শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

১১ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি; মৃত বেড়ে ৫২; পানিবন্দী দশ লাখ ৭২ হাজার পরিবার

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২৯, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: সিলেট জেলাসহ দেশের ১১ জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী রেজা।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

চলমান বন্যায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে কেএম আলী রেজা বলেন, ‘দেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ, ছয়জন নারী ও সাত শিশু রয়েছে।

তিনি জানান, এ ৫২ জনের মধ্যে কুমিল্লায় ১৪, ফেনীতে ১৭, চট্টগ্রামে ছয়, খাগড়াছড়িতে এক, নোয়াখালীতে আট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক, লক্ষ্মীপুরে এক, কক্সবাজারে তিন ও মৌলভীবাজারে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে, মৌলভীবাজারে যে দুই ব্যক্তি নিখোঁজ ছিলেন, তাদের মধ্যে একজনের লাশ পাওয়া গেছে; আরো একজন নিখোঁজ রয়েছে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সানজিদা ইয়াসমিন মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানান, পানিতে ডুবে, বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে, সাপের কামড়ে, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে এরা মারা গেছে। মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই পানিতে ডুবে মারা গেছে।

কেএম আলী রেজা জানান, আক্রান্ত ১১ জেলার ৬৮ উপজেলার প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৮৯২টি। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দেয়ার জন্য মোট তিন হাজার ৪০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় মোট পাঁচ লাখ দুই হাজার ৫০১ ব্যক্তি ও ৩৬ হাজার ৪৪৮ গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

আলী রেজা জানান, ১১ জেলায় মোট দশ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৪ লাখ ৮০ হাজার ৪৬৩ জন। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য মোট ৫৯৫টি মেডিকেল টিম সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে চার কোটি ৫২ লাখ টাকা। বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে।’

তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কর্তৃক সংগৃহীত মোট এক লাখ চার হাজার ১০০ প্যাকেট শুকনা খাদ্য, কাপড় ও পানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (ডিডিএম) মাধ্যমে বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ডিডিএম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব।

বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে মোবাইল ও টেলিফোন যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি, স্থানীয় ক্লিনিক, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন।’

এছাড়াও, বন্যা পরবর্তী পানি বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে বলেও জানান আলী রেজা।