমেদের অধীনে কাজ করার সুযোগ পান। তার কাজের ধরন দেখে মুগ্ধতা জেগেছিল অসীম দাসের। তার অনুপ্রেরণায় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন এনএসডিতে পড়ার। ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করে দুই বছর চাকরিও করেন। কিন্তু নাটকের প্রতি প্রবল টানে তিনি লোভনীয় চাকুরিতে ইস্তফা দেন। ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে তিন দফা পরীক্ষা দিয়ে এনএসডিতে পড়ার জন্য নির্বাচিত হন ও স্কলারশিপ পান। সে সময় তার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অনেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাই ভাবেননি সুযোগ মিলবে। এনএসডিতে নাট্যকলা বিষয়ে সাফল্যের সঙ্গে গ্রাজুয়েশন করেন তিনি।

এরপর ১৯৯৮ সালে দেশে দেশে ফিরে ফের গণায়নে যোগ দেন। তার স্ত্রী তিলোত্তমা সেনগুপ্তা দিল্লির কত্থক কেন্দ্র থেকে একই সময়ে পাস করে দেশে আসেন। ওই বছরের জুলাই মাসে দুজন মিলে সৃজনশীল নাট্যচর্চা কেন্দ্র ‘ফেইম’ প্রতিষ্ঠা করেন।

এনএসডিতে নিভা যোশি, নাসির উদ্দিন শাহ, পঙ্কজ কাপুর, অনুরাধা কাপুরসহ অনেক বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া রতন থিয়াম, হাবিব তানভিরসহ বিশ্ববিখ্যাত বহু নাট্যকার ও অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে।

এ পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠিত ফেইম দেশে ও দেশের বাইরে বেশ কয়টি নাটক মঞ্চস্থ করেছে। ২৩টি নাটকের প্রায় ৮০০টি মঞ্চায়ন করেছে ফেইম। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উৎসব ছাড়া এনএসডি ও ভারত সরকার আয়োজিত ‘রঙ মহোৎসবে’ তিনবার অংশ নিয়েছে ফেইম। ভারতের দিল্লি, জয়পুর, ভুপাল, কলকাতা ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনেও ফেইম নাটক মঞ্চায়ন করেছে।

অসীম দাশ সব সময় বড় মাপের কাজ করতে চান। এ জন্য ক্ল্যাসিকের দিকে ঝোঁক। সফোক্লিস, মলিয়ের, ইবসেনের নাটক নিয়ে কাজ করছেন। তার মতে, চট্টগ্রামের নাট্যকারেরা কলম গুটিয়ে নিয়েছেন। ঢাকার কেউ আমাদের নাটক দেবেন না। ক্ল্যাসিক ছাড়া আমাদের উপায়ই–বা কী? তা ছাড়া এখানকার দর্শকেরা অন্তত বিশ্বনাটকের স্বাদ নিতে পারছেন। ভাঙচুর বা বিনির্মাণের জন্য এখনো আমাদের দর্শক তৈরি হয়
নি।

অসীম দাশ মনে করেন, ফেইম অন্তত এক দল দক্ষ নাট্যকর্মী তৈরি করছে। এদের সবাই তরুণ ও সম্ভাবনাময়। নাটক নিয়ে বহুদূর যেতে চান তিনি। তার স্বপ্ন রেপারটারি থিয়েটার, অর্থাৎ পেশাদার নাট্যদল গড়ে তোলা। সেটা হলে অভিনেতারা থিয়েটারকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারবেন।

লেখক: কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, মিরসরাই, চট্টগ্রাম