উডসাইড, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার (১৫ নভেম্বর) চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে তার ‘সবচেয়ে গঠনমূলক’ আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা এক বছরের মধ্যে প্রথম এই শীর্ষ বৈঠকে উত্তেজনা কমাতে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ পুন:স্থাপনে সম্মত হয়েছেন। পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতির নেতারা এক বছরে তাদের প্রথম আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ঐতিহাসিক এস্টেটে মিলিত হওয়ার সাথে সাথে হাত মেলালেন ও হাসলেন এবং বাগানে হাঁটার সাথে চার ঘন্টার শীর্ষ বৈঠকটি শেষ করলেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার ফিলোলি এস্টেটে সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, ‘আমি সবেমাত্র প্রেসিডেন্ট শির সাথে কয়েক ঘণ্টার বৈঠক শেষ করেছি ও আমি বিশ্বাস করি যে, সেগুলো আমাদের মধ্যে সবচেয়ে গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’
ইউএস ডেমোক্র্যাট বাইডেন বলেছেন, ‘তিনি চীনা কমিউনিস্ট নেতার সঙ্গে বহু ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করলেও, যাকে তিনি ২০১১ সাল থেকে চেনেন, শি বুধবার (১৫ নভেম্বর) আলোচনার সময় স্বাভাবিক ছিলেন।’
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করার পরে চীন সামরিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল। বাইডেন বলেন, ‘এই বৈঠকে সেই যোগাযোগ ‘পুনরুদ্ধার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’।’
‘দুই পক্ষের ভুল ধারণা চীনের মত একটি দেশের সাথে বাস্তব সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে- এ কথা উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা সেখানে সত্যিকারের অগ্রগতি অর্জন করছি।’
তবে, শি এবং বাইডেন তাইওয়ানের প্রশ্নে ব্যাপক আলোচনা থেকে বহু দূরে ছিলেন। চীনের প্রেসিডেন্ট তার মার্কিন সমকক্ষকে তাইওয়ানকে অস্ত্র দেয়া বন্ধ করতে বলেন ও তাইওয়ানের পুনর্মিলন ‘অপ্রতিরোধ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন।
বেইজিং স্ব-শাসিত গণতন্ত্রের উপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে ও তা দখল করার দাবিতে ‘অটল’ রয়েছে।
উভয় পক্ষ অন্যান্য চুক্তির ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে রয়েছে, চীন যুক্তরাষ্ট্রে ওপিওড (ড্রাগ) অপব্যবহারের একটি মারাত্মক মহামারীর জন্য দায়ী ওষুধ ফেন্টানাইলের উৎপাদান হ্রাসে করতে সম্মত হয়েছে। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আলোচনা করতেও সম্মত হয়েছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
২০২২ সালের নভেম্বরে বালিতে আলোচনার পর থেকে এই দুই নেতা ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেননি এবং এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র একটি কথিত চীনা গুপ্তচর বেলুনকে গুলি করে নামানোর পরে সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। এরপর থেকে বেইজিং ও ওয়াশিংটন দুই নেতাকে মুখোমুখি পেতে তীব্র কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হয়।
এর আগে বাইডেন বলেছিলেন, আলোচনা ‘ভালভাবে’ হয়েছে ও মনোরম কান্ট্রি এস্টেটের মাঠে তারা যখন পাশাপাশি হাঁটছিলেন উভয়েই সাংবাদিকদের দিকে হাত নেড়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
প্রতিনিধি দল নিয়ে বৈঠকে একটি দীর্ঘ কাঠের টেবিল জুড়ে বসা শি’কে উদ্দেশ্য করে বাইডেন বলেছেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, প্রতিযোগিতা যেন সংঘর্ষে না যায়।’
শি এর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘দুই দেশের সফল হওয়ার জন্য এই গ্রহ যথেষ্ট বড়।’
শি বলেন, ‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মত দুটি বড় দেশের জন্য একে অপরের দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া কোন বিকল্প নয়।’