শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শিরোনাম

বিএনপির বর্জনের মধ্যে রোববারের নির্বাচনে জয় পেতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ

শনিবার, জানুয়ারী ৬, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন ও টানা চতুর্থ বারের মত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিতের মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশে রোববার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করছে। অপর দিকে, আওয়ামী লীগসহ ২৭টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। খবর ইউএনবির।

বিশ্লেষকরা বিরোধী দলের বর্জনের কারণে আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠনের জন্য নির্বাচনে জয়লাভ করবে ও ১৫ বছরের শাসনকাল আরো পাঁচ বছর বাড়িয়ে ২০২৯ সাল পর্যন্ত করবে বলে ধারণা করছেন।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তদারকির জন্য নির্দলীয় প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি শেখ হাসিনার সরকার প্রত্যাখ্যান করায় বিরোধীরা দৌড় থেকে সরে আসছে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম ক্ষমতাসীন দলটি নিজ দলের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের কারণে কঠিন যুদ্ধের মুখোমুখি হচ্ছে ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) জাতির উদ্দেশে টিলিভিশনে দেয়া তার নির্বাচনি প্রচারের শেষ ভাষণে ভোটারদের ভোরে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তার দলের নির্বাচনি প্রতীক নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।

তবে, বিরোধী দল বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো ভোটের দিনসহ ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে।

শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ ও ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শিশুসহ চারজনের মৃত্যুর পর পুরো দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানায়, শনিবার (৬ জানুয়ারি) পুরো দেশে নির্বাচনি কর্মকর্তারা ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনি সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। তবে, ভোটের দিন সকালে ব্যালটগুলো কেন্দ্রে পাঠানো হবে।

দেশের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। নওগাঁ-দুই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুতে ওই আসনে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি। নির্বাচনে ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট এক হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

৮০ থেকে ১০০ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা একই দলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে কঠিন যুদ্ধ দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থীরা ২৬৬টি আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া, জাতীয় পার্টির সাথে ২৬টি আসন ও ১৪ দলীয় জোটের তিনটি শরিককে ছয়টি আসন ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এর মধ্যে জাসদকে তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টিকে দুটি ও জাতীয় পার্টিকে (জেপি-মঞ্জু) একটি আসন দিয়েছে।

বরিশাল-চার ও কক্সবাজার-এক আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় তাদের কোন প্রার্থী নেই। বরিশাল-চার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের সাংসদ পঙ্কজ নাথ ও কক্সবাজার-এক আসনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে ২৬৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জাপার ২৬৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৬ জন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে, জাতীয় পার্টির কয়েকজন প্রার্থী অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি দৌড় থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৬টি দল নির্বাচনি দৌড়ের বাইরে রয়েছে।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, ৪২ হাজার ২৪টি ভোট কেন্দ্রের দুই লাখ ৬০ হাজার ৮৫৬টি বুথে ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৪ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ছয় কোটি পাঁচ লাখ ৯১ হাজার ১৯৭ জন পুরুষ ভোটার, পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ ৩৯ হাজার ৮৮৯ জন নারী ও ৮৪৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।

রোববারের (৭ জানুয়ারি) নির্বাচনে প্রায় দশ হাজার ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে (যদিও ইসি এ ধরনের কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছে)। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

পুরো দেশে আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধ করে নির্বাচনি পরিবেশ বজায় রাখতে প্রায় আট লাখ নিরাপত্তা কর্মী নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে ৩৮ হাজার ১৫৪ জন সেনা সদস্য, দুই হাজার ৮২৭ জন নৌবাহিনী সদস্য (১৯ জেলা), ৪৪ হাজার ৯১২ জন (এক হাজার ১৫১ প্লাটুন) বিজিবি সদস্য, দুই হাজার ৩৫৫ (৭০ প্লাটুন) কোস্টগার্ড সদস্য, র‌্যাবের ৬০০ টহল দল ও ব্যারেব ৯৫টি রিজার্ভ টিম, এক লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৭ জন পুলিশ সদস্য ও পাঁচ লাখ ১৪ হাজার ২৮৮ জন আনসার সদস্য রয়েছেন।

এ ছাড়া, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি দিতে ৬৫৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রায় দুই হাজার (১৯৭০) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পুরো দেশে ৪২ হাজার ২৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার, দুই লাখ ৬০ হাজার ৮৫৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রায় পাঁচ লাখ ২২ হাজার পোলিং অফিসারসহ প্রায় নয় লাখ পোলিং কর্মকর্তা ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচন পরিচালনার জন্য ৬৪ জন জেলা প্রশাসক ও ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুইজন বিভাগীয় কমিশনারসহ ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার এবং ৫৯০ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৪৯৩ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), ৫৬ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ১৪ জন স্থানীয় সরকার উপপরিচালক, আটজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ১১ জন জোনাল নির্বাহী কর্মকর্তা, পাঁচজন ক্যান্টনমেন্ট নির্বাহী কর্মকর্তা, দুইজন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও একজন সার্কেল কর্মকর্তা রয়েছেন।

ইসি মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অবস্থিত ভোট কেন্দ্র ও মেট্রোপলিটন এলাকার অভ্যন্তরে অবস্থিত ভোট কেন্দ্রের জন্য পৃথক নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য ১৫-১৭ সদস্যের একটি টিম মোতায়েন করা হবে।

মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে দুই জন পুলিশ সদস্য, অস্ত্রসহ একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিসহ একজন আনসার, লাঠিসহ দশজন আনসার, লাঠিসোটা নিয়ে একজন বা দুইজন গ্রাম পুলিশ সদস্যসহ ১৫-১৬ জনের একটি নিরাপত্তা কর্মী প্রতিটি সাধারণ ভোট কেন্দ্র পাহারা দেবে। তবে, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্রের ক্ষেত্রে (যা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়) অস্ত্রসহ তিনজন পুলিশসহ ১৬-১৭ জন নিরাপত্তারক্ষী থাকবে। মেট্রোপলিটন এলাকার ভিতরে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন পুলিশ সদস্য, অস্ত্রসহ একজন আনসার, অস্ত্র ও অথবা লাঠিসহ একজন আনসার, লাঠিসহ আরো দশজন আনসার সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা দল থাকবে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের ২৬ জন প্রার্থী হলেন ঠাকুরগাঁও-তিন, নীলফামারী-তিন ও চার, রংপুর-এক ও তিন, কুড়িগ্রাম-এক ও দুই, গাইবান্ধা-এক ও দুই, বগুড়া-দুই ও তিন, সাতক্ষীরা-দুই, পটুয়াখালী-এক, বরিশাল-তিন, পিরোজপুর-তিন, ময়মনসিংহ-তিন ও আট, কিশোরগঞ্জ-তিন, মানিকগঞ্জ-এক, ঢাকা-১৮, হবিগঞ্জ-এক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-দুই, ফেনী-তিন, চট্টগ্রাম-পাঁচ ও আট এবং নারায়ণগঞ্জ-পাঁচ।

এ ছাড়া, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে জাসদ বগুড়া-চার, কুষ্টিয়া-দুই ও লক্ষ্মীপুর-চার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং বরিশাল-দুই ও রাজশাহী-দুই আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির দুইজন এবং পিরোজপুর-দুই আসনে জাতীয় পার্টির (জেপি) একজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ২০২৩ এর ৩০ নভেম্বর ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ছিল ২০২৩ এর ১৭ ডিসেম্বর।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর দুই বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অংশগ্রহণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।