আবছার উদ্দিন অলি: ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে চট্টগ্রামে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। বাংলা নববর্ষ ও ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে মনলোভা কেনাকাটায় ঈদ বাজার। সিটির আখতারুজ্জামান সেন্টার, নিউ মার্কেট, মিমি সুপার মার্কেট, ফিনলে স্কয়ার, বে শপিং সেন্টার, সানমার, আমিন সেন্টার, রেয়াজউদ্দীন বাজার, তামাকুন্ডী লেইন, জহুর হকার মার্কেট, লাকি প্লাজা, ব্যাংকক মার্কেট, সেন্ট্রাল প্লাজা, আফমি প্লাজা, টেরিবাজার, ভিআইপি টাওয়ারসহ সব ছোট-বড় মার্কেটে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। এছাড়াও, জিইসি কনভেনশন হল, আন্দরকিল্লাহ চসিক মাঠ, জেমসেন হল এলাকায় ঈদ উপলক্ষে ঈদ বস্ত্র মেলা চলছে। নারী উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টায় বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার এ ঈদ মেলা চলছে। দেশীয় বুটিকস হাউজগুলো ঈদ উপলক্ষে ভাল ভাল কালেকশন এনেছে। সাথে চলছে অনলাইন কেনাকাটা। তবে, এ ক্ষেত্রে প্রতারণার কারণে মানুষের আস্থা কমছে। করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছর ঈদের আনন্দ ছিল না বললেই চলে। বিধি-নিষেধের কারণে কেনা-কাটা আর ঘুরাফেরা, ঈদ আনন্দ সবকিছুই ছিল সীমিত পরিসরে।
আখতারুজ্জামান সেন্টারে বিক্রেতা আহাদ উল্লাহ বলেন, ‘১৫ রমজানের পর বিক্রি আরো বাড়বে।’
বছর ঘুরে ফের এসেছে রমজান। এরপর দেখতে দেখতেই চলে আসবে আমাদের মুসলমানদের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিনটি। ঈদুল ফিতর। এ দিনটি নিয়ে আমাদের উৎসাহের শেষ নেই। নিজেকে এ দিনে আকর্ষণীয় করতে সবার প্রচেষ্টা থাকে। নিজেকে আরো সুন্দর আর ফ্যাশনেবেল করতে এ দিনের জন্য আমরা কত কি যে কিনি, তার ইয়ত্তা নেই। সবচেয়ে আগে যে জিনিসটা প্রাধান্য পায়, তা হল জামাকাপড়। ফ্যাশন এমন একটি জিনিস যা সময়ের সাথে বদলায়। এ ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সে ইতিমধ্যেই অনেক ভিড় লেগে গেছে। সবাই ঘুরে ঘুরে তার পছন্দের কাপড়টি, জুতা বা অন্যান্য একসেসরিস কিনতে ব্যস্ত। তবে, নির্দিষ্ট কোন ফ্যাশন আবদ্ধ থাকে না ঈদে। যার যার রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী ড্রেসটি সবাই কিনে থাকেন। ঈদের ফ্যাশন নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করে থাকে দেশী বুটিক হাউসগুলো।
