বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

শিরোনাম

মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে মেগা চুরি হয়েছে

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৩১, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মূলে রাজনৈতিক বিবেচনায় পক্ষপাতদুষ্ট মেগা প্রকল্প। যা বাস্তবায়নে মেগা চুরি হয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে অনাচারী অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য স্বেচ্ছাচারী অর্থনীতি সৃষ্টি করা হয়েছিল।’

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) পরিকল্পনা কমিশনে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সুপারিশ বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।

বৈঠকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘যতটুকু অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, তার চেয়ে বেশি বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এটার বিপরীতে উন্নয়নের একটি বয়ান সৃষ্টি করা হয়েছিল। এ অনাচারী অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য স্বেচ্ছাচারী রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছিল। এটার ফলে অনাচারের যে চক্রাকার আবহ সৃষ্টি হয়েছিল, তা ভাঙার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সংস্কার না হলে আমাদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, কর্মদক্ষতা ও সুশাসনের পথে বাধা সৃষ্টি হবে। আমরা বর্তমান যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছি, ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নির্ধারণ করবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তাদের কতটা স্বস্তি দিচ্ছে। অর্থাৎ, এ সংস্কারগুলোর পরিধি, ধারাবাহিকতা ও গতি কী হবে, তা নির্ধারিত হবে সরকার বর্তমান অর্থনীতির কতখানি আশ্বস্ত থাকে এবং জনগণ কতখানি স্বস্তিতে থাকে।’

এ মুহূর্তে চলমান বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম চলছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইতিবাচক সংস্কার পদ্ধতি ও কার্যক্রম আমরা লক্ষ্য করছি। একইসাথে রাজনৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ আসছে। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তি পলিসি বা দলের ওপর আমরা যখন কোন বিধি নিষেধ আরোপ করে, তখন তার অর্থনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের রাজনৈতিক ভূমিকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভূমিকাকেও সংকুচিত করবার পথ সৃষ্টি করি। সেহেতু এ বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনার মধ্যে রাখতে হচ্ছে। এসব বিষয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে কাজ করছে।’

বৈঠকে ইএফআরের সাংবাদিক নেতারা অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাছে বিভিন্ন প্রকার সংস্কার সুপারিশ তুলে ধরেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সরঞ্জাম ক্রয়ের ক্ষেত্রে যে বিশাল অনিয়ম, তা রোধে করণীয় তুলে ধরতে কমিটিকে অনুরোধ জানান।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন প্রণয়ন কমিটির সদস্য জাহিদ হাসান বলেন, ‘শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য কিছু বিষয় উঠে এসেছে। কিন্তু ব্যাপকতা ও গভীরতা বলে একটা বিষয় আছে। এখন আমরা ব্যাপকতার চাইতে গভীরতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। রেলপথ, পানিপথ, সড়ক পথ ছাড়াও অদৃশ্য কিছু পথ রয়েছে। এখন এসব পথের গভীরতা বিবেচনায় সংস্কার অগ্রগতি পরিচালনা হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে আমাদের মাটির কাছাকাছি থাকতে হবে খুব বেশি আকাশচুম্বী প্রত্যাশা করা উচিত হবে না। তবে, জবাবদিহিতার পদ্ধতিগত সংস্কারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এ ব্যাপারে প্রণয়ন কমিটি একটি দৃশ্যমান পদ্ধতি প্রণয়নে কাজ করছে।’

কমিটির আরেক সদস্য সেলিম রায়হান বলেন, ‘দেশের সার্বিক সংকটের সমস্যাটা মোটা দাগে চিহ্নিত করলে দেখা যাবে যে, এটা শুরু হয়েছে মূলত ২০১৪ সালের একটি অগণতান্ত্রিক, অগ্রহণযোগ্য ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে। তখন থেকেই উন্নয়নের বয়ানে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম বা চামচা পুঁজিবাদকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। প্রকল্পভিত্তিক দুর্নীতি, ব্যয় ভিত্তিক দুর্নীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে হরিলুক হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাজনৈতিক অর্থনীতির যে আবহ সৃষ্টি হয়েছে, তা রাজনীতি আমলা ও ব্যবসায়ীরা একটি অ্যালেন্স তৈরি করে করেছে। তারাই মূলত এ উন্নয়ন বয়ানকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কার প্রয়োজন ছিল, তারা তাদের স্বার্থের কারণে এ সংস্কারগুলোকে কখনোই সামনে আসতে দেয়নি। কারণ, এ সংস্কারগুলো তাদের স্বার্থে বিঘ্ন ঘটাবে।’