ঢাকা: ‘পৃথিবীর অন্যতম সবজি ও ফলমূল উৎপাদনকারী দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী প্রয়োজনের তুলনায় কম তাজা-ফল ও শাক সবজি খাচ্ছে। এ বাস্তবতায় বাংলাদেশে মানুষের মাঝে ফল ও সবজি কম গ্রহণের প্রবণতা একটি বিস্ময়ের বিষয়। গবেষণায় দেখা যায়, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে উৎসাহী করতে কর হ্রাস ও ভর্তুকী প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভর্তুকী মূলত সরাসরি ও পরোক্ষ- এ দুইভাবে দেয়াযেতে পারে। তবে কর ও ভর্তুকী দেয়ার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব না হলে সুবিধা মানুষের কাছে পৌছে দেয়া সম্ভব হবে না।’
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় ফারস হোটেলের সম্মেলন কক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স ও আর্ক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং আইডিআরসির সহযোগিতায় আয়োজিত ‘নগরে স্বল্প মূল্যে তাজা শাকসবজি ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের যোগান নিশ্চিতে আইন ও কর ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) কাজী জেবুনেছা বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহা পরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বন্দর) বিধায়ক রায় চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার শাহ গোলাম নবী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব মো. সাদেকুল ইসলাম।
কর্মশালায় আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, ‘বাংলাদেশে কৃষি পণ্যের পর্যাপ্ত উৎপাদন হলেও, মানুষ ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারছে না। নগরের পরিবহন, সাপ্লাই চেইনে চাঁদার জন্য অর্থ প্রদান, পরিবহনের অতিরিক্ত খরচ, নগর কৃষির ব্যবস্থাপনা না থাকা, তাজা-শাকসবজির জন্য কোন প্রণোদনা না থাকার কারণে নগরে তাজা-শাকসবজির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বিদ্যমান নীতিমালায় নগরে তাজা-শাকসবজির যোগান নিশ্চিতে কোন ধরনের ভতূর্কী বা সহযোগিতার প্রদানের সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার পাওয়া যায়নি। এ গবেষণায় ৩১টি আইন বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তাজা-সবজি বিষয়ে কৃষি বিপণন আইন, ভোক্তার অধিকার আইন ও নিরাপদ খাদ্য আইন ব্যতীত অন্য আইনে সারাসরি কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় নি বা সুপষ্টভাবে উল্লেখ নেই।’
শাহ গোলাম নবী বলেন, ‘সুস্থ্য থাকতে হলে আমাদের ভাল খাবার খেতে হবে। উৎপাদন হতে যোগান পর্যান্ত আমাদের খাবারের মান নিশ্চিত করতে হবে। আমি মনে করি, নিরাপদ খাদ্যের যোগানের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন ও নীতি বিষয়ে আরো গবেষণা করা জরুরি।’
বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের তাজা ফল, মূলের মান নিশ্চিতের লক্ষ্যে মানসম্মত মজুত নিশ্চিত করা জরুরি। তাজা শাকসবজি ফলমূলের পরিবহন সহজে সুলভে করার লক্ষ্যে আমরা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নাগরিকদের ছাদ বাগানের উৎসাহী করলে উৎপাদিত পণ্য অনেকাংশ পুষ্টি ঘাটতি কমাতে ভূমিকা রাখবে। খাদ্যের কারণে আমাদের মাঝে অসংক্রমক রোগ বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষয় মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে।’
কাজী জেবুনেছা বেগম বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশ সংবিধানে জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলা হয়েছে। অপুষ্টি ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের কারণে আমরা নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছি। আমাদের রোগ ব্যাধি কমাতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিকদের তাজা-শাকসবজি গ্রহণের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাজা শাক-সবজির উৎপাদনকারী কৃষকদের পণ্যের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।’
সভায় আলোচকরা সুপারিশে বলেন, ‘উৎপাদন প্রক্রিয়া নজর দেয়া যাতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যায়, স্বল্পমূল্যে তাজা-শাক-সবজির যোগান নিশ্চিত করা, নগরে শাক-সবজির যোগান বাড়াতে নগর কৃষি নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, যা স্বল্প মূল্যে নগরবাসীদের প্রয়োজনীয় তাজা সবজির যোগান নিশ্চিত করবে। তাজা শাক-সবজি মজুত/সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করা প্রয়োজন। যাতে কৃষকদের পণ্য ক্রেতাদের হাতে পৌছানোর পূর্বে নষ্ট না হয়। শাক-সবজি পরিবহন করতে হিমায়িত পরিবহনসহ বিশেষ ব্যবস্থা করা দরকার; যাতে স্বল্প মূল্যে পরিবহন করা যায়। এ জন্য নৌ ও রেলওয়ের সমন্বয় নিশ্চিত করা দরকার। বিপণন ও বিতরণের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র/ভ্রাম্যমান বিক্রেতাদের সহযোগিতা প্রদান স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব প্রদান। পরিবহন, মজুত, বিপণন প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ/ পরোক্ষ ভতূর্কী দেয়ার ব্যবস্থা করা।’
সভায় অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন শাহজান বেগম নীনা উপ-পরিচালক (নীতি ও পরিকল্পনা) কৃষি বিপনন অধিদপ্তর, একেএম শামীম আলম উপ-পরিচালক কৃষি অধিদপ্তর, মীর আলমগীর হোসেন, উপসচিব, রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রমুখ।