ঢাকা: অবৈধ রেলক্রসিং সমস্যা সমাধান না করায় সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার মত কুমিল্লার দক্ষিণ খিলা তুগুরিয়ায় রেলপথ দুর্ঘটনায় নিহত চার জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গত ৩৪০ দিনে ছোট-বড় এক হাজার ৫৩৫ টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৬১ জন ও আহত এক হাজার ৭১৩ জন। এর মধ্যে অধিকাংশ দুর্ঘটনাই ঘটেছে অবৈধ রেলক্রসিং, গেট কিপারদের দায়িত্বে অবহেলা ও অসাবধানতার কারণে বলে জানিয়েছে সেভ দ্য রোড।
রেলওয়ের দুই হাজার ৮৫৬টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে অবৈধ এক হাজার ৩৬১টির সমস্যা সমাধানে কার্যত কোন উদ্যোগ না নেয়া প্রায় ৪৮ শতাংশ অবৈধ রেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিল বড় হচ্ছে, যা জাতীয় জীবনে নির্মমতা তৈরি করছে।
এ অবস্থায় সেভ দ্য রোডের চেয়ারম্যান জেডএম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, জিয়াউর রহমান জিয়া ও ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের সহ-সভাপতি আনজুমান আরা শিল্পীসহ গবেষণা সেলের তথ্য মতে, বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর মধ্যে ৬৩২টিতে গেটকিপার নেই। অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোয় যেমন গেটকিপার নেই, নেই কোন সুরক্ষা সরঞ্জামও। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা-দায়িত্বে অবহেলা-নির্দেশনা সাইন-সচেতনতা সাইনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬টি, আহত হয়েছে ৫২, নিহত হয়েছে ১৪ জন, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪১টি, আহত হয়েছে ১১১ জন, নিহত হয়েছে ২৭ জন, পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২২টি, আহত হয়েছে ১৮৬ জন, নিহত হয়েছে ৩১ জন, এপ্রিল পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ১১২টি, আহত হয়েছে ১৬৬ জন, নিহত হয়েছে ৪২ জন; মে মাসে আহত ২২১ জন, নিহত হয়েছে ২৩ জন; দুর্ঘটনা ঘটেছে ২১২ টি; জুন মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯৭টি; আহত হয়েছে ১৭২ জন, নিহত হয়েছে ১৭ জন ও জুলাই মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৪২টি, আহত হয়েছে ২৩২ জন, নিহত হয়েছে ২৪ জন; আগস্টে ১৬৬টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ১৭৪ জন ও নিহত হয়েছে ১৯ জন; সেপ্টেম্বরে ১৭৮টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ১৭৪ জন ও নিহত হয়েছে ১৪ জন; অক্টোবরে ৯৯টি দুর্ঘটনায় ১১১ জন আহত ও ২৬ জন নিহত হয়েছে; নভেম্বরে ১১১টি দুর্ঘটনায় ৯৮ জন আহত ও ১৯ জন নিহত হয়েছে ও ১-৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ছয় জন, নিহত পাঁচ জন।
২৪টি জাতীয় দৈনিক, ১৮টি ইলেকট্রনিক্স গণ মাধ্যম, ২২টি নিউজ পোর্টাল ও সারাদেশে সেভ দ্য রোড’র বিভিন্ন শাখার স্বেচ্ছাসেবিদের তথ্যর ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এ প্রতিবেদন।
এ পর্যন্ত সব রেলপথ দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে কমপক্ষে দশ লাখ ও আহতদের সরকারি অর্থায়নে চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন সেভ দ্য রোড নেতারা। একই সাথে রেলওয়ের বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণে সেভ দ্য রোডের পক্ষ থেকে সাতটি সুপারিশ দেয়া হয়েছে। এগুলো হল- অবৈধ ক্রসিংগুলোর সমাধান ও অবৈধ দখল থেকে রেলওয়ের সব সম্পত্তি মুক্ত করা; সেবা সপ্তাহসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অপচয়-দুর্নীতি বন্ধের লক্ষ্যে দুর্নীতিবাজ রেল কর্মকর্তা কর্মচারিদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া; সরকারি লেজুড়ভিত্তিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগ’ এ নামে নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম বন্ধ করে রেলকে গণমূখি বাহন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা; যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ রেলওয়েকে বেসরকারি খাত থেকে মুক্ত করে রাষ্ট্রিয় তত্বাবধায়নে পরিচালনার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া; সচিব-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সব রকম আরাম-আয়েশ বাতিল করে সারাদেশে রেলওয়ের উন্নয়নে জনসাধারণের সেবার নিমিত্তে নিবেদিত রাখা; টিকিট কালো বাজারি বন্ধ করে যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে সব কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উপর নজরদারি বাড়ানো ও সারা দেশের সব স্থানে কার্যকর সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা এবং তিন কিলোমিটার অন্তর অন্তর রেলওয়ে পুলিশের বিশেষ অবজারভেশন বুথ স্থাপন করা।