/ 
প্রিন্ট করুন
আবছার উদ্দিন অলি: ঈদ মোবারাক, ঈদ মোবারাক, ঈদ মোবারাক। শনিবার (২২ এপ্রিল) ঈদ-উল-ফিতর। করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছর ঈদে তেমন আনন্দ হয় নাই। এ সময়ে এবারের ঈদ একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন আমেজে উদযাপন হবে।
‘রমজানেরই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ…” কাজী নজরুলের হৃদয় ছোঁয়া গীতের মাঝে সাহিত্য শিল্প নির্ঝাস অনেক বেশী আবেগ ঘন হয়ে উঠে। বাঙালির ঈদ আনন্দ হতে কিছু বিষয় তুলে এনে পরিবেশন করার মানসে আপনাদের পূর্ণ আস্থা ও সহযোগিতা আমাদের পাথেয় হোক। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। বছর ঘুরে ফের এল ঈদ উল ফিতর। ঈদ মোবারক। রাসুলের (সা.) প্রবর্তিত ইসলাম এ রমজান মাসে জগতের সব মুসলিম জাতির জন্য এনে দিল অফুরনীয় আনন্দ, সিয়াম সাধনার প্রার্থীত পথের সন্ধান। যুগ সমস্যার প্রচন্ড ব্যতি ব্যস্ততার মাঝে একটি স্বর্গীয় আনন্দপূর্ণ সময় এ ঈদ। সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারে ভালবাসার নিবিড় বন্ধন অটুট করতে ঈদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই তো বলা হয়, ঈদের খুশির দিনে ফিরিয়ে দিয়ো না কাউকে।
সবার সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বজায় রেখে ঈদের প্রতিটি মুহুর্তকে আরো বেশী প্রাণবন্ত করে তুলতে শত শত বছরের বাঙালি ঐতিহ্যের ঈদ মহাসমারোহে গ্রীষ্মের এ দিনে আমাদের হৃদয়ে নতুন আশা জাগাবে। পুরনো দিনের গ্লানি আর অসুন্দরকে দূরে ঠেলে নতুন উজ্জীবিত দিনের প্রত্যাশায় আমরা ব্যাকুল। ঈদ নিয়ে আসে মানুষে মানুষে প্রীতি মিলন, ঈদের শুভবানী, শুভ সম্ভাষণ, আজকের এ দিনে ভরে উঠুক উৎসবে, আনন্দে সবার মন। ধনী দরিদ্র রাজা প্রজা নেই কোন ভেদাভেদ হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে নতুন আশা বুকে নিয়ে গড়ে তুলি সুখের জীবন। মুসলিম জনপদের সব ঈদগাহ আর মসজিদগুলোতে উম্মতে মুহাম্মদীর ঘরে ঘরে ঈদ উল ফিতরের পবিত্রতায় ভরা খুশি যেন বাঁধ ভেঙ্গে যায়।
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। প্রতি ৩৬৫ দিনে বছর গণনার মধ্যে ৩০ দিন সিয়াম সাধনা বা রোজা পালন, বিশ্ব মুসলিমের জন্য স্বয়ং আল্লাহ পাক ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য বলে, সর্বশ্রেষ্ঠ ও একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ঐশী গ্রন্থ কোরআন মজিদে ঘোষণা দিয়েছেন, ৩০ দিনের সিয়াম সাধনার শেষে পরম পাওয়ার লক্ষ্যে অপার খুশির ঈদ উল ফিতর ঈদের নামাজ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় সারা বিশ্বজুড়ে। মহামিলনের এ দিনে সুখ চায় প্রতিজন। হিংসা বিদ্বেষ বিভেদ ভুলে নতুন করে বেঁচে থাকা নতুন স্বপ্ন ভালবাসা ঈদের নানা আয়োজন।
ধনী-গরীব নিরীহ নির্বিশেষে যার যার সামর্থানুসারে এ ঈদ আনন্দকে স্বার্থক ও মনোময় করে তোলার জন্যে সর্বোত্তম আয়োজনে ব্যস্ত। ঈদ খুশির, ঈদ আনন্দের, ঈদ ভালবাসার, ঈদ পাওয়ার, ঈদ দেওয়ার সুন্দর মনে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করাই ঈদ। আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, অন্য কারো কথা শুনার আমাদের সময় নেই। ঈদ সেই সময়টা বের করে দেয়। আমরা আধুনিক হয়েছি, কিন্তু আমাদের নির্মল আনন্দ হারিয়ে গেছি। বেগ বেড়েছে কিন্তু আবেগ একেবারই নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এতটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছি যে, আনন্দ উৎসবগুলো পর্যন্ত প্রাণ খুলে উদ্যাপন করার কথা ভুলে গেছি। সুখ শান্তি আনন্দের বার্তা নিয়ে এল মহামিলনের ঈদ। অন্তত পক্ষে বছরের এ একটা দিনে আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে এক হওয়ার জন্য সবাই ঈদের জামাতে নামাজ পড়তে যায়।
ঈদের দিনের মত হোক আমাদের প্রতিটি দিন। প্রিয় মানুষটির জন্য হৃদয় ছোঁয়া ভালবাসা নতুন করে পাওয়ার স্বপ্ন দেখায়। হাসি-খুশিতে ভরে উঠুক সবার জীবন। ঈদে ভাললাগার অনুভূতিগুলোতে সহজেই নিবেদন করা যায় আপন জনের কাছে। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। অন্য দিকে, ঈদ উল ফিতরের মূল উৎসব সে তো আল্লাহর স্বনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় তার প্রিয় বান্দাদের প্রতি নেয়ামত প্রদান। এ যেন সেই পূণ্যপ্রেমে উদ্ভাসিত ইসলামী তৌহীদ। বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় ও আজ এ পবিত্র ঈদ আনন্দের মুহুর্তে স্রষ্টার প্রতি পরম কৃতজ্ঞতায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার খুশিতে আপ্লুত। সাম্যের দিন মৈত্রির দিন আজ শুধু আনন্দের দিন। ঈদ আনন্দের বাস্তবতা এমনি যে, কেউ দিয়ে খুশি, কেউ পেয়ে খুশি আবার কেউ দোয়া নেয়ার জন্য আকুল মনে বসে থাকেন।
সুখ, শান্তি সমৃদ্ধি বয়ে আনুক সবার জীবনে। ৩০ রোজার পর শাওয়ালের আকাশে উঁকি দিয়েছে কাঙ্খিত ঈদের চাঁদ। এসেছে খুশির বার্তা নিয়ে ঈদ। ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক। একটু সচেতন হয়ে সড়ক দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করবো। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন- এ প্রত্যাশায়। সবাইকে ফের ঈদের শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।
লেখক: গীতিকার, সাংবাদিক, চট্টগ্রাম
