ঢাকা: রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চেয়ে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে তারা ঐক্যবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের সবিনয় অনুরোধ, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও বুয়েটকে যাতে ছাত্র রাজনীতির বাইরে রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী যেন তাদের পাশে থাকেন।
মঙ্গলবার (2 এপ্রিল) সন্ধ্যায় বুয়েটের ড. এমএ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ আবেদন জানান আন্দোলনকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা ত্রাসের রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝি না; আমরা শুধু দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসতে জানি। নিজেদের কাজ দিয়ে তা আমরা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের সকলের অভিভাবক, দেশের অভিভাবক। আমরা জানি, দেশের কোথাও কোন দুঃখজনক পরিস্থিতি চললে, কোথাও সংকট চললে আপনার হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ হয়। বিগত বছরগুলোতে আমরা বুয়েটের ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির নামে ক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলোই প্রত্যক্ষ করেছি। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদের মাঝে সূচনা ঘটেছে আধিপত্য, দাপট, র্যাগিং, শিক্ষকদের অপমান, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নিপীড়ন ও খুনোখুনিতে মেতে ওঠার মত ঘটনার। ঘটেছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও।
খোলা চিঠিতে বলা হয়, ‘ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় দিবস সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে বুয়েটের প্রাঙ্গণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করা হচ্ছে। আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জাতীয় মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মনে-প্রাণে ধারণ করি।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কিছু ব্যক্তি বা সংবাদ মাধ্যমের তৎপরতায় ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের ক্যাম্পাসকে জাতীয় চেতনার বিরোধী মতাদর্শের স্থান হিসেবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিষয়টিতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের ব্যাপারে যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। তাই, দেশের যে কোন স্থানের মত আমাদের ক্যাম্পাসকে আমরা অবশ্যই যে কোন ধরনের সন্ত্রাস, মৌলবাদ বা নিষিদ্ধ গোষ্ঠী থেকে নিরাপদ রাখতে সর্বদা তৎপর। আমরা আপনাকে নির্দ্বিধায় বলতে চাই, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে কোন মুহূর্তে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যে কোন কার্যকলাপ ক্যাম্পাসে দেখলে শিগগিরই তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব ও প্রশাসনকে অবহিত করব। এমনকি ভবিষ্যতে যদি ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেটার বিরুদ্ধেও আমাদের দৃঢ় অবস্থান থাকবে। বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতির বাইরে রাখুন, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও। কারণ, সুবিচারের জন্যই আইনের সৃষ্টি। আমাদের অনুরোধ, আপনি দয়া করে আমাদের ক্যাম্পাসে আসুন। ছাত্ররাজনীতিহীন বুয়েট গেল কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য যে আদর্শ ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে, সেটা আমরা আপনাকে দেখাতে চাই। আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় পৃথিবীর শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে দেব খুব শিগগিরই। আমাদের এ পথচলা আপনিই নির্বিঘ্ন রাখতে পারেন। সেই আশাতেই এ চিঠি। আমরা আপনার হাজারো সন্তান, আপনার সহযোগিতার প্রতীক্ষায় আছি।’