ইস্তানবুল, তুরস্ক: যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধনে সক্ষম ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির পর, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার (৮ জুলাই) ইউক্রেনের ন্যাটোভুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তূর্কী সমর্থন নিশ্চিত করেছেন। ‘পৃথিবীর বৃহৎ একটি অংশ জুড়ে নিষিদ্ধ এ বিতর্কিত অস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্ত শনিবার ৫০০তম দিনে প্রবেশ করা যুদ্ধটির ঝুঁকি নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। খবর এএফপির।
জেলেনস্কি তার সেনাবাহিনীর জন্য আরো বড় ও উন্নত অস্ত্র সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টায় ইউরোপ জুড়ে সফর করছেন। ইউক্রেন দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এক পাল্টা হামলা শুরু করেছে। তবে, পাল্টা হামলা ইউক্রেনের মিত্রদের আশার চেয়ে কম দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি সর্বশেষ মার্কিন অস্ত্র প্যাকেজকে সময়োপযোগী, বিস্তৃত ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অভিহিত করে টুইট করেছেন, এটি ‘আমাদের ভূমি দখলমুক্ত করার জন্য নতুন সরঞ্জাম সরবরাহ করবে।’
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বীকার করেছেন, ইউক্রেনকে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা একটি কঠিন সিদ্ধান্ত। প্রসঙ্গত বাইডেন বলেছেন, ‘আমি আমাদের মিত্রদের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করেছি। ইউক্রেনীদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাচ্ছিল।’
অবিলম্বে ন্যাটো সদস্যপ্রাপ্তি হবে না: অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে মানবিক গোষ্ঠীগুলোর কঠোর নিন্দা সত্ত্বেও ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়কেই তাদের বিদ্যমান অস্ত্রের মজুদ ব্যবহার করা প্রত্যক্ষ করেছে এএফপি দলগুলো। গোষ্ঠিগুলো আগামীতে বেসামরিক নাগরিকদের বিপন্নের আশঙ্কা থাকা অনেক বোমা বিষ্ফোরিত হতে পারবে না বলে সতর্ক করেছে। মার্কিন পদক্ষেপকে রক্ষা করে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান যুক্তি দেন, ‘রাশিয়ার সেনা ও ট্যাঙ্ক ইউক্রেনের অবস্থানের উপর দিয়ে চলে গেলে এবং আরো ইউক্রেনীয় অঞ্চল দখল করলে বেসামরিক ক্ষতির একটি বিশাল ঝুঁকি থাকবে।’ ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য কঠোর চাপ দিচ্ছেন জেলেনস্কি। হায়াইট হাউস বলেছে, ‘সদস্যপদ খুব দূরে নয়। তবে, লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আগামী সপ্তাহের শীর্ষ সম্মেলনে সদস্য প্রাপ্তি হবে না।’ সুলিভান বলেন, ‘সদস্য হওয়ার আগে কিয়েভকে এখনো আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এ দিকে, রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা ভাঙার চেষ্টারত ক্রেমলিন ন্যাটোর কৌশলগত সদস্য রাষ্ট্র তুরস্কে জেলেনস্কির আলোচনা ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এরদোগান নিজেকে একজন নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি রাশিয়ার সাথে যুদ্ধকালীন বাণিজ্য যথেষ্ট পরিমাণে বাড়িয়েছেন, আবার ইউক্রেনকে ড্রোন ও অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করেছেন, যা যুদ্ধের প্রথম দিকে ক্রেমলিন বাহিনীকে কিয়েভ দখল থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। উভয় পক্ষের শান্তি আলোচনায় প্রবেশের জন্য তার দীর্ঘ দিনের আহ্বানকে পুনর্ব্যক্ত করার সময়, এরদোগান ইউক্রেনের ন্যাটো আকাঙ্খায় দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দিয়ে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ক্রোধের ঝুঁকিও নেন। ইস্তাম্বুলে সংবাদ মাধ্যমের যৌথ উপস্থিতিতে জেলেনস্কির সাথে এরদোগান বলেন, ‘ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্য এতে কোন সন্দেহ নেই।’ জেলেনস্কি এ সম্পর্কে তার মন্তব্যে বলেন, ‘আমি শুনে খুশি যে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হওয়ার যোগ্য।’ এসব বার্তা ক্রেমলিনের সাথে এরদোগানের সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিচ্ছে। বৈঠকের আগে জেলেনস্কির সফরের ফলাফল খুব নিবিড়ভাবে দেখবে বলে সতর্ক করে ক্রেমলিন।