/ 
প্রিন্ট করুন
চট্টগ্রাম: বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ, নানা আনুষ্ঠানিকতা ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের গৌরবদীপ্ত ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্যারেডের অভিবাদন গ্রহণ করেন ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আগত সকলের উদ্দেশ্যে দরবার নেন।
প্রধানমন্ত্রী ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স¥রণ করেন; যার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। আরো স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, ভাষা শহিদ, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ ও দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে।
তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্ম। শেখ মুজিব একটি পেশাদার, প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে প্রয়াসী হন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে বর্তমান সরকার প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছে। এ লক্ষ্যে ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাহিনীগুলোর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে।
স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ রেজিমেন্টের সাথে রয়েছে আমার আত্মিক ও পারিবারিক সম্পর্ক। আমার দুই ভাই প্রয়াত ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও প্রয়াত লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল এ রেজিমেন্টের অফিসার ছিলেন। প্রয়াত ক্যাপ্টেন কামাল সিনিয়র টাইগার্স (এক ইস্ট বেঙ্গল) ও প্রয়াত লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল জুনিয়র টাইগার্সে (দুই ইস্ট বেঙ্গল) কর্মরত ছিলেন। ‘সৌম্য, শক্তি, ক্ষিপ্রতা’- এ মূলমন্ত্রে দীক্ষিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময় ও ঐতিহ্যপূর্ণ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঐতিহ্যবাহী এ রেজিমেন্টের ইতিহাস আমাদের সেনাবাহিনীর চেয়েও পুরোনো, যার সূচনা ব্রিটিশ উপনিবেশিক যুগে।’
এ সময় তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আনন্দ ও উৎসবমুখর পুনর্মিলনীতে আগত অবসরপ্রাপ্ত ও চাকুরিরত সদস্যদের মাঝে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ আরো সুদৃঢ় করবে বলে প্রত্যাশা করেন।
প্রধানমন্ত্রী দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের গর্বিত সদস্য ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ইতিহাস সম্বলিত কর্ণার পরিদর্শন ও ঐতিহাসিক ব্রতচারী নৃত্য উপভোগ করেন। এ ছাড়াও, দশম টাইগার্স পুনর্মিলনীতে উপস্থিত সব সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের সাথে প্রীতিভোজে অংশ নেন। দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড্যান্ট ও পাপা টাইগার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীকে কর্ণেল অব দি রেজিমেন্ট ও শার্দূল পরিবারের পক্ষ হতে ধন্যবাদ স্মারক প্রদান ও শহিদ পরিবারের সদস্য হিসেবে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুই দিন ব্যাপী দশম টাইগার্স পুনর্মিলনী ও দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্লাটিনাম জুবিলী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান ও কর্নেল অব দি রেজিমেন্ট জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ। প্রথম দিন (১৫ ফেব্রুয়ারি) দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রাক্তন ও বর্তমান সামরিক সদস্যদের উপস্থিতে অনাড়ম্বর এ অনুষ্ঠান চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অবস্থিত ইবিআরসি প্রাঙ্গণ পরিণত হয়েছিল এক মহা মিলনমেলায়।
প্রধান অতিথি ইবিআরসির এমআর চৌধুরী প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ; জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি), আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার চট্টগ্রাম এরিয়া মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম তাকে অভ্যর্থনা জানান। এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দ, উচ্চ পদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ ও মিডিয়া ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
