বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ইরানে লাখো মানুষের বিক্ষাভ

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২

প্রিন্ট করুন

তেহরান, ইরান: রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) ছিল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) ওফাত ও ইমাম হাসানের (আ.) শাহাদাত বার্ষিকী। এ উপলক্ষে ইরানের লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন সভা সেমিনার ও শোক র‍্যালিতে অংশ নিয়ে ইরানে সম্প্রতি পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ধর্মীয় মূলবোধ রক্ষার পাশাপাশি ইসলামি শাসন ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছে।

সম্প্রতি ইরানের বিভিন্ন শহরে ইসলাম বিদ্বেষী একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা ও গোলযোগ বাধায় এবং নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। দাঙ্গাবাজরা ইসলামি শাসন ব্যবস্থার বিরোধিতা করার পাশাপাশি পবিত্র কোরআন শরীফ ও ইরানের পতাকা অবমাননা করা ছাড়াও বহু লোককে হত্যা করেছে। আহত হয়েছে আরো অনেক মানুষ। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা নারী অধিকারের দাবি তুলে গোলযোগ বাধালেও তাদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হয়েছে, তাদের মূল টার্গেট ছিল ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ইসলামি শাসন ব্যবস্থার বিরোধিতা করা। কেননা তারা আন্দোলনের নামে পবিত্র কোরআন জ্বালিয়েছে, মসজিদে হামলা করেছে, জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগ করেছে ও সবচেয়ে বড় বিষয় ইরানের বেলায়েতে ফকিহ তথা ধর্মীয় নেতাদের শাসন ব্যবস্থার অবমাননা করেছে।

আন্দোলনকারী ও তাদের সমর্থকরা ভেবেছিল যে, তারা নারী অধিকারের সমর্থনের অজুহাতে জনসাধারণের আবেগকে উস্কে দিয়ে জনগণকে প্রভাবিত করতে পারবে ও সবাইকে নিজেদের দিকে টানতে পারবে। কিন্তু ইরানের সচেতন জনগণ ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর গত ৪৪ বছরে কিছু বিষয় প্রমাণ করেছে। যেমন- প্রথমত, তারা ন্যায়সঙ্গত দাবির স্বপক্ষে আন্দোলনকারী ও আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে পেরেছে।

দ্বিতীয়ত, কিছু বিষয়ে ইসলামপন্থীদের ত্রুটি বিচ্যুতি বা ঘাটতি থাকলেও ইসলামি সরকার ব্যবস্থা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি বিপুল সংখ্যক মানুষের সমর্থন রয়েছে।

তৃতীয়ত, সে সব দাঙ্গাবাজ যারা ধর্মীয় মূল্যবোধের অবমাননা করে ও যারা সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে সব সময়ই জনগণের দাবি ছিল জোরালো।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ইরানের বিভিন্ন প্রদেশের লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশ করে দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে তাদের ঘৃণা প্রকাশ করেছে; যা ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি তাদের সমর্থনের প্রমাণ। গত কয়েক দিনে ইরানের আপামর জনগণের বিক্ষোভে এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, দাঙ্গাবাজদের উদ্দেশ্য নারীদের প্রতি সমর্থন দেয়া নয়; বরং ধর্মীয় মূল্যবোধ উৎখাত করাই ছিল তাদের মূল টার্গেট।

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা বিক্ষোভ-সমাবেশ শেষে ইরানের শান্তিপ্রিয় জনতার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যারা দেশে দাঙ্গা বাধায়, পবিত্র কুরআন অবমাননা করে, মসজিদ ও জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে, নারীর সতীত্ব ও হিজাবের অবমাননা করে, দেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের শহীদ করে, তারা আসলে শত্রুর উস্কানিতে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ‘ইরানের লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে এটা প্রমাণ করেছে যে, দেশের নিরাপত্তা দুর্বল করতে পারে- এমন যে কোন তৎপরতাকে তারা রুখে দেবে।’

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশকে হতাহত করেছে ও জনগণের সামনে পুলিশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু ইরানের জনগণ সোমবারের (২৬ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ করে পুলিশ সদস্যদেরকে গোলাপ ফুল উপহার দিয়ে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে। অন্য দিকে, কোথাও কোথাও পুলিশও ফুল দিয়ে জনগণকে অভিবাদন জানিয়েছে।