বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

২০২৪ সালে ভিসা ছাড়াই যেসব দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন বাংলাদেশিরা

সোমবার, জানুয়ারী ১৫, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: ভিসা ইন্টারভিউয়ের তারিখ পাওয়া থেকে শুরু করে সঠিক কাগজপত্র সাথে নিয়ে দূতাবাসে ইন্টারভিউ পর্যন্ত যাওয়া রীতিমত খাঁড়া পাহাড় বেড়ে চূড়ায় উঠার মত। ভিসা পাওয়ার এই ধকল সামলাতে যেয়ে মাঝপথে অনেকেই দেশের বাইরে ভ্রমণের ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলেন। অন্য দিকে, এসব ঝামেলা এক নিমেষেই উধাও হয়ে যায়, যখন সেই ভিসা করার কোন বাধ্যবাধকতা থাকে না।

আজকের নিবন্ধে জানা যাবে, সেই সব দেশগুলোর বিষয়ে, যেগুলোতে ঢুকার জন্য পূর্ব থেকে কোন রূপ ভিসা বিড়ম্বনা নিতে হবে না বাংলাদেশি নাগরিকদের। প্রতি বছরের মত এবারো পৃথিবীব্যাপী নানা দেশের পাসপোর্টের র‍্যাংকিং করেছে হেনলি পাসপোর্ট সূচক।

চলুন জেনে নিই, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী নাগরিকরা কোন কোন দেশগুলো ভিসা ছাড়া এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসায় যেতে পারবেন।

২০২৪ সালে বাংলাদেশিরা ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন যেসব দেশে: নানা দেশের অভিবাসন ব্যবস্থার সবচেয়ে আকর্ষণীয় কার্যনীতি হচ্ছে ভিসা-মুক্ত প্রবেশ। যেখানে বিদেশে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকের পূর্ব থেকে কোন ধরনের ভিসা-প্রাপ্তির প্রয়োজন পড়ে না। এই নিয়মে ভ্রমণরতদের ভিসা ফি দিয়ে কোন রূপ আনুষ্ঠানিক ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় না। ঘুরে বেড়ানো বা ব্যবসায়; যে কোন উদ্দেশ্যেই এই সুবিধা নেয়া যায়। তবে এভাবে গন্তব্যের দেশটিতে অবস্থান করার একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা থাকে, যা নানা দেশের জন্য নানা ধরনের হয়ে থাকে। হেনলি পাসপোর্ট সূচক অনুসারে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা ২২টি দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন। এই দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের নিজ দেশের ভেতরে থেকে ভিসা প্রাপ্তির জন্য অগ্রীম আবেদন করতে হবে না। এমনকি বিমানবন্দর পেরিয়ে সেই দেশগুলোতে ঢুকার সময়েও প্রয়োজন হবে না কোন ধরনের আনুষ্ঠানিক অনুমতির। দেশগুলো হল- বাহামাস, বার্বাডোস, ভুটান, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, কুক দ্বীপপুঞ্জ, ডমিনিকা, ফিজি, গ্রেনাডা, হাইতি, জ্যামাইকা, কিরিবাতি, লেসোথো, মাদাগাস্কার, মাইক্রোনেশিয়া, মন্টসেরাট, নিউয়ে, রুয়ান্ডা, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস, গাম্বিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, ভানুয়াতু।

এখানে মাদাগাস্কার, রুয়ান্ডা ও ভানুয়াতু গেল বছর পর্যন্ত বাংলাদেশিদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা চালু রেখেছিল। আর ওশেনিয়া মহাদেশের দ্বীপদেশ কিরিবাতি এ বছরে এই তালিকায় নতুন সংযোজন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ছয় মাসের মেয়াদে ফ্রি ভিসায় থাকা যাবে বার্বাডোস, ডোমিনিকা, জ্যামাইকা ও মন্টসেরাটে। ফিজিতে ভ্রমণ করার জন্য বরাদ্দ রয়েছে সর্বোচ্চ চার মাস। ৯০ দিনের মেয়াদে অবস্থান করা যাবে কিরিবাতি, সেন্ট কিটস ও নেভিস ও লেসোথোতে, যেখানে বাহামা, গ্রেনাডা ও হাইতির ক্ষেত্রে বলা আছে তিন মাসের কথা। কুক আইল্যান্ড্সে ফ্রি ভিসার মেয়াদ ৩১ দিন, গাম্বিয়া, মাইক্রোনেশিয়া, রুয়ান্ডা, ভানুয়াতু ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড্সে ৩০ দিন এবং সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন্সে এক মাস। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে থাকার সুযোগ আছে ৩০ থেকে ৯০ দিন। আর মাদাগাস্কারে অবস্থানের সময়সীমা সবচেয়ে কম; মাত্র ১৫ দিন।

এই অভিবাসন নীতিতে ভ্রমণকারীকে গন্তব্যের দেশে ঢুকার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ভিসা দেয়া হয়। এই ভিসা প্রদানের জায়গাটি হতে পারে সমুদ্র বন্দর, স্থল চেকপয়েন্ট অথবা বিমানবন্দর। এই প্রবেশাধিকার প্রাপ্তির জন্য তাদেরকে যাত্রা শুরুর আগে নিজেদের দেশে থাকা অবস্থায় কোন আবেদন করতে হয় না।

