ঢাকা: বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিজেআরআই) সোমবার (২৬ জুন) ‘পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা প্রকল্প (জেনোম) এবং বিজেআরআইয়ের গবেষণা কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অবস্থিত বিজেআরআইয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। বিজেআরআইয়ের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবদুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ। উপস্থিত ছিলেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব রেহানা ইয়াছমিন (গবেষণা অনুবিভাগ), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক সুরজিত সাহা রায়, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. ফখরে আলম ইবনে তাবিব, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (তৈলবীজ) মো. তারিকুল ইসলাম।
জেনোম প্রকল্পের গবেষণা কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারকে অবহিত ও প্রকল্পটির ল্যাবরেটরি পরিদর্শন করান জেনোম প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার কৃষিবিদ কাজী মো. মোছাদ্দেক হোসেন। বিজেআরআইয়ের গবেষণা কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে উপস্থাপনা করেন বিজেআরআইয়ের প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের পরিচালক এসএম মাহবুব আলী।
কর্মশালায় কৃষি সচিব বলেন, ‘আমরা আট লক্ষ হেক্টর জমিতে পাটকে চাষাবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। আমরা পাটকে যেন বহুমুখীভাবে ব্যবহার করতে পারি, সে জন্য উদ্যোক্তা ও কৃষকদের আহবান জানাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুভুতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ হতে প্রথম বারের মত কৃষক প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।’
পাট গবেষণার বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক মানের জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘পাটখড়িকে আমাদের উদ্যেক্তারা পুরো বিশ্বব্যাপি বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য হিসেবে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। পাটখড়ি দিয়ে যে চারকল তৈরি হচ্ছে, তা বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রায় ১০০-১৫০ কোটি টাকা উপার্জন করছে। আমি আশা করছি, এ সংখ্যা খুব দ্রুতই ৪০০-৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।’
উদ্যোগক্তা ও কৃষকদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আজকে আমি সবচেয়ে খুশি হয়েছি, করিমগঞ্জের কেনাফ চাষীরা পাট চাষে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। পাট একটি প্রাকৃতিক ফাইবার। পৃথিবীতে সহজে প্রাকৃতিক ফাইবার পাওয়া যায় না। সেখানে আমাদের ছোট্ট একটি দেশে পাটের মত প্রাকৃতিক ফাইবার এত সহজলভ্য। করোনার সময় আমাদের কৃষকরা আমাদের মাঠকে আকড়ে ধরেছিল, আমাদের ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়নি দেখেই আমাদের দেশ খাদ্য অভাবে পড়েনি, কোন রকম হাহাকার হয়নি।’
পাট বিজ্ঞানী মো. মাকসুদুল আলমের প্রশংসা করে সচিব বলেন, ‘মাকসুদুল আলম স্যার একঝাঁক পাট বিজ্ঞানী আমাদের দিয়ে গেছেন, যারা নিরলসভাবে পাটকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।’
তিনি বিজ্ঞানীদের পাটের বৈচিত্র্যতা নিয়ে কাজ করার আহবান জানান। ‘বৈচিত্র্যতার কোন সীমা নেই। তাই, পাটের বৈচিত্র্যতা নিয়ে যত কাজ করা যাবে, পাট ততই এগিয়ে যাবে।’
আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ বলেন, ‘পাটসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের উন্নয়নের কারণে শেখ হাসিনা বিশ্বের দরবারে সম্মানিত হচ্ছেন ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক পুরস্কৃত হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘পাটের বিভিন্ন বৈচিত্র্যতা ও সম্ভাবনা রয়েছে। পাটসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্যের বীজ আমদানী করতে যে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়, তা কমাতে ও দেশী জাতকে প্রচার করতে বিএডিসি উদ্বুদ্ধ।’
মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ‘বিজেআরআইয়ের তিনটি উইং রয়েছে। একটি কৃষি; যা নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জাত উদ্ভাবন করে এবং কৃষকের কাছে পৌছে দেন। দ্বিতীয়টি কারিগরি উইং; যা পাটকে কারিগরিভাবে বহুমুখী ব্যবহারের কাজ করে। আর একটি উইং হল- জুট ডাইভারসিফিকেশন; যা পাটকে বিভিন্ন পণ্যে রুপান্তরিত করে।’
কর্মশালায় বলা হয়, ‘বিগত এ বছরে বিজেআরআই দুইটি উচ্চফলনশীল জাত অবমুক্ত করেছে। একটি জাত বিজেআরআই তোষা পাট-৯, অপরটি বিজেআরআই কেনাফ-৫। বাংলাদেশে এক মিনিটে এক লাখ পলিথিন ব্যবহৃত হয়। এ পলিথিন মাটির নিচে ৪০০ বছরেও পঁচে না। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে ও পাটের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের জুট ডাইভারসিফিকেশন উইং হতে উৎপাদিত সুতা (৫০ শতাংশ তুলা ও ৫০ শতাংম পাটের আশঁ দিয়ে তৈরি) ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন।’
জুট টেক্সটাইল বিভাগের পরিচালক ফেরদৌস আরা দিলরুবা, কৃষি বিভাগের পরিচালক কৃষিবিদ নার্গীস আক্তারসহ সব বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।