চট্টগ্রাম: মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণের জন্য একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সিটির এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে চসিক আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনকালে মেয়র এ কথা জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, ‘একাত্তরে যে চেতনার ভিত্তিতে শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পুরো জাতি এক হয়ে লড়েছিল, সে চেতনার ধারা আজ দুর্বল হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর অকাল প্রয়ানের পর স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ক্ষমতা দখল করে জনগণ বিশেষ করে শিশুদের মগজধোলাই করে তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। বইমেলার মাধ্যমে মিথ্যার প্রাসাদ ভেঙ্গে জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনর্জাগরিত করতে হবে। বইমেলার প্রতিটি বই হয়ে উঠুক মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অস্ত্র, লড়ুক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
রেজাউল করিম আরো বলেন, ‘‘ভাষা আন্দেলনের তাৎপর্য থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধের পরিকল্পনা সমস্তটাকেই জনগণের কাছে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেছে বই। এ জন্য চট্টগ্রামবাসীর হাতে-হাতে বই তুলে দিতে এ বইমেলার আয়োজন। ব্যবসায়ীদের আহবান জানাচ্ছি, যারা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলা ব্যবহার করছেন না, তারা সাইনবোর্ডে বাংলা ব্যবহার করুন। চট্টগ্রামবাসীকে আহাবন জানাচ্ছি, আপনারা মেলায় আসুন, নতুন প্রজন্মের হাতে মোবাইল নয়, বরং বই তুলে দিন।’
প্রধান বক্তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য প্রফেসর শিরীণ আখতার বলেন, ‘রাষ্ট্রের উন্নয়নে চাই শিক্ষার উন্নয়নে। আর, ভাল মানের বই ছাড়া ভাল শিক্ষা ব্যবস্থা গড়া সম্ভব নয়। এ বইমেলা চট্টগ্রামের হাজারো বইপ্রেমীর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে, যা আমাদের একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে সাহস যোগাবে।’
সভাপতির বক্তব্যে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বই বর্তমানের সাথে অতীত আর ভবিষ্যৎের মধ্যে ব্রীজের কাজ করে। ভাষার মাসের এ বইমেলার আয়োজন সংশ্লিষষ্ট সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাই।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহ্উদ্দিন মো. রেজা, বই মেলার আহবায়ক কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ (মঞ্জু), কাউন্সিলর গাজী মো. শফিউল আজিম, হাসান মুরাদ বিপ্লব, নাজমুল হক ডিউক, আবদুস সালাম মাসুম, মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, সংরক্ষিত কাউন্সিলর তছলিমা বেগম নুরজাহান, রুমকি সেনগুপ্ত, চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন, উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী (টিপু), নির্বাহী প্রকৌশলী মীর্জা ফজলুল কাদের, জনসংযোগ ও প্রটোকল কর্মকর্তা আজিজ আহমদ, সিবিএ সভাপতি ফরিদ আহমদ, সিনিয়র সহ সভাপতি জাহিদুল আলম চৌধুরীযুগ্মসাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার চৌধুরী প্রমুখ।
এবারের মেলার অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে নজরুল দিবস, মাতৃভাষা দিবস-২১ ফেব্রুয়ারি, লোক উৎসব, রবীন্দ্র উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।
মেলা প্রতিদিন বিকাল তিনটা থেকে রাত নয়টা ও ছুটির দিন সকাল দশটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দেশের খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিরা প্রতিদিনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেবেন।