বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

মমতাজ উদ্দীন একুশে পদকে মনোনীত হওয়ায় খুশি নাটোরবাসী

মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

নাটোর: বর্তমান সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও দুইটি প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক-২০২৩ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন নাটোরের লালপুর-বাগাতিপাড়ার সাবেক সাংসদ, আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মরহুম মমতাজ উদ্দীন (মরণোত্তর)। এ সংবাদে লালপুরের তথা পুরো জেলার মানুষ খুব খুশি।

মমতাজ উদ্দীনকে সরকারের একুশে পদক দেয়ার ঘোষণা জেনে তার পরিবারও অত্যন্ত খুশি। তার ছেলে লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ সাগর তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, সৃষ্টিকর্তার প্রতি হাজার শোকর যে, বর্তমান সরকার তাকে একুশে পদক দিচ্ছেন।’

তিনি ও তার পরিবার শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শামীম আহমেদ সাগর নাটোরের বর্তমান জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এ জন্য যে, এ প্রথম কোন জেলা প্রশাসক তাদের ডেকে ফরম পূরণ থেকে সব রকম সহযোগিতা দিয়েছেন। এ পদক পাওয়ার ব্যাপারে তারও অবদান রয়েছে। এ পদক পাওয়ায় লালপুরবাসীও খুব খুশি।

মরহুম মমতাজ উদ্দীন লালপুর উপজেলার আব্দুলপুর মিল্কিপাড়ায় ১৯৪৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জন্ম নেন। লালপুরের চক নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, নাটোর নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঈশ্বরদী কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন তিনি। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৬২ সালের ছয় দফা আন্দোলনে তিনি ছাত্ররাজনীতিক হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও সদালাপী নিরহংকার মানুষ ছিলেন তিনি। অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত এ মানুষটি সহজেই আপন করে নিতে পারতেন মানুষকে। ছাত্রজীবন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিত্ত ও বৈভবের মোহে আকৃষ্ট না হয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।

শিক্ষা জীবন শেষে তাই তো নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। মমতাজ উদ্দীন লালপুরের সালামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। অন্যের উপকার করে তিনি তৃপ্তি পেতেন। দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করতেন অকাতরে। সে কারণে জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন লাখো মানুষের হৃদয়ে। প্রতিদান হিসেবে এলাকাবাসী তাকে ১৯৮৬ সালে সাংসদ নির্বাচিত করেছিলেন।

রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ও মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ ভূমিকা রাখায় তাকে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছিল। এলাকার উন্নয়নে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-কলেজ নির্মাণসহ নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন তিনি। কখনো কোন অন্যায়কে তিনি প্রশ্রয় দিতেন না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ছিল তার। এটাই বোধ হয় জীবনে কাল হয়েছিল তার। ২০০৩ সালের ৬ জুন রাতে একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন তিনি। তিনি যে জেলাব্যাপী জনপ্রিয় ছিলেন, তার প্রমাণ তার মরদেহ নাটোর কাচারী মাঠে আনা হলে সেখানে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। অনেক চড়াইউতরাই পেরিয়ে তার মৃত্যুর দশ বছর পরে ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ তার হত্যা মামলায় অভিযুক্ত নয়জনকে যাবজ্জীবন সাজা ও তিনজনকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- আরিফ, বাবু ওরফে বাবর, ফারুক, আলম, শামীম, সুজন, আইনাল, মিন্টু, আসলাম।