ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করার চেষ্টা করবেন না, আর করতেও দেয়া হবে না। এ দেশের মানুষ তা করতে দেবে না। আজকে শুধু আমরা নই, আন্তর্জাতিক মন্ডলও বলছে, এর আগের আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়নি। এবারো যদি সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হয়, সেটি তারা গ্রহণ করবে না। আমরা সব শক্তিকে একত্র করে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে এ সরকারকে পদত্যাগ করতে এবং নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বাধ্য করব।’
বুধবার (১৬ আগস্ট) পৌর শহরের মির্জা রুহুল আমিন মিলনায়তনে জেলা বিএনপি আয়োজিত খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন, ‘১৯৮১ সালে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান বিরোধী শক্তির হাতে নির্মমভাবে খুন হন। তার পরে অনেকেই ভেবেছিলেন, বিএনপি নিশ্চিন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু, জিয়াউর রহমানের যে রাজনীতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের যে দর্শন, তা ধারন করে এবং কোটি কোটি মানুষের আহবানে এই স্বাধীনতার পতাকা, সার্বভৌত্বের পতাকা, জাতীয়তাবাদের পতাকা, সর্বোপরী গণতন্ত্রের পতাকাকে হাতে তুলে নিয়ে সে দিন সৈরাচারের অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে বিরূপ প্রতিকুল অবস্থার মধ্য দিয়েও তিনি দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, হাল ধরেছেন এবং সকলকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের মাঠে, ঘাটে, প্রান্তরে গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন খালেদা জিয়া। এই সংগ্রামের মধ্যে তিনি বার বার জেলে গেছেন। তাও তিনি কখনো মাথা নত করেননি। আপোষহীন নেতৃত্বে জনগণের মধ্যে থেকে পথে থেকে তিনি এ সংগ্রামকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে ১৯৯০ সালে তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছিল। এরশাদ সরকার বাধ্য হয়েছিল ক্ষমতা থেকে বিদায় হতে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালেও খালেদা জিয়া দুই শিশু সন্তানকে সাথে নিয়ে তাদের হাত ধরে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট থেকে ঢাকায় আসেন। সেখানে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে থেকে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। দীর্ঘ নয় মাস সেখানে কারাবরণ করেন। এই মহিয়সী মহিলা কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন না, তিনি গৃহবধু ছিলেন। যে দিন জিয়াউর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, সেই দিন থেকে সেই গৃহবধুর মধ্যে, সেই রক্তের মধ্যে আগুনের লেলীহান শিখা জাগ্রত হল। বাংলাদেশকে একটা ঐক্যবদ্ধ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। সেই দিনই তিনি সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। দীর্ঘ নয় বছর সংগ্রামের পরই তিনি সফল হয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই তখন জাতীয়বাদের সরকার গঠন করেছিল। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি দশটিও আসন পাবে না- এমন কথা আওয়ামী লীগ বললেও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করেছিল। তিনি ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মৌলিক পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি সকলের মতামতের ভিত্তিতে এমনকি আওয়ামী লীগের মতামতের ভিত্তিতে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেন।’
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘বর্তমানে দেশের কি পরিস্থিতি, তা আপনারা জানেন। বিরোধী দলের কোন নেতা-কর্মী ও তাদের সন্তানদের চাকুরি হয় না। তারেক রহমানকে আজ সরকার ভয় পায়। তিনি আজ গণতন্ত্রের আন্দোলনকে অগ্রণী করছেন। পরিস্কার করে সরকারকে বলতে চাই, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করেন, উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। অন্যথায়, এ দেশের মানুষ যখন জেগে উঠেছে, তারা মহাসমাবেশ করছে, ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আপনাদের জানিয়ে দিয়েছে, নো, আপনারা আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।’
দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর করিম, আল মামুন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. পয়গাম আলী, আনসারুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. জাফরুল্লাহ, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবু হোসেন তুহিন।