কোন কোন দেশে ঢুকার সময় এই অন-অ্যারাইভাল ভিসার জন্য ফি দিতে হয়। হেনলি পাসপোর্ট সূচক অনুসারে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল নিয়ে ১৮টি দেশে ঢুকতে পারবে। আর এই জন্য ভিসাপ্রাপ্তির সময় তাদেরকে কোন ভিসা ফি পরিশোধ করতে হবে না। তাছাড়া, এভাবে ভিসা গ্রহণ প্রক্রিয়াতে কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না।

এবার দেখে নেয়া যাক বিনামূল্যে অন-অ্যারাইভাল ভিসা সরবরাহকারী দেশগুলো- বলিভিয়া, বুরুন্ডি, কম্বোডিয়া, কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জ, কমোরো দ্বীপপুঞ্জ, জিবুতি, গিনি-বিসাউ, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, মোজাম্বিক, নেপাল, সামোয়া, সেশেল্স, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, তিমুর-লেস্তে, টোগো, টুভালু। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় তথা ৯০ দিন ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে গিনি-বিসাউ, নেপাল এবং বলিভিয়ায়। সামোয়া ও সেশেল্সে থাকা যাবে ৬০ দিন। কমোরো আইল্যান্ড্সে অবস্থানের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসার মেয়াদ ৪৫ দিন। জিবুতি ও মৌরিতানিয়ায় থাকা যাবে ৩১ দিন। মালদ্বীপ, কেপ ভার্দে, সোমালিয়া, মোজাম্বিক, সিয়েরা লিওন, তিমুর-লেস্তে এবং কম্বোডিয়া বেড়ানোর জন্য পাওয়া যাবে ৩০ দিন, যেখানে বুরুন্ডি এবং টুভালুর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে এক মাসের কথা।আফ্রিকার দেশ ‘টোগো’তে অবস্থানের জন্য পাওয়া যাবে মাত্র ১৫ দিন।

২০২৪ সালে যেসব দেশে যেতে বাংলাদেশিদের ইটিএ প্রয়োজন হবে: ইটিএ এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন, যেটি মূলত ইলেকট্রনিকভাবে তথা অনলাইনে একজন ভ্রমণকারীর পাসপোর্টের সাথে সরাসরি সংযুক্ত থাকে। এক কথায়, এটিও একটি ভিসা ফ্রি প্রবেশাধিকার। ডিজিটাল অনুমতিটি দেশের ভেতরে থেকে ঘরে বসেই অনলাইনে নিবন্ধন করার মাধ্যমে নিয়ে নেয়া যায়। এমনকি এর জন্য আবেদনকারীকে সশরীরে নিজ দেশের অভিবাসন সেন্টারে উপস্থিত হওয়ার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। যেই দেশে ইটিএ কার্যকর আছে, সেই দেশের অভিবাসন বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেয়ে সহজেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। ২০২৪-এ দুটি দেশে ঢুকার জন্য বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইটিএ প্রয়োজন হবে। যথা শ্রীলঙ্কা ও কেনিয়া। আগে শুধুমাত্র শ্রীলঙ্কা থাকলেও এ বছরই ইটিএ সেবা নিয়ে নতুন সংযোজন হল কেনিয়া। এখন থেকে এই ডিজিটাল ছাড়পত্রের মাধ্যমে সব বিদেশি নাগরিক ৯০ দিনের জন্য কেনিয়াতে ঢুকতে পারবে। আর শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে এই অনুমতির সময়সীমা প্রাথমিকভাবে শ্রীলঙ্কায় ঢুকার তারিখ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত। এই সিঙ্গেল এন্ট্রির পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার ডাবল এন্ট্রির জন্যও ইটিএ রয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকরা ইটিএ ইস্যু করার তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে দুই বার শ্রীলঙ্কায় ঢুকতে পারবেন। অনুমোদন এক বার হয়ে যাওয়ার পর ভিসাপ্রাপ্ত ব্যক্তি শ্রীলঙ্কায় ঢুকার সময় যে কোন চেকপয়েন্ট অনায়াসেই অতিক্রম করতে পারবেন।

শেষ কথা: পর্যটন কিংবা ব্যবসায় উভয় উদ্দেশ্যকে ঘিরে লাখ লাখ মানুষের থাকে হাজারও পরিকল্পনা। কিন্তু এর সবকিছুই গুড়েবালি করে দেয় সীমানা পেরনোর নিয়মনীতি। সেখানে এই ভিসামুক্ত ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশিদের জন্য এক বিরাট নিষ্কৃতি। এ দিক থেকে ২০২৪ সাল বাংলাদেশিদের জন্য সৌভাগ্যের বছরও বটে। হেনলি পাসপোর্ট সূচক মতে ভিসা ছাড়া, অন-অ্যারাইভাল এবং ইটিএ সব মিলে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা মোট ৪২টি দেশ ভ্রমণ করতে পারবে। তাই, সময় এসেছে পাসপোর্ট দ্রুত রিনিউ করে নেয়ার। কেননা এই সুযোগ লুফে নিতে হলে পাসপোর্টটি অবশ্যই নূন্যতম ছয় মাস মেয়াদী হতে হবে।