আলবেনী, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: বাংলাদেশী আমেরিকান ফাউন্ডেশন অব আলবেনী (বাফা) বিজয় দিবস- ২০২৪ উদযাপন করেছে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) নিউইয়র্ক রাজ্যের আলবেনীর ‘লেথাম রিজ স্কুল’ চত্বর ও অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠাানে বিপুল সংখ্যক বাঙালিদের উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপিত হয়।
সকাল থেকেই সংগঠনের নারী-পুরুষ ও শিশুদের লাল-সবুজ পোশাকে বাফার কর্মী ও কমিউনিটির বাঙালিদের আগমন, নিবন্ধন, কুশল বিনিময়, আলোকচিত্র ধারণ, বিভিন্ন স্টলে কেনাবেচা ও সাজসজ্জার ব্যস্ততায় যেন এক টুকরো লাল-সবুজের বাংলাদেশ প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠেছিল স্কুলের প্রাঙ্গণে। সকাল গড়িয়ে দুপুর ভর করতেই চত্বরটি আলবেনীর বাঙালিদের একটি বিশাল মিলনমেলায় পরিণত হয়। বিশেষত শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বসিত হৈচৈ আর আনন্দে মাতোয়ারা ছিল চারদিক।
উৎসবমুখর পরিবেশে সুস্বাদু নানা ধরনের খাবারের পরিবেশন ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। মিষ্টান্ন থেকে শুরু করে কোমল পানীয়, চা, কফি কোন কিছুরই কমতি ছিল না। বিকাল তিনটায় শুরু হল বিজয় দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা।
অনুষ্ঠানটি চারটি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে শুধুমাত্র শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা ‘হৃদয়ের গভীরে ভালবাসায় আঁকা প্রিয় বাংলাদেশ প্রিয় আমেরিকা’ পর্বটিতে প্রথমে বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়, পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রহিম বাদশাহ। পরবর্তী দেশাত্ববোধক গানের সাথে নৃত্য পরিবেশিত হয়, কোরিওগ্রাফার ছিলেন তানিয়া মানির। প্রথম পর্বে অংশ গ্রহণকারী শিশুরা হচ্ছেন আফিজা চৌধুরী, আলিশা হক, আরিবা তারিক, আরমীণ ভুঁইয়ান, ফাইজা ফরহাদ, ফারিয়া হক, মাহাদ তারিক, মাহ্ রাস কাজী, মুয়াদ আহমেদ, নাজিয়া হুদা, নিহাল মাসুদ, রাযিন রাইসা, রিহান বাদশাহ, সাফা জামান, সিফান আহমেদ, সঞ্জিতা শিকদার, শাহান রাকিন আনোয়ার, সুমায়রা রাহা আহমেদ, তাসকিন আরেফিন, তাজমীন জামান, জাহিন হোসেন, জাহিয়া জামান ও জারিয়া আহমেদ।
দ্বিতীয় পর্বে ছিল বিজয় দিবসের আলোচনা ও স্পন্সর পরিচিতি পর্ব। আলোচনায় অংশ নেন বাফার চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও প্রেসিডেন্ট সোহেল আহমেদ। বক্তারা স্বাধীনতা আন্দোলনের সব নেতৃত্ব, সংগঠক, ৩০ লক্ষ শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখা সব স্তরের বাঙালিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের ত্যাগের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তারা বাংলা সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে বাফার পরিবারের আগ্রহকে সাধুবাদ জানান। বিশেষত নতুন প্রজন্মের আমেরিকান-বাঙালি শিশুদের মনে শেকড়ের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনে বাঙালি সংস্কৃতিকে লালন করার জন্য পিতা-মাতার অব্যাহত প্রচেষ্টাকে অভিনন্দিত করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্লিফটন পার্কের টাউন সুপারভাইজার ও চেয়ার অব দা স্যারাটোগা কাউন্টি বোর্ড সুপারভাইজার ফিল ব্যারেট ও ক্লিফটন পার্ক টাউন জাজ অনারেবল রবার্ট রাইবেক।
বক্তব্য দেন নিউইয়র্ক লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যানার ও এজেন্ট সাংবাদিক সুলতানা রহমান পুতুল ও অফিস পার্টনার ব্র্যানডন কার্ল। তারা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কীভাবে ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটির অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে পারে এবং পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সেবিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠান আয়োজনে আরো সহযোগিতা করেছেন রিয়্যালটি ওয়ান গ্রুপের মো. আহসানুল হক ও আলাদীন হালাল গ্রুপ।
তৃতীয় পর্বে বাফার সদস্যদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় গীতিনৃত্যালেখ্য ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না’। ১৭৫৭ সালের পলাশির প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন পর্যন্ত এক সুদীর্ঘ সময়ের অব্যাহত আন্দোলন, সংগ্রাম, আত্মউৎসর্গ আর ত্যাগের মহিমান্বিত উপাখ্যানের আলোকে গীতিনৃত্যালেখ্যটির স্ক্রীপ্ট, গ্রন্থনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ছিলেন আবৃত্তি শিল্পী আনোয়ারুল হক লাভলু।
বাফা আলবেনীর, সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তির ৩১ জন শিল্পীর অংশগ্রহণে পরিবেশিত গীতিনৃত্যালেখ্যটি।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আনিকা সুবাহ আহমদ উপমা, কবি বেনজির শিকদারের ‘বিজয় উৎসব’ কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে পর্বটির সূচনা করেন এবং আবৃত্তিশিল্পী আনোয়ারুল হক লাভলুর ইতিহাস কথনের মধ্যদিয়ে দর্শকরা গীতিনৃত্যালেখ্য ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না’ এর মূল পর্বে ঢুকেন।