ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র এক মাস বাকি। এর মধ্য দিয়ে আধুনিক যুগের সবচেয়ে নাটকীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত মাসের লড়াইয়ে ঢুকেছেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। উভয় প্রার্থীই সতর্ক করে বলেছেন, ‘বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের জাতির ভাগ্য নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলের ওপর ঝুলে আছে। খবর এএফপির।
হলিউডের যে কোন ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রে চেয়েও বেশি পটপরিবর্তন দেখা গেছে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যাওয়া, কমলা হ্যারিসের ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়ন পাওয়া ও দুই বার হত্যাচেষ্টা থেকে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষা পাওয়া এর মধ্যে অন্যতম।
৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প ও ৫৯ বছর বয়সী কমলার মধ্যে কোন একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বরণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রেও নাগরিকরা। তবে, ট্রাম্প নির্বাচনে না জিতলে ২০২০ সালের মত বিশৃঙ্খলার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্য দিকে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা ঘনিয়ে আসছে ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের ওপর রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের টিকে থাকার লড়াই নির্ভর করছে, তখন হোয়াইট হাউসে কে আসীন হচ্ছেন, তা দেখার অপেক্ষায় আছে পুরো পৃথিবী।
তবে, একটা ব্যাপার পুরোপুরি নিশ্চিত যে, কমলা ও ট্রাম্প তাদের রানিংমেট (ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী) টিম ওয়ালজ ও জেডি ভ্যান্সকে নিয়ে আগামী চার সপ্তাহ নিরলস প্রচারণা চালাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকটোরাল কলেজ সিস্টেমের কারণে মূলত সাতটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের ভোটাররাই নির্ধারণ করবে ট্রাম্প ও কমলার ভাগ্য। নানা জনমত জরিপে কমলা ও ট্রাম্পের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলেছে।
তা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ ভিন্ন দুইটি দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে মার্কিনীদের। ‘আমরা পেছনে ফিরে যাব না’- এ স্লোগানের মধ্য দিয়ে বিভাজনের রাজনৈতিক প্রথার ইতি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কমলা। অন্য দিকে, যুক্তরাষ্ট্রের হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। বৈষম্যে জর্জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের জাতিকে একমাত্র তিনিই উদ্ধার করতে পারবেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে তার কথায়।
কমলা এমন একজন প্রার্থী, যিনি ‘বাধার দেয়াল’ ভেঙে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দক্ষিণ এশীয় কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ও গর্ভপাতের অধিকারের মত স্পর্শকাতর ব্যাপারে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, তার স্বভাব ও নীতি এখনো বহু ভোটারের কাছে অজানা।
অন্য দিকে, ট্রাম্প ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, যিনি প্রতিদ্বন্দ্বীকে কঠোর ব্যক্তিগত আক্রমণের পন্থা বেছে নিয়েছেন এবং দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করার ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জেলে ভরার অঙ্গীকার করেছেন।
সর্বোপরি অভিবাসনের মত বিস্ফোরক ইস্যু তাকে নির্বাচনে জেতাতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন ট্রাম্প। এ কারণে ক্রমাগত অভিবাসীদের প্রতি বিষোদগার করে চলেছেন তিনি। এমনকি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মার্কিনীদের রক্ত ‘দূষিত’ করার অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক পিটার লজ বলেন, ‘এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। উভয় প্রার্থীই জেতার জন্য মরিয়া হয়ে আছেন।’