নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদ কর্মীরা বেতন বাড়ানো ও বাড়ি থেকে কাজ করাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দাবিতে কর্মবিরতি (ওয়াকআউট) পালন করছেন। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) ২৪ ঘণ্টার ওয়াকআউট কর্মসূচি শুরু হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসে গত ৪০ বছরের মধ্যে এটাই প্রথম কোন কর্মবিরতির ঘটনা। খবর আল জাজিরার।
নিউইয়র্ক টাইমসের কয়েক শত সংবাদ কর্মী এ কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছেন। তাদের এ কর্মবিরতির নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের গণ মাধ্যমের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্কের সাংবাদিক ইউনিয়ন নিউজগিল্ড অব নিউইয়র্ক। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস মালিকপক্ষের দর কষাকষিতে তিক্ত-বিরক্ত তারা।’
নিউজগিল্ড অব নিউইয়র্ক জানিয়েছে, মালিকপক্ষের সাথে তাদের একটি চুক্তির মেয়াদ গত বছরের (২০২১) মার্চ মাসেই শেষ হয়ে গেছে। সেই থেকে দর কষাকষি চলছে। বিষয়টি সামনে না এগুনোয় গত সপ্তাহেই কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয় ইউনিয়ন। ঘোষণায় বলা হয়, ‘ইউনিয়নের সহস্রাধিক সংবাদ কর্মী ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবে।
ঘোষণা মতই নির্দিষ্ট সময়েই কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে টুইটার বার্তায় নিউজগিল্ড বলেছে, ‘নিউইয়র্ক টাইমসের এক হাজার ১০০ কর্মী এখন আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কোম্পানিতে গত চার দশকের মধ্যে এটাই প্রথম কোন বড় কর্মবিরতির ঘটনা।’
বার্তায় আরো বলা হয়, ‘কাজ করতে অস্বীকৃতি জানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি খুব সহজ ছিল না। কিন্তু আমাদের সদস্যরা এখন সেটাই করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ, তারা সবার জন্য একটা ভাল কর্মপরিবেশ চান।’ ইউনিয়নের সদস্যরা বলছেন, ‘গণ মাধ্যম ব্যবসায় চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠান তাদের দাবি পূরণ করতে সক্ষম।
নিউইয়র্ক টাইমসের ক্রীড়া প্রতিবেদক কেভিন ড্রাপার বলেন, ‘আমরা সৌভাগ্যবান যে, যেসব গণ মাধ্যমের ব্যবসায় লাভজনক, সেসব গণ মাধ্যমের একটিতে কাজ করছি। প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য যে প্রস্তাব করেছে, তা গত বার যা পেয়েছি, তার চেয়ে একটু ভাল।’
গত বছরের শেষের দিকে নিউইয়র্ক টাইমস দুই হাজারের বেশি সাংবাদিকসহ প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। কেভিন ড্রাপার বলেন, ‘নিউইয়র্ক টাইমসের আন্তর্জাতিক কর্মীরা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নন। এ কর্মবিরতিতে বিশ্বকাপ ফুটবলের নিউজ কাভার করা কর্মীরা থাকছেন না।’
২০১৭ সালে গুগলের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ নিউইয়র্ক টাইমসের ডলার আয় কমে যায়। এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গুগলের বিজ্ঞাপন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে পাঠকদের গ্রাহক (সাবস্ক্রিপশন) হওয়ার ওপর নির্ভর করতে থাকে। ২০২১ সালের মার্চে আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই বেতন, মজুরি বৃদ্ধি, অবসর গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য সেবা নীতি ও হোম অফিসের মত কাজ নিয়ে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মতবিরোধ শুরু হয়।
গত মঙ্গলবার এ নিয়ে প্রায় ১২ ঘণ্টা আলোচনা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটি বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ‘২০২৩-২৪ সালে তিন শতাংশ হারে নিশ্চিত বেতন বাড়বে।’ তবে পেনশন সুবিধার দাবি নাকচ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
নিউইয়র্ক টাইমসের উপ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ক্লিফ লেভি গত মঙ্গলবার কর্মীদের প্রতি এক ই-মেইল বার্তায় বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবে ইউনিয়ন সন্তুষ্ট হতে পারে নি। তাই আমরা চাই, এ বিষয়ের সমাধানে আমাদের সাথে নিউজ গিল্ড যুক্ত হোক।’
ইউনিয়নের দাবি ছিল, চাকরির শুরুর বেতন হতে হবে ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার। আর ২০২৩-২৪ সালে কর্মীদের বেতন পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ বাড়াতে হবে। তবে নিউইয়র্ক টাইমস যে বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে, তা জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
নিউইয়র্ক টাইমসের সিনিয়র স্টাফ এডিটর আন্দ্রেয়া জাগাতা বলেন, ‘গত বছর আমার বাসাভাড়া বেড়েছে আট শতাংশ। তাহলে প্রতিষ্ঠান আমার জন্য দুই দশমিক আট শতাংশ বেতন বাড়ালে কী লাভ হবে। অথচ প্রতিষ্ঠানটি অন্য নির্বাহীর বেতন, স্টক বাইব্যাক ও লভ্যাংশের জন্য বিপুল পরিমাণ ব্যয় করছে।’
নিউজ গিল্ড-সিডব্লিউএর প্রেসিডেন্ট জন শ্লেউস বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ইউনিয়নে সাড়ে ছয় হাজার জন গণ মাধ্যম কর্মী সদস্য হয়েছেন। দুইটি ছোট পরিসরের সংবাদপত্র দ্য ফোর্ট ওর্থ স্টার টেলিগ্রাম ও দ্য পিটসবার্গ পোস্ট গ্যাজেটের কর্মী সম্প্রতি অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন।’
জন শ্লেউস আরো বলেন, তিনি আশাবাদী যে, নিউইয়র্ক টাইমসের শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থান কর্মীদের দাবি মেনে ভাল সুযোগ-সুবিধা দেবে।’