মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্রে ২১ দিন ধরে নিখোঁজ ঢাবির শিক্ষক অনিক পাল

সোমবার, জুলাই ২৪, ২০২৩

প্রিন্ট করুন
অনিক পাল

ইন্ডিয়ানা, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি অধ্যয়নরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অনিক পাল নিখোঁজ হয়েছেন। গেল ৩ জুলাই ইন্ডিয়ানা থেকে তিনি নিখোঁজ হন। অনিক পালের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে ক্রমেই রহস্য দানা বাঁধছে।

স্থানীয় পুলিশের দাবি, মেধাবী এ শিক্ষার্থী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহনন করেছে। তবে, তারা অনিকের মরদেহ কিংবা কোন চিহ্নের খোঁজ দিতে পারেননি। পুলিশের এ দাবি মানছেন না অনিক পালের পরিবার ও প্রবাসীরা। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা চেয়েছেন।

দারিদ্র্য জয় করে এগিয়ে যাওয়া অনিক পাল তুখোড় মেধাবী ছিলেন। পরিবারে আছেন দুই বোন আর মা। ঢাবিতে বায়োকেমিস্ট্রিতে পড়াশোনা শেষ করে ২০১৬ সালে সেই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যেই ২০২১ সালের আগস্টে পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ পান তিনি।

ঢাকায় বেড়ে উঠা অনিক নিখোঁজ হওয়ার মাত্র ২৫ দিন আগে বাংলাদেশ থেকে পার্ডুতে ফিরেছিলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এ ব্যক্তির জীবনে কি এমন ঘটনা ঘটল, যে কিছু না বলে সে উধাও হল?

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় পত্রিকা ‘দ্য ইক্সোপনেন্ট’ এর বরাতে পুলিশ বলছে, ‘অনিক পাল স্থানীয় জন টি মেয়ারস ব্রিজ থেকে ওয়াব্যাস নদীতে রাত আড়াইটার দিকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। পরের দিন সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নদীতে খোঁজাখুঁজির পর কোন হদিস মেলেনি।’

সবশেষ গেল ১১ জুলাই পুলিশের কর্মকর্তা ব্রায়ান লও স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা আর অনিকের অনুসন্ধান করবেন না। অনিকের পরিবারের দাবি, ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না।

নিখোঁজের খবর পাওয়ার পর তারা অনিকের সন্ধান চেয়ে পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা চাইলেও সন্তোষজনক কোন তথ্য তারা পাচ্ছেন না। স্থানীয় পুলিশ অনিকের সন্ধান না দিয়ে তদন্ত শেষ করেছে।

অনিকের বড় বোন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি জানান, একমাত্র ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে তারা অনেকটাই পাগলপ্রায়। অনিক আত্মহত্যা করতে যাবেন কেন, সেটাই বুঝতে পারছেন না বড় বোন।

অনিকের বোনের ভাষ্য, বিষয়টি জানার পর আমরা তিন দিন পর যখন অনিকের ল্যাবের সুপারভাইজারের সাথে যোগাযোগ করি, তখন তিনি আমাকে বলেছেন, অনিকের নিখোঁজের বিষয়টি তিনি অবগত নন। কিন্তু, কেন তিনি জানবেন না, যে তার এক ছাত্র নিখোঁজ হয়েছে? যেখানে নিখোঁজের পর পুলিশ সার্চ করা শুরু করেছে, সেখানে অনিকের শিক্ষককে কি তারা অবহিত করেননি? নাকি তিনি কোন কিছু চেপে যাচ্ছেন?

তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করলে, তারা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে বলে। হাজার হাজার মাইল দূর থেকে পুলিশের সাথে আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু, তারা অনিকের সন্ধান দিতে পারেনি। কিন্তু, কেন এমন হবে? ওই নদীতে যে অনিকই ঝাঁপ দিয়েছে, তা পুলিশ কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছে? ওরা তো আমাদের কাছ থেকে অনিকের কোন ছবিই নেয়নি। এমনকি অনিককে যে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তার চিত্র আমাদের সাথে শেয়ার করা হয়নি। অনিক যদি আত্মহত্যাও করে, তাহলে তার মরদেহের সন্ধান আমাদের দিন। উচ্চ শিক্ষা নিতে গিয়ে একজন মেধাবী তরুণ নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে, আর যুক্তরাষ্ট্রের মত একটি দেশে তার সন্ধানই মিলবে না, তা কি করে হয়?

অনিকের সন্ধানে সহযোগিতার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাবি কর্তৃপক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসকে লিখিতভাবে জানানোর পরও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অনিকের পরিবারের অভিযোগ।