শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শিরোনাম

সড়ক নিরাপত্তা আইন ও নিরাপদ ড্রাইভিং

বুধবার, অক্টোবর ২৬, ২০২২

প্রিন্ট করুন
মো. গনি মিয়া বাবুল

মো. গনি মিয়া বাবুল: সড়ক দুর্ঘটনারোধে নিরাপদ ড্রাইভিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হচ্ছে। নতুন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব সড়কে নানা ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। প্রতিনিয়ত সড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। যানবাহনের তুলনায় দেশে সড়কের পরিমাণ যথেষ্ট না হওয়ায় যানজটে প্রচুর সময় নষ্ট হয় ও গাড়ি দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ হতাহত হয়।

সড়ক দুর্ঘটনার একটি অন্যতম কারণ ড্রাইভাররা অনেক সময়ই নিরাপদ ড্রাইভিং না করে দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য যেতে চায়। নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য অনেক ধরণের সচেতনতা দরকার। গাড়ি চালানোর সময় ব্রেক লাইট ও টার্ন লাইট একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এ লাইট দেখে পেছনের গাড়ির ড্রাইভার বুঝতে পারে, সামনের ড্রাইভার তার গতি কমাতে যাচ্ছে, গাড়ি কোন দিকে যাবে কিংবা লেন পরিবর্তন করবে কিনা। গাড়ির সামনের হেড লাইট অন্ধকার রাস্তা আলোকিত করে, এ লাইট ব্যবহারের একটা সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে, বিপরীত থেকে গাড়ি আসতে থাকলে তীব্র আলোতে যেন তার চোখ ধাঁধিয়ে না যায় সে জন্য কখনোই হাই বিম অন করতে হয় না। একজন ড্রাইভার যখন গাড়ি চালায়, তখন শুধু সামনে নয়, পেছনে ও পাশে কোন যানবাহন আছে, সেটি জানতে হয়। সে জন্য ড্রাইভারের সামনে রিয়ার ভিউ মিরর ও দুই পাশে সাইডভিউ মিরর থাকে। ছোট আয়নাতে যেন অনেকটুকু জায়গা দেখা যায়, সেজন্য এ আয়নাগুলো হয় অবতল। একজন দক্ষ ড্রাইভার যখন গাড়ি চালায়, সে শুধু সামনের যানবাহন নয়, পাশে ও পেছনের যানবাহন নিয়েও সব সময় সজাগ থাকে ।

সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে, চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালানো ইত্যাদি। এ ছাড়া চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালায়। ফলে এক সময় নিজের অজান্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। তাই চালকদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। কোনভাবেই অসুস্থ বা ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না। সব মানুষেরই পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম প্রয়োজন। অন্য দিকে, সড়ক দুর্ঘটনার আরো একটি অন্যতম কারণ চালকদের ওভারটেকিং প্রবণতা। সাধারণত রাস্তায় ধীরগতির গাড়িগুলোকে ওভারটেকিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। এ সময় হর্ন বাজিয়ে সামনের গাড়িকে সংকেত দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময় সংকেত না দিয়ে একজন আরেকজনকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে, যার ফলে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি বের হতে না পেরে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হল ত্রুটিপূর্ণ সড়কব্যবস্থা। মহাসড়কগুলোয় বাঁক থাকার কারণে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে না পেয়ে অনেক চালক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। রাস্তার পাশে হাট-বাজার স্থাপন ও ওভারব্রিজ না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

আমরা সড়কে আর মৃত্যু দেখতে চাই না। এ জন্য সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। অনিয়মকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। দেশের সড়ক-মহাসড়কে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে পারলে দুর্ঘটনার হার যেমন কমবে, তেমনি দেশে আহত ও পঙ্গু মানুষের সংখ্যা কমে আসবে। সড়ক দুর্ঘটনার মত অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সকলের সদিচ্ছা।

সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে সরকার সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণয়ন ও গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের থেকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এ আইন ২০১৯ এর ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু আইনটি পুরোপুরি এখনো কার্যকর করা সম্ভব হয় নি। এ আইন পাস হওয়ার চার বছর পূর্ণ হলেও তা বাস্তবায়নে বিধিমালা তৈরি হয় নি। ফলে এ আইনের বাস্তবায়ন ও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সম্ভব হচ্ছে না। তাই, সড়ক পরিবহন বিধিমালার দ্রুত প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন করা জরুরী।

মহাসড়কে যত দুর্ঘটনা ঘটে, তার ৮০ শতাংশ ঘটে অতিরিক্ত গতির কারণে। মহাসড়কে একই মানের গাড়ি, কাজেই একটি গাড়ির আরেকটি ওভারটেক করার প্রয়োজন নেই বললেই চলে। অথচ আমরা দেখতে পাই, পেছনের গাড়ি সামনের গাড়িটিকে ওভারটেক না করা পর্যন্ত যেন স্বস্তি পায় না। আমাদের দেশের চালকদের এটা একটা ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করা প্রয়োজন।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শেখ হাসিনা ২০১৮ এর ২৫ জুন ছয়টি নির্দেশনা ও পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আরো ১৭টি নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজ পর্যন্ত এসব নির্দেশনার কার্যকর বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয় নি। এ নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর ছয়টি নির্দেশনা হচ্ছে, গাড়ির চালক ও তার সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, লংড্রাইভের সময় বিকল্প চালক রাখা, যাতে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কোন চালককে এক টানা দূরপাল্লায় গাড়ি চালাতে না হয়। নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার তৈরি করা। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা। সড়কে যাতে সবাই সিগন্যাল মেনে চলে, তা নিশ্চিত করা। পথচারী পারাপারে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধার বিষয়টি নিশ্চিত করা।

লেখক: শিক্ষক, সমাজ সেবক ও সংগঠক, যুগ্ম মহাসচিব, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)।