কানসাস, যুক্তরাষ্ট্র: ২০১৫ সালে প্রেমিকের সাথে মিলে নিজের মাকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল জিপসি রোজ ব্লানচার্ডকে। সেই বছর এটি সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল। সম্প্রতি প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন জিপসি। তার সাজা এখনো বাকী আছে। তবে, জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়টা কাটিয়েছেন কারাগারে। আর তাকে সেই কঠিন সময় পাড়ি দিতে সাহায্য করেছেন পপকুইন টেলর সুইফট! হ্যাঁ, টেলর সুইফটের গানই তাকে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। প্যারোলে বের হয়ে এমনটাই জানালেন জিপসি রোজ ব্লানচার্ড। খবর টিএমজেডেরর।
জিপসি রোজ ব্লানচার্ড একজন সুইফটি (টেলর সুইফটের অনুরাগীদের সুইফটি বলা হয়)। জিপসি, যিনি ২০১৫ সালে প্রেমিকের সাথে মিলে নিজের মাকে খুন করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। মুক্তির পর জিপসি বলেছেন, ‘টেলর সুইফটের গান তাকে তার ‘স্বাধীনতা’ অর্জনের জন্য অত্যন্ত অনুপ্রাণিত করেছিল।’
জিপসি তার পিতার পাঠানো টাকা দিয়ে কারাগারে টেলরের অ্যালবামগুলি কিনেছিলেন। টেলরের প্রতিটি অ্যালবাম কিনে তার গান শুনেছেন জিপসি।
যা তাকে নতুন করে অনুপ্রেরণা দিয়েছে বাঁচার, মুক্তির।
টিএমজেডের সাথে কথোপকথনে জিপসে বলেছেন, ‘৭ বছর কারাগারে থাকার সময় টেলর সুইফটের সংগীত তাকে তার জীবনের সেরা মুহূর্ত উপহার দিয়েছে; যখন তিনি খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার মা ডি ডির হাতে তিনি যে দুর্ব্যবহার এবং ট্রমা সহ্য করেছিলেন ও জেলের ভেতরে যে কঠিন সময় কাটাতে হয়েছিল তাকে, সেই মুহূর্তে টেলরের গানগুলিই তাকে সাহায্য করেছে।
জিপসি রোজ ব্লানচার্ড আশা করছেন, রোববারের (৩১ ডিসেম্বর) কানসাস সিটি চিফস গেমে তিনি তার আইডল টেলরের সাথে দেখা করতে পারবেন কারণ, তার স্বামী রায়ান অ্যান্ডারসন এরমধ্যে টিকিট কিনেছেন।
জিপসির ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে যে, জিপসি টেলরকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন, খেলা থাকাকালীন টেলর এটি দেখতে পাবেন এই প্রত্যাশায়।’
জিপসির জীবন কাহিনী নিয়ে এর পূর্বে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এবার টিভির পর্দায় আসতে চলেছে তার গল্প। জিপসি ও তার পরিবারকে নিয়ে একটি নতুন ডকুমেন্টারি সিরিজ নির্মিত হচ্ছে। আসন্ন ডকু সিরিজ ‘দ্য প্রিজন কনফেশনস’-এ নিজের গল্প বলার জন্য প্রস্তুত জিপসি রোজ ব্লানচার্ড। ৩২ বছর বয়সী এই নারী ২০১৫ সালে তার মা ক্লাউডিন ওরফে ডি ডিকে হত্যায় তৎকালীন প্রেমিক নিক গোডেজোনের সাথে ষড়যন্ত্র করার জন্য তার প্রাপ্ত সাজার ৮৫ শতাংশ এরমধ্যে ভোগ করেছেন।
২০১৫ সালে তুমুল আলোচনায় উঠে আসা এই হত্যা মামলায় দণ্ড দেয়ার সময় সরকারি উকিল ড্যান প্যাটারসন আসামির (জিপসি) প্রতি দয়া প্রদর্শনের আহ্বান জানান। বিচারক জিপসিকে ‘সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডার’-এর দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন, যা পূর্বপরিকল্পনার অনুপস্থিতিতে হত্যাকান্ড বোঝায়। যদিও ড্যান প্যাটারসনের কাছে তথ্য প্রমাণ ছিল যে, জিপসি আর তার বন্ধু ছক কষেই পুরো ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তারপরও এই কেসের অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনি ‘ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডার’ বা ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুনের অভিযোগ আনা থেকে বিরত থাকেন। এই দোষে দোষী হলে চূড়ান্ত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, অন্তত কম করে হলেও প্যারোলের সুযোগ ছাড়া যাবজ্জীবন। তবে, ড্যান প্যাটারসন সাংবাদিকদের জানান- তিনি মনে করেন না এই শাস্তি আসামীর প্রাপ্য।
কিন্তু কেন? নিজের মাকে চিন্তা-ভাবনা করে খুনের পরেও আসামির প্রতি সরকারি উকিল সহানুভূতি প্রকাশ করছেন! এমনকি সংবাদপত্র থেকে জনতা সবার সমর্থনই জিপসির দিকে। এমনকি জিপসির মাতার পরিবারও জিপসির পক্ষে। তার নানা বলেছেন, তার মেয়ে (জিপসির মা) উচিত শাস্তিই পেয়েছে।’
জিপসির পিতা রড আর সৎ মা ক্রিস্টিও সব সময় মেয়ের পাশেই আছেন। কিন্তু কেন জিপসির প্রতি এত সহানুভূতি? কারণ, জিপসির মা বিরল এক রোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে, যার নাম ‘মাঞ্চুসেন সিনড্রোম বাই প্রক্সি’। এটি শারীরিক বা মানসিক সমস্যার মিথ্যা লক্ষণ সৃষ্টি করার মত এক ধরনের রোগ। যার ফলে প্রায়ই জিপসিকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করত তার মা। অবশেষে বন্ধুর সাথে মিলে মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জিপসি।