সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

শিক্ষা/চবির ঝরণা যেন মৃত্যুর জাল, আট বছরে ডুবে মরল পাঁচ শিক্ষার্থী

শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কলা ভবনের শেষ সীমানা ধরে কিছু দূর হেঁটে গেলে চোখে পড়বে নয়নাভিরাম পাহাড়ি এক ঝরণা। এ ঝরণার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ ও পানিতে গোসল করতে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা। তবে, পানিতে নেমে গেল আট বছরে প্রাণহানী ঘটেছে পাঁচ শিক্ষার্থীর। এদের মধ্যে দুইজন চবির শিক্ষার্থী ও বাকি তিনজন কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থী। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে শহর থেকে ঝরণা দেখতে এসে পানিতে নেমে মারা গেছেন জুনায়েদ হোসেন নামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

দুপুর পৌঁনে একটার দিকে ঝরণা দেখতে আসেন সিটির হাজী মোহাম্মদ মহসীন সরকারি স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্র। এ সময় তারা পানিতে গোসল করতে নামলে জুনায়েদ হোসেন পানিতে তলিয়ে যান। পরবর্তী সংবাদ দিলে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট তাকে মৃত উদ্ধার করে।

এর পূর্বে, ২০২২ সালের অক্টোবরে শহর থেকে ঝরণা দেখতে এসে গোসল করতে পানিতে নেমে মারা গেছেন জিসান নামের এসএসসি পরীক্ষার্থী। ২০২০ সালের ১৩ জুলাই পা পিছলে এ ঝরণায় পড়ে নিখোঁজ হয় সাইফুল ইসলাম মুন্না নামের কলেজ ছাত্র। পরবর্তী দুই ঘন্টা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে তাকেও মৃত উদ্ধার করে হাটহাজারী ফায়ার স্টেশনের ডুবুরি দল। ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে একই ঝরণায় পড়ে মারা যায় চবির মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের দুই শিক্ষার্থী পাভেল ও রিফাত।

এ দিকে, ঝরণা দেখতে গিয়ে বার বার মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তা বন্ধে কার্যকর তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি চবি কর্তৃপক্ষ। ২০১৫ সালে দুই শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর সাইনবোর্ড টানিয়ে ঝরণা এলাকাটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি, দুর্ঘটনা এড়াতে এলাকায় তারকাটা বেড়া দেয়া হয়েছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। সাইনবোর্ডের পাশে একজন নিরাপত্তা প্রহরীও দেয়া হয়। যদিও সরেজমিনে গিয়ে কোন প্রহরীকে দেখা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঝরণা আয়তনে খুব ছোট। তবুও, এতে পড়লে বা নামলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন ধরণের কথা প্রচলিত আছে। অনেকে মনে করেন, ঝরণায় অতিপ্রাকৃতিক কিছু আছে৷ ঝরণায় নামলে তাদের টেনে নিয়ে যায় গভীরে।

তবে, শিক্ষার্থীদের এ ধারণা উড়িয়ে দিয়েছেন চবির ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অলক পাল। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ধারণা সত্য না। ঝরণায় পড়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হতে পারে উপর থেকে লাফ দেয়ার কারণে মাথায় আঘাতজনিত রক্তক্ষরণ। মাথায় আঘাত লাগলে খুব দ্রুত মৃত্যু হয়।

একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঝরণার যে দিকটাতে পানি পড়ে সেখানে, একটা গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। আর ঝরণার পানিগুলো খুব ভারী। সাঁতার কাটার উপযোগী না। যারা খাদের কাছাকাছি নামেন, তারা পানির স্রোতে খাদের নিচে চলে যান। আর সেখানে পাথরে ও শেওলার সাথে আটকে যান। আমরা ডুবুরিদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে জেনেছি।