দ্য হেগ, নেদারল্যান্ড: ইসরায়েল ও দক্ষিণ আফ্রিকা বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) থেকে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে মুখোমুখি হচ্ছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ‘গণহত্যার অপরাধে’ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে, ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ৮৪ পৃষ্ঠার আবেদনে গাজায় দ্রুত সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। প্রেটোরিয়া শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) ওই আদালতে করা মামলার আবেদনে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যামূলক’ বলে উল্লেখ করেছে। কারণ, ইসরায়েল উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, জাতিগত ও জাতিগোষ্ঠী ধ্বংস করছে।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের খুনসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে তোলা হয়েছে বলেও মামলার আবেদনে বলা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গাজা ও দখল করা পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কর্মকান্ডকে তার দেশে ১৯৯৪ সালে অবসান হওয়া শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুর বর্ণবাদ শাসনের জাতিগত বিভাজনের সাথে তুলনা করেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার ভাষ্য, ইসরায়েলের আচরণ, বিশেষ করে গেল ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করে দেশটি। এ জন্য দ্রুত শুনানির আহ্বান জানানো হয়েছে। মামলার আবেদনে কনভেনশনের অধীনে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা, গুরুতর ও অপূরণীয় ক্ষতি থেকে রক্ষা করে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আদালতের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ দিকে, ক্ষুব্ধ ইসরাইল দক্ষিণ আফ্রিকার এ অভিযোগ দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ইলন লেভি দক্ষিণ আফ্রিকার করা এ মামলার বিরুদ্ধে লড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ অভিযোগকে অযৌক্তিক বলে বর্ণনা করেছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দক্ষিণ আফ্রিকাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘না, আমরা না, নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে হামাস।’
এ প্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডের হেগের পিস প্যালেসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের গ্রেট হল জাস্টিসে উভয় দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা মুখোমুখি হচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, যেটিকে বিশ্ব আদালতও বলা হয়। এটি একটি জাতিসংঘের দেওয়ানি আদালত। যা দেশগুলোর মধ্যে বিরোধের বিচার করে। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে আলাদা, যা যুদ্ধাপরাধের জন্য ব্যক্তিদের বিচার করে থাকে। জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েল উভয় দেশ এই আদালতের আওতাধীন।
বলে রাখা ভাল, গেল ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের সংগঠন হামাস ইসরায়েলে আচমকা বড় রকমের হামলা চালানোর পর ইসরায়েল গাজায় পাল্টা নির্বিচারে হামলা শুরু করে ও হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেছে। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২২ হাজার ৭২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।