/ 
প্রিন্ট করুন
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: বহুপাক্ষিকতার নীতি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের আশা-আকাঙ্খা ও ইচ্ছার প্রতি কিছু দেশ তোয়াক্কা না করায় এসব সংস্থার কার্যকারিতা ও তাদের প্রতি আস্থা নিয়ে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সভায় দেয়া বক্তৃতায় বলেন, ‘ন্যায় বিচারের গ্যারান্টার হিসেবে জাহির করা পশ্চিমা দেশগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থা ও নীতির প্রতি আস্থা হারিয়েছে।’ খবর পার্সটুডের।
বহুমেরুকেন্দ্রীক বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতি বিভিন্ন দেশের প্রচেষ্টার প্রতি ইঙ্গিত করে সের্গেই ল্যভরফ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমেরিকা পুরো বিশ্বকে নিজের কব্জায় নিয়ে আসতে চায়।’
প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসেবে বহুপাক্ষিকতার ওপর বিভিন্ন দেশ জোর দিয়ে আসছে এবং একে সাদরে অনুমোদন করেছে। বিশ্ব শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়েছে এবং এ লক্ষ্যে কাজ করছে। গত দশক পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ বহুপাক্ষিকতার নীতি লঙ্ঘন করে নি।
কিন্তু ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’ প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ থেকে ওয়াশিংটনকে প্রত্যাহার করে নেয় ও সেইসাথে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি কোন ধরনের তোয়াক্কা না করে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে ওয়াশিংটন নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়।
এ নিয়ে আমরা করোনা মহামারী চলাকালীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি ইরানের সাথে ছয়জাতি গোষ্ঠীর স্বাক্ষরিত পরমমাণু চুক্তি বা জেসিপিওএ নামে পরিচিত পারমাণবিক চুক্তি ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আমেরিকার সরে আসার কথা উল্লেখ করতে পারি। কিছু দেশের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা, বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি করে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করা, দেশগুলোকে হুমকি ও ভয় দেখানো ওয়াশিংটনের একতরফা নীতির মত আরো অনেক উদাহরণ আছে।
প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকান কর্মকর্তাদের কাছে তাদের দেশের স্বার্থের সাথে যা জড়িত; তা বৈশ্বিক হয়ে ওঠে ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের লক্ষ্য, স্বার্থ এবং ইচ্ছা তাদের কাছে মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়।
প্রকৃতপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাবাদী নীতি এবং এ নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওয়াশিংটন সামরিক শক্তি ব্যবহার করার পাশাপাশি তার অবৈধ ও অন্যায় দাবির প্রতি নতিস্বীকার করার জন্য বিভিন্ন দেশের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে করে আসছে। অন্য দিকে, যুদ্ধরত দেশগুলোকে বিশেষ করে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ইউক্রেনকে আর্থিক ও অস্ত্র সহায়তা দেয়ার ফলে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা দুর্বল হচ্ছে ও বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েই চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান বিবেচনা করে জাতিসংঘের মত আন্তর্জাতিক সংস্থার সতর্কতা ও দাবিগুলো আমলে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না।
রাশিয়ান বিশ্লেষক এবং এ ক্ষেত্রে পুতিনের অন্যতম উপদেষ্টা ফিওদর লুকিয়ানভ বলেছেন, ‘এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী বছরগুলিতে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো হ্রাস পেতে থাকবে ও এমনকি এসবের প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়ে যেতে পারে।’
