শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বিএনপি অংশ না নিলে অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে নির্বাচন

শুক্রবার, অক্টোবর ১৩, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: ‘বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে। বিভিন্ন ছোট-খাট দল নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা বিএনপির সমকক্ষ নয়।’ বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) প্রকাশিত বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘দুটো দল পাঁচটা দল, দশটা দল ছোট-খাট দল বাংলাদেশের বিভিন্ন দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। তবে, এটা অনস্বীকার্য যে, মূল বিরোধী দল যে বিএনপি, তাদের সমকক্ষ ওরা নয়। এটা আমরা অস্বীকার করি না বা কেউ অস্বীকার করবে না।’

তিনি বলেন, ‘ওই দলটা যদি অংশগ্রহণ না করে, তাহলে একটা অনিশ্চয়তা বা একটা শঙ্কা একটা অসম্পূর্ণতা থেকে যেতে পারে, এতে কোন সন্দেহ নেই।’

সিইসি মনে করেন, নির্বাচন যদি কোন সংঘাত বা সহিংসতা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে তারা ‘খুশি হবেন’ বটে, কিন্তু গণতান্ত্রিক চেতনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নির্বাচন ‘অসম্পূর্ণ’ থেকে যাবে।’

তিনি জানান, নির্বাচনে আস্থার পরিবেশ তৈরির জন্য আগে থেকেই প্রশাসনে রদবদলের কোন পরিকল্পনা নেই। প্রশাসনে রদবদল করলেই যে বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেবে, সে নিশ্চয়তা নেই। তবে, নির্বাচনে অংশ নেয়ার পর বিরোধী দল যদি প্রশাসনে রদবদলের কথা বলে, তাহলে সেটি বিবেচনা করবে নির্বাচন কমিশন।’

কাজী হাবিবুল বলেন, ‘আমরা এটা-সেটা রদবদল করলাম, যেটা কখনো হয়নি। তারপরও ওনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন না, কাজে সেটা খুব অর্থবহ প্রক্রিয়া হবে বলে আমি মনে করি না।’

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর কাছ থেকে নির্বাচন কমিশন সাড়া পায়নি জানিয়েছেন সিইসি।

তিনি বলেন, দুই বার রিফিউজড হওয়ার পরেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আমি ব্যক্তিগত ডিও লেটার দিয়ে শুধুমাত্র ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব নয়, তাদের সহমর্মী যে দলগুলো, যারা নির্বাচন বর্জন করছেন, তাদের যে প্রধান তাদেরকেও চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোন সাড়া পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর প্রতিটা মুহূর্তে আমাদের রুটিন অনুযায়ী অনেকগুলো কাজ আছে। রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, তাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নেয়া।’

‘তারা যদি নমিনেশন সাবমিট করেন, তাহলে তো অংশগ্রহণমূলক হয়ে গেল। তখন আমাদের পক্ষে আলাদা করে আহ্বান জানানো, মিটিং করা ওই সময়টুকু আমাদের হবে না। কিন্তু ওনাদের মধ্যে যদি কোন রকম সংলাপ হয়ে থাকে প্রকাশ্যে বা গোপনে, যার অধীনে ওনারা যদি সম্মত হন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে, ওনারা যদি নমিনেশন সাবমিট করেন, তাহলে আমরা বুঝে গেলাম যে, ওনারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং আমরা অত্যন্ত খুশী হব সেক্ষেত্রে।’ যোগ করেন কাজী হাবিবুল।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, সংবিধান ও গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছেন।

নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কমিশন প্রস্তুত জানিয়ে কাজী হাবিবুল বলেন, ‘আরপিওতে যেভাবে নির্দেশনা রয়েছে, সেভাবে আমরা সোজা এগিয়ে যাচ্ছি। ডানে বামে তেমন তাকাচ্ছি না। আমাদের প্রস্তুতি আপ টু-ডেট আছে।’

তিনি বলেন, ‘একটা সংকট, অনাস্থা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচিত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এ বিষয়ে কোন সংশয় নেই যে, খুব মসৃণ ওয়েতে দেশ আগাচ্ছে নির্বাচনের দিকে সেটা বলা যাবে না। তবে, আমাদের এখনো প্রত্যাশা মাঝে মাঝে দেখছি যে, সিভিল সোসাইটি একটু উদ্যোগী হয়ে উঠেছে যে, নির্বাচনটাকে ইনক্লুসিভ করতে।’

সিইসি মনে করেন, নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক’ ও ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক’ হওয়া দুটি ভিন্ন বিষয়। নির্বাচন ‘অন্তভূর্ক্তিমূলক’ না হলেও সেটি ‘অংশগ্রহণমূলক’ হতে পারে। নির্বাচন কমিশন সবসময় ‘অংশগ্রহণমূলক’ ও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’- দুইটাই চান নির্বাচনের ক্ষেত্রে।

‘অংশগ্রহণ-মূলকের এখন দুটো অর্থ দাঁড়িয়ে গেছে। একটি হচ্ছে ব্যাপক জনগণ যদি নির্বাচন কেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন তাহলে নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক। আবার আরেকটি বক্তব্য হচ্ছে, সব দল অংশগ্রহণ করল। আবার ওটার দিকে ইংলিশটা হচ্ছে ‘ইনক্লুসিভ’ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক।’ যোগ করেন সিইসি।

এক্ষেত্রে, সমঝোতা, রাজনৈতিক সংলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিন।
সিইসি বলেন, ‘একটা দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, মাঠে তার ভিন্ন প্ল্যান থাকতে পারে। ভিন্ন ধরনের কৌশল থাকতে পারে। তাদের প্ল্যান বা কৌশলকে নিয়ন্ত্রণ করার কোন দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়।’

কাজী আউয়াল বলেন, ‘কিন্তু আমরা আমাদের নৈতিক অবস্থান থেকে সব দলকে বার বার আহ্বান করেছি, নির্বাচনকে অর্থবহ করতে হলে নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সত্যিকার অর্থে প্রতিযোগিতামূলক হওয়া বাঞ্ছনীয়।’

দলীয় সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কিনা জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কোন মন্তব্য করতে চাননি। তিনি দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করবে।

সিইসি বলেন, ‘যেটা আপনি বলেছেন, এটা হচ্ছে পলিটিকাল লিটারেচার বা পলিটিকাল ফিল্ডের কথা যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে কি হবে না। সে ব্যাপারে আমরা কোন রকম মন্তব্য করব না।