বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ঢাকার উত্তরায় এএসপির সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর বাড়ি দখল আওয়ামী লীগ নেতার

সোমবার, অক্টোবর ১৪, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটির উত্তরাতে পুলিশের এক এএসপির সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শেখ নুরুর রহমানের বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মো. সোহেল রেজা ওরফে ইদন নামের আওয়ামী লীগের এক নেতা ২০২২ সালে দলবল নিয়ে জোর করে ওই প্রবাসীর বাড়িটি দখল নিয়ে প্রতি মাসে ৮৫ হাজার টাকা ভাড়া তুলে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় থানায় একাধিক বার অভিযোগ করে কোন সমাধান পাননি নুরুর রহমান। সোহেল রেজা আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় সরকারের গোটা প্রশাসন ছিল তার পক্ষে। ফলে, আদালতে মামলা করে নিজের পক্ষে রায় পেলেও বাড়ির দখল পেতে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা পাননি ভুক্তভোগী।

নুরুর রহমানের অভিযোগ, সোহেল রেজা তার বোনের স্বামী এএসপি বাহাউদ্দিন ভূইয়ার ছত্রছায়ায় বাড়িটি দখল নিয়েছেন। ফলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর অবৈধভাবে ভাড়া তুলে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করায় শেখ নুরুর রহমানের স্বজনদের খুনের হুমকিও দেয়া হয়েছে।

রোববার (১৩ অক্টেবর) দুপুরে সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন শেখ নুরুর রহমান। তার পক্ষে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করেন অ্যাডভোকেট তানজিল আহমেদ সানি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন শেখ নুরুর রহমান।

নুরুর অভিযোগ করে বলেন, আমি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আমি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছি। গেল দুই বছর ধরে দক্ষিণখান থানাধীন আশকোনা হজক্যাম্প রোড সংলগ্ন আমার বাড়িটি দখল করে নিয়েছে ‘সন্ত্রাসী’ সোহেল রেজা। বাড়িটির আমার বোনের অংশ ‘সন্ত্রাসী’ সোহেলের কাছে বিক্রি করে। কিন্তু, সোহেল আমার ভাই সবুজকে জোর করে সাদা কাগজে সই নিয়ে গোটা বাড়িই দখল নিয়েছে। সোহেলকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছে তার দুলাভাই এএসপি বাহাউদ্দিন ভূইয়া। ফলে, বিচার চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে শেখ নুরুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি নিরুপায় হয়ে আমার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি ফিরে পেতে আপনাদের সহায়তা চাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তানজিল আহমেদ সানি বলেন, ‘ঢাকার দক্ষিণখান থানাধীন সাং- ৪০৪ (নতুন), ২৬ (পুরাতন) আশকোনা হজ্জক্যাম্প রোড সংলগ্ন একটি বাড়ির মালিক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শেখ নুরুর রহমান। বাড়িটি তিনি ও তার বোন দীর্ঘ দিন ধরে ভোগ দখল করে আসছিলেন। কয়েক বছর পূর্বে তার বোনের অংশের সম্পত্তি মো. সোহেল রেজা (ইদন) নামে একজনের কাছে বিক্রি করেন। সোহেল রেজা নুরুর রহমানের বোনের অংশের সম্পত্তি কিনে সুকৌশলে গোটা সম্পত্তি দখল করেন। পরে নুরুর রহমানের বাড়ির অংশের ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে ভাড়া তুলে আত্মসাৎ করছেন সোহেল।’

তিনি আরো বলেন, ‘নুরুর রহমান দেশের বাইরে থাকায় তার মালিকানাধীন বাড়িতে বর্তমানে তার ছোট ভাই এহছানুর রহমান সবুজ থাকেন। সোহেল রেজা বিভিন্ন সময় এহছানুর রহমান সবুজকেও হুমকি দিয়ে আসছেন। ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর সোহেল রেজা তার লোকজন নিয়ে বাড়ির নিচ তলায় থাকা জমজম হোটেলের মালিককে মারধর করে এবং তাদের ভাড়া নেয়া ফ্ল্যাট থেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বের করে দেয়। এ ব্যাপারে এহছানুর রহমান সবুজ প্রতিবাদ করলে সোহেল রেজা তাকে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এর প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণখান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয় যার। এতে সোহেল রেজা ক্ষিপ্ত হয়ে ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি এহছানুর রহমান সবুজকে অপহরণ করে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এবং একটি সাদা কাগজে সই নিয়ে নেয়। এ ঘটনার পর ২০২৩ সালের ১৯ মে থানায় জিডি করা হয় যার। এ সোহেল রেজার হাত আইনের থেকে এতই লম্বা হয়ে গেছে যে, এত বার আইনের আশ্রয় নিয়েও কোন সমাধান করা যায়নি।’

তানজিল আহমেদ সানি আরো বলেন, ‘২০২২ সাল থেকে অনেক বার আইনের আশ্রয় নিয়েও কোন সুফল পাইনি। তার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সোহেল রেজার বোনের স্বামী এএসপি বাহাউদ্দিন ভূইয়া। তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। যখনই আইনের সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে, তখনই তিনি (এএসপি বাহাউদ্দিন) পুলিশের প্রভাব খাটিয়ে আইনের সাহায্য নিতে দেয়নি। বরং, বার বার সোহেল রেজাকে কোন না কোনভাবে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এ সোহেল রেজা বিগত ফ্যাসিবাদ সরকারের প্রভাব খাটিয়েছে। থানা পুলিশের কাছে কোন সহায়তা না পেয়ে পরর্তী ঢাকার সিএমএম আদালতের স্মরণাপন্ন হন ভুক্তভোগী নুরুর রহমান। তিনি একটি মামলা দায়ের করেছেন। বর্তমানে ওই মামলায় সোহেল ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ সোহেল ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। গেল ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বহু ছাত্র আহত ও নিহতের দায়ে খুনের মামলার আসামি। এত কিছুর পরেও সোহেল তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে।’