শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

সেপ্টেম্বরে সড়কে মৃত্যু ৪২৬ জনের, বেশি দুর্ঘটনা রাতে

সোমবার, অক্টোবর ৭, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: চলতি বছরের গেল সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ৩৯২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২৬ জন নিহত ও ৮১৩ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৬১ নারী ও ৫৩ শিশু রয়েছে; বাকিরা পুরুষ। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে রাতে।

সোমবার (৭ অক্টোবর) সকালে সংবাদ মাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। সেপ্টেম্বরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৯২টি, এর মধ্যে নিহত ৪২৬ জন ও আহত ৮১৩ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬১ জন ও শিশু ৫৩ জন। ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৭৯ জন, যা মোট নিহতের ৪২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় ৯৭ পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৪ জন, অর্থাৎ ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ সময়ে আটটি নৌ-দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত, চারজন আহত ও দুইজন নিখোঁজ রয়েছেন। ১৭টি রেল ট্রাক দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও নয়জন আহত হয়েছেন।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র: দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৭৯ জন (৪২ শতাংশ), বাসের যাত্রী ২৫ জন (পাঁচ দশমিক ৮৬ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ২২ জন (পাঁচ দশমিক ১৬ শতাংশ), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস আরোহী ২৪ জন (পাঁচ দশমিক ৬৩ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ৬৩ জন (১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু) ছয়জন (এক দশমিক ৪০ শতাংশ) ও বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী দশজন (দুই দশমিক ৩৪ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন: রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, ‘দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬২টি (৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৪টি (৩৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৪৭টি (১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৪টি (আট দশমিক ৬৭ শতাংশ) শহরের সড়কে ও পাঁচটি (এক দশমিক ২৭ শতাংশ) অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন: দুর্ঘটনাগুলোর ৮২টি (২০ দশমিক ৯১ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬৯টি (৪৩ দশমিক ১১ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯৪টি (২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দেয়া, ৪১টি (দশ দশমিক ৪৫ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা ও ছয়টি (এক দশমিক ৫৩ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন: দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক, তেলবাহী লরি ও রোড রোলার ২৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পাজেরো ছয় শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-মাহিন্দ্র-হ্যালোবাইক) দুই দশমিক ৮৪ শতাংশ, বাইসাইকেল-রিকশা-রিকশাভ্যান দুই দশমিক শুন্য পাঁচ শতাংশ ও অজ্ঞাত যানবাহন দুই দশমিক ৫৩ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা: দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৬৩২টি। এরমধ্যে বাস ৯৮টি, ট্রাক ১০৬টি, কাভার্ডভ্যান ১৮টি, পিকআপ ২১টি, ট্রাক্টর ১১টি, ট্রলি চারটি, লরি দশটি, ড্রাম ট্রাক সাতটি, তেলবাহী লরি দুইটি, রোড রোলার একটি, মাইক্রোবাস ১৬টি, প্রাইভেটকার ১৫টি, অ্যাম্বুলেন্স পাঁচটি, পাজেরো দুইটি, মোটরসাইকেল ১৭৩টি, থ্রি-হুইলার ৯৬টি (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ১৮টি (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-মাহিন্দ্র-হ্যালোবাইক), বাইসাইকেল-রিকশা-রিকশাভ্যান ১৩টি ও অজ্ঞাত যানবাহন ১৬টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ: সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে পাঁচ দশমিক দশ শতাংশ, সকালে ২৬ শতাংশ, দুপুরে ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, বিকালে ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ, সন্ধ্যায় ছয় দশমিক ৬৩ শতাংশ ও রাতে ২৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।

দুর্ঘটনার বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান: দুর্ঘটনার বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, ‘ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, প্রাণহানি ৩০ দশমিক শুন্য চার শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা দশ দশমকি ৯৬ শতাংশ, প্রাণহানি ১২ দশমকি ২০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ, প্রাণহানি ১৯ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে যথাক্রমে ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ ও ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা তিন দশমিক ৮২ শতাংশ, প্রাণহানি তিন দশমিক ৭৫ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা চার দশমকি ৮৪ শতাংশ, প্রাণহানি চার দশমিক ৬৯ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা দশ দশমিক ৪৫ শতাংশ, প্রাণহানি নয় দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ছয় দশমিক ১২ শতাংশ ও প্রাণহানি ঘটেছে ছয় দশমিক ৩৩ শতাংশ।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১২৪টি দুর্ঘটনায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ১৫টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসাবে চট্টগ্রাম জেলায় ৩১টি দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম শরীয়তপুর, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ ও জামালপুর জেলায়। এ চারটি জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি।

আর রাজধানী ঢাকায় ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন।