কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। রোববার (১৪ মে) সকাল নয়টা থেকে এখানে প্রবল বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
রোববার (১৪ মে) সকাল নয়টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরো উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ মায়ানমারের সিটুয়ের কাছে দিয়ে কক্সবাজার-উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।’
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া ১৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। এটি রোববার সকাল ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, শনিবার (১৩ মে) মধ্যরাত থেকে হালকা বাতাস ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। রোববার সকাল নয়টার পর থেকে দ্বীপের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। একই সাথে প্রবল বৃষ্টিও হচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। তবে, জোয়ারের পানি এখনো বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। দ্বীপের প্রায় সাত হাজার বাসিন্দা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। এখানে তিনটি আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও ৩৭টি হোটেল, রিসোর্ট ও বহুতল ভবন আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলার প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, কক্সবাজার জেলায় ৭০০ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে দুই লাখ ৩২ হাজার ৩৭৭ জনকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দশ হাজার গবাদি পশুকে স্থান দেয়া হয়েছে।
জেলার প্রশাসক জানান, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যারা আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের খাদ্য সামগ্রী দেয়া হচ্ছে। জেলার উপকূলীয় এলাকায় রেড ক্রিসেন্টের আট হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। তারা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে সহযোগিতা করছে। ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে অতি বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসের আশংকাও রয়েছে। তাই, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। জেলায় ৯৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
মুহম্মদ শাহীন ইমরান আরো জানান, সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা ও সব উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরী ত্রাণ হিসাবে দশ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা, ৪৪০ মেট্টিক টন চাল, সাত মেট্টিক টন শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও ১৯৪ বান্ডিল ঢেউ টিন মজুত রাখা হয়েছে।
এ দিকে, নৌবাহিনীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ঘুর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা ও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নৌবাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। একই সাথে প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনীর ২১টি জাহাজ, হেলিকপ্টার ও পেট্রেল এয়ারক্রাফট।