শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

শিরোনাম

বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত আইএমএফ

বুধবার, নভেম্বর ৯, ২০২২

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বুধবার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে সফররত আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে অর্থ মন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবে আমরা চেয়েছিলাম, আইএমএফ সেভাবেই আমাদের ঋণ দিচ্ছে। আইএমএফের ঋণ আমরা পেতে যাচ্ছি।’

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।

মুস্তফা কামাল বলেন, ১আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা ঋণ প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা চূড়ান্ত করবে। ঋণের পরিমাণ সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এক ডলার ১০০ টাকা ধরলে ৪৫ হাজার কোটি টাকা)। সাত কিস্তিতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ঋণ আসবে। প্রথম কিস্তি আসবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে।’

তিনি জানান, প্রথম কিস্তিতে আসবে ৪৪৮ মিলিয়ন ডলার। এর জন্য বাংলাদেশকে কোন সুদ দিতে হবে না। পরবর্তী সাত কিস্তিতে বাকি অর্থ আসবে। প্রতি কিস্তি অর্থের পরিমাণ হবে ৫৫৯ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলার। এটার জন্য বাংলাদেশকে দুই দশমিক দুই শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।

অর্থ মন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্বের অর্থনীতিই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। উন্নত থেকে উন্নয়নশীল সব দেশে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। প্রায় সব দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমে গিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ উত্তাপের আঁচ আমাদের অর্থনীতিতেও কিছুটা লেগেছে।’

তিনি বলেন, ‘এ অস্থিরতা যাতে কোন ধরনের সংকটে ঘনীভূত না হয়, তা নিশ্চিত করতেই আমরা আগাম সতর্কতা হিসেবে আইএমএফের ঋণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তাদের সাথে এর আগে একাধিক বার বৈঠক হয়েছে। চলমান ঋণ আলোচনার পর্বটি আজ আমরা সফলভাবে শেষ করলাম।’

মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা যেভাবে ঋণ চেয়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই ঋণ পেতে যাচ্ছি বলে আমি আশা করছি। আইএমএফের সফররত দলটি বাংলাদেশ সরকারের সব স্টেকহোল্ডারের সাথে আলোচনা করেছে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভাল বলে তারা জানিয়েছে।’

আইএমএফের প্রতিনিধিদল গত ২৬ অক্টোবর থেকে মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) পর্যন্ত মোট ৩০টি বৈঠক করেছে। বেশির ভাগ বৈঠক ছিল আর্থিক খাতের সাথে সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সাথে। আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আইএমএফ প্রতিনিধিদল আমাদের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের সাথে একমত পোষণ করেছে। সে অনুযায়ী আমরা চার বছর মেয়াদি ঋণ কর্মসূচি নিতে যাচ্ছি। এ ঋণ কর্মসূচির লক্ষ্য প্রসঙ্গে তিনি জানান, অর্থনীতির বহিঃখাতকে স্থিতিশীল করা, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণকে সামনে রেখে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দেয়া, আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন ও সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের বাজেট ঘাটতি ধারণযোগ্য পর্যায়ে রাখা হবে, যা গত প্রায় ১৪ বছর ধরেআমরা করে আসছি। আমাদের সরকারের সব সময় প্রচেষ্টা থাকে বাজেট ঘাটতিকে জিডিপির পাঁচ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা।’

তিনি জানান, গত বছর আমাদের বাজেট ঘাটতি ছিল পাঁচ দশমিক এক শতাংশ, যা এ অর্থ বছরে পাঁচ দশকি পাঁচ শতাংশ ধরা আছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার মত খাতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি করা, যা আমরা প্রতি অর্থ বছরে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছি।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা খাতে চলতি অর্থ বছরে আমাদের বরাদ্দ রয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ১৭ শতাংশ। আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নতুন কয়েকটি আইন প্রণয়ন এবং পুরোনো কয়েকটি আইনের সংশোধনের চলমান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা, রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার জোরদার এবং কর প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করা হবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাট আদায়ের জন্য আমরা ইএফডি মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। এখন পর্যন্ত ছয় হাজার ৭৩২টি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। আগামী বছরে আরো ৬০ হাজার মেশিন স্থাপন করা হবে ও পরবর্তী চার বছরে দুই লাখ ৪০ হাজার মেশিন স্থাপিত হবে।’

অর্থ মন্ত্রী বলেন, ১জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের ব্যবস্থাটি আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সাথে সময়ে সময়ে সমন্বয় করা, যাতে সামনে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে দেশের অভ্যন্তরেও তা একইভাবে কমানো যায়। টাকার বিনিময় হার নির্ধারণের কাজটি ধীরে ধীরে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া, যা আমরা ইতিমধ্যে শুরু করেছি।’

এ দিকে, আইএমএফ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশকে ঋণসহায়তা করার বিষয়ে সংস্থাটির সাথে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা হয়েছে। বর্ধিত ঋণসুবিধা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসুবিধার (ইএফএফ) আওতায় ৩২০ কোটি ডলার আর রেজিলিয়েন্স সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ১৩০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হবে। ৪২ মাসের মেয়াদে এ ঋণ দেয়া হবে।