/ 
প্রিন্ট করুন
ঢাকা: ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, ‘ওয়াশিংটন কোন দেশকে বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য করে না। প্রতিটি দেশ আমাদের মত চীনের একই সঠিক মূল্যায়ন করবে এমনটি আমরা আশা করি না।’
তিনি এখানে একটি হোটেলে ‘বে অফ বেঙ্গল সংলাপ ২০২২’ অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় বক্তৃতাকালে আরো বলেন, ‘আমাকে সুস্পষ্ট করে বলতে দিন। এটি কোন দেশকে বেছে নিতে বাধ্য করার বিষয় নয়। এটি হচ্ছে তাদেরকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া।’
হাস বলেন, ‘এমনকি অন্যান্য অনেক দেশের মত যুক্তরাষ্ট্রেরও ‘চীনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বা জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্ক রয়েছে, যা তারা বজায় রাখতে চায়। মার্কিন কূটনীতির ভিত্তি হচ্ছে পরস্পরের স্বার্থের জন্য অংশীদারিত্ব ও সম্মান।’
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘চীন জলবায়ু থেকে কোভিড-১৯ পর্যন্ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সহজ কথায়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে অবশ্যই অদূর ভবিষ্যতে পরস্পরের সাথে কাজ করতে হবে।’
রাষ্ট্রদূত চীন সম্পর্কে মার্কিন অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য জাতিসংঘে সাম্প্রতিককালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভাষণ উদ্ধৃত করেছেন। জো বাইডেন চীনের প্রসঙ্গে বলেছেন ‘আমরা শীতল যুদ্ধ চাই না।’
বাইডেন গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠক করেছেন ও যোগাযোগ বজায় রাখতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি বিলঙ্কেনকে বেইজিং সফর করার পরামর্শ দিয়েছেন।
হাস মনে করেন, রাশিয়ার পদক্ষেপ ‘উন্মুক্ত, আন্তঃসংযুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও সহিষ্ণু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে অত্যন্ত চাপের সম্মুখীন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।
হাস বলেন, ‘পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করলে অশান্তি শেষ হবে। (কিন্তু) যদি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে, ইউক্রেন শেষ হয়ে যাবে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অন্য দিকে চীনই একমাত্র দেশ, যার অভিপ্রায় আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার ও ক্রমবর্ধমানভাবে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক এবং প্রযুক্তিগত শক্তির পুনর্গঠন করতে পারে।’
হাস, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হিসাবে বিবেচিত জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, সংক্রামক রোগ, বা মূল্যস্ফীতি ছাড়াও আন্ত:সীমান্ত সমস্যার প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য সারা বিশ্বের জনগণের দুর্ভোগের বিষয় তুলে ধরেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘এসব অভিন্ন চ্যালেঞ্জ ভূ-রাজনীতির জন্য গৌণ নয়। এগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার একেবারে মূলে রয়েছে ও অবশ্যই সেভাবে বিবেচনা করা উচিত।’
হাস বলেন, তার দেশ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সম্পর্কে বাংলাদেশের সাথে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। যুক্তরাষ্ট্র একটি অবাধ ও উন্মুক্ত, আন্তঃসংযুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ এবং সহিষ্ণু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তুলতে ঢাকা ও অন্যান্য অংশীদারদের সাথে কাজ করতে চায়।
রাষ্ট্রদূত এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘এ অঞ্চলের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি একটি মুক্ত, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অঞ্চল।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তার স্থল ও সামুদ্রিক সীমান্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি স্বাধীন ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং ‘বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরকে বিশ্বের কাছে অনুসরণ করার জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের (মার্কিন) নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ রয়েছে। তবে আমি বিশ্বাস করি আমাদের সকলের ভবিষ্যতের জন্য একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে ও দৃঢ় বিশ্বাস হচ্ছে যে, সেই দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য আমাদের অবশ্যই এক সাথে ও অন্যান্য দেশের সাথে কাজ করতে হবে।’
হাস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চায় যা স্বচ্ছ শাসনের পক্ষে রয়েছে যা জনগণের জন্য সংবেদনশীল।’
হাস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ) চালু করেছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের পাশাপাশি অংশীদার দেশগুলির মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রতিফলিত করা যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়গুলো (আইপিইএফ) নিয়ে কাজ চালিয়ে যাব ও বাংলাদেশসহ সব দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিকভাবে আমাদের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করব।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি নিরাপদ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিশ্চিত করতে সহিংস চরমপন্থা থেকে অবৈধ মাছ ধরা থেকে মানব পাচার পর্যন্ত সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অংশীদারদের সাথে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সহযোগিতা চাইবে।’
হাস ‘বার্মায় নৃশংস সামরিক অভ্যুত্থান ঔ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা’কে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি অবিলম্বে অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম, দ্বৈত-ব্যবহারের সরঞ্জাম বিক্রি বা হস্তান্তর ও মায়ানমারকে কারিগরি সহায়তা প্রদান বন্ধ করার জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
হাস বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলকে স্থিতিশীল করতে জলবায়ু ও জীবাণু অস্ত্রের হুমকিসহ আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলির স্থিতিশীলতা জোরদার করার জন্য কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘নিম্ন আয়ের দেশগুলিকে তাদের জলবায়ু লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য ও ন্যায্য জ্বালানি ব্যবস্থায় উত্তরণ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নে তহবিল সরবরাহ করার জন্য কাজ করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তার বৈশ্বিক দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