নারী উদ্যোক্তা-জাকিয়া জাহান নিপু বলেন, ‘শাড়ীতে বাংলার নারীদের সবচেয়ে বেশি মানায়। ঈদ উপলক্ষে অনেকেই একটু দামী শাড়ী কিনে থাকেন। শাড়ীর মধ্যে তাঁতের শাড়ী, সুতির শাড়ীতে ব্লক বা কাজ, কোটা, শিফন চলছে বর্তমানে। এছাড়া, কাতান, জুট কাতান, সিল্ক, হাফসিল্ক শাড়ীও পছন্দ করছেন ক্রেতারা। টাঙ্গাইল সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, জামদানী বরাবরের মত এবারেও চলছে। তবে, সুতির শাড়ীর উপর এমব্রয়ডারি বা পাড় লেস বা চুমকি, পুঁতি, হাতের কাজ করা চলছে বেশ গরমের জন্য। শাড়ী কিনতে দেশী বুটিক হাউসগুলোই বেশি পছন্দের সবার। তারপরও যদি চান অন্যান্য মার্কেট ঘুরেও আসতে পারেন বা নিজেরাই গজ কাপড় যেমন জর্জেট এর কাপড় কিনে লেইস লাগিয়ে পছন্দ অনুযায়ী শাড়ী বানাতে পারেন ঈদ উপলক্ষে। ব্লাউজের কাটে এসেছে বৈচিত্র্য।
মডেল সাবরিনা সাবা বলেন, ‘আমাদের দেশে মেয়েদের পোশাক বলতে মুলত থ্রি পিসকেই বোঝায়। অল্প বয়সী মেয়েরা ছাড়াও এখন একটু বয়স্ক মহিলারাও এটা পড়ে থাকেন। তাই, বিভিন্ন বুটিক হাউসগুলো তাদের শো রুমে নতুন নতুন ফ্যাশন ও রঙের থ্রি পিস এনেছে। যেমন- নগরদোলা, নবরুপা, আড়ং, ক্রে ক্রাফট, শৈল্পিক , সাদাকালো, দেশাল, চৈতি, রাংতা ও দেশী দশের বুটিক হাউসগুলো। যদি, একটু আলাদা কাপড় পরতে চান, তাহলে এসব ফ্যাশন হাউজে আসতে পারেন। এছাড়া, আরামদায়ক ও বিশেষ করে এর রঙ্গ, ডিজাইনের জন্য লনের থ্রি পিস খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সুতির পাশাপাশি জর্জেট কাপড় চলছে। থ্রি পিসের জামার কাট লং ঝুল কামিজের সাথে এবার শর্ট কামিজও চলছে। ফিটেড বা ঢিলেঢালা দুইটিই চলছে। রঙ্গের ক্ষেত্রে নীল, লাল, কালো, সবুজ, বেগুনি, সাদা ছাড়াও অন্যান্য অনেক রঙ প্রাধান্য পেয়েছে। পায়জামার জন্য চুড়িদার, সোজা কাট সালোয়ার ও লেগিংস এখন মেয়েদের বেশি পছন্দের তালিকায় আছে। থ্রি কোয়াটার, ফুল হাতা বেশি চলছে এখন। অনেকে চাইলে পছন্দমত কাপড় কিনে কামিজ বানাতে পারেন নিজস্ব ডিজাইনে। এতে এমব্রয়ডারি বা হাতের কাজ করে নিতে পারেন। তবে, সে ক্ষেত্রে এখনই তা করে নিতে হবে। কেননা এর জন্য বেশ সময় লাগবে।
আলমগীর সিকদার বলেন, ‘বর্তমানে ফতুয়া ও টপস তরুণ মেয়েদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এটি ফেশনেবল ও আরামদায়ক। এ কথা মাথায় রেখে দেশী বুটিক হাউসগুলো বেশ কিছু ডিজাইনের ফতুয়া রেখেছে তাদের শোরুমে। এছাড়া, বিভিন্ন মার্কেটেও পছন্দ অনুযায়ী ও ফ্যাশনাবেল ফতুয়া ও টপসটি বেঁছে নিন। সাথে জিন্সের প্যান্টটিও কিনতে ভুলবেন না। জিনস আর টপস কেনার জন্য ইয়োলো, একসট্যাসি, বা অন্যান্য নামকরা ব্র্যান্ডের দোকানে ঢু মারতে পারেন।’
জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘শুধু আনন্দ করলেই তো হবে না। অন্যকেও এ আনন্দে শামিল করতে হবে। জাকাতের কাপড় পেতে পারেন চট্টগ্রামের সব মার্কেটে। এখানে সুলভমূল্যে কাপড় পাওয়া যায়।’
এ তো গেল আপনার শপিং। এখনি বেড়িয়ে পড়ুন। কেন না খুঁজতে খুঁজতে অনেক সময় লাগে। আর দর্জি ওয়ালারাও পরে সহজে অর্ডার নিতে চায় না। নিজের জন্য কিনুন। পারলে অন্যকে গিফট দিন। ঈদটি যেন সুন্দর হয় আমাদের সকলের জন্য